সন্তান পেতে তান্ত্রিকের পরামর্শে দুই শিশুকে হত্যা!

প্রতীকী ছবি

সন্তান পেতে তান্ত্রিকের পরামর্শে দুই শিশুকে হত্যা!

অনলাইন ডেস্ক

পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় সন্তান লাভের আশায় সাত বছরের শিশুকে যৌন নির্যাতনের পর খুন করা হয়েছে। পরে ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। আর এ ঘটনায় পুলিশি ব্যর্থতা ও দোষীর উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে উত্তাল দক্ষিণ কলকাতা।

পুলিশ জনতার ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশেও ১০ বছরের এক শিশুকে বলি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

তিলজলা থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোববার (২৬ মার্চ) সকাল আটটার দিকে দক্ষিণ কলকাতার তিলজলার ওই সাত বছরের নাবালিকা ফ্ল্যাট থেকে বাইরে ময়লা ফেলতে যায়। তারপর আর তাকে দেখা যায়নি।

মেয়ে ফিরছে না দেখে পরিবারের সদস্যরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।

পুলিশ প্রথমে সিসিটিভি চেক করে। সিসিটিভিতে দেখা যায়, শিশুটি ময়লা ফেলে ফের আবাসনেই ঢোকে। তখন পুলিশ সেই আবাসনের ফ্ল্যাটগুলিতে তল্লাশি চালাতে শুরু করে। রোববার গভীর রাতে ফ্ল্যাটেরই অন্য আবাসিক বিহারের সমস্তিপুরের বাসিন্দা অলোক কুমারের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালাতেই বস্তার ভিতর থেকে উদ্ধার হয় নাবালিকার গলাকাটা, রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত দেহ। পুলিশ জানায়, পুলিশকর্মীরা যখন অলোকের ফ্ল্যাটে যান, তখন দেখেন বস্তা বন্দী মৃতদেহকে পাশে রেখে রান্না করছিলেন অলোক।

আরও পড়ুন : জিপিএস দিয়ে হোটেলে পরকীয়া প্রেমিকসহ স্ত্রীকে ধরলেন স্বামী

তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত অলোক কুমারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে বিস্ফোরক তথ্য। জানা যায়, বিহারের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে ২০১৪ সালে কলকাতায় আসেন অলোক। একটি বেসরকারি গ্যাস কোম্পানিতে চাকরি নেন। তার স্ত্রীয়ের তিনবার গর্ভপাত হয়েছে। তাই সন্তান লাভের আশায় বিহারের এক তান্ত্রিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। তান্ত্রিক বলেছিলেন, নাবালিকা বলি দিতে হবে। তান্ত্রিকের পরামর্শ মতো নিজে সন্তান পেতে এই চরম পদক্ষেপ নেয় অলোক।  

পুলিশ জানায়, শিশুকে স্ক্রু ড্রাইভার এবং হাতুড়ি জাতীয় কিছু দিয়ে শরীরে একাধিক আঘাত ও শ্বাসরোধ করে পরে গলাকেটে খুন করা হয়েছে। শরীরে সূচ ফোটানোর একাধিক ক্ষতচিহ্নও রয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত শিশুটিকে ধর্ষণ করার কথাও জানিয়েছে। তবে এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে নাবালিকার ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে পুলিশ। খুনের পাশাপাশি পকসো আইনের ৬ নম্বর ধারাতেও মামলা রুজু হয়েছে গ্রেফতার অলোক কুমারের বিরুদ্ধে। মেয়েটির শরীরের মাথা, কানসহ একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। একইসঙ্গে স্ট্র্যাঙ্গুলেশন মার্কও (শ্বাসরোধের চিহ্ন) মিলেছে শরীরে।

আরও পড়ুন : চাকরি গেল এএসপির

এদিকে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই রণক্ষেত্রে  রূপ নিয়েছে তিলজলা এলাকা। বন্ডেল গেটে রেল অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। অভিযোগ, ট্রেন লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে তারা। এর জেরে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। চরম ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা। দীর্ঘক্ষণ অবরোধ চলে। অবরোধ হয় তিলজলা থানার সামনেও। অবরোধ-বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠে পরিস্থিতি।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাদানে গ্যাস ছুড়ে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পাল্টা পুলিশের গাড়িসহ একাধিক মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। আগুন নেভাতে গেলে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইঞ্জিনেও আগুন লাগিয়ে দেয় জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নামানো হয় র‌্যাফ ও বিশাল পুলিশ বাহিনী। অবরোধ তুলে স্বাভাবিক করা হয় ট্রেন চলাচল। বর্তমানে থমথমে অবস্থা বন্ডেল গেট এবং পিকনিক গার্ডেনের বিস্তীর্ণ এলাকায়।  

পুলিশ জানিয়েছে মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পরও কেন ভাঙচুর-অবরোধ ও বিশৃঙ্খলা করা হলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভাঙচুর-অগ্নি সংযোগের ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ যদি সঠিক সময় পদক্ষেপ নিতো তাহলে ওই শিশুর মৃত্যু হতো না।

একই দিনে ভারতের উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচেও উঠেছে নরবলির অভিযোগ। অভিযোগ, ১০ বছরের এক শিশুকে নরবলি দিয়েছে তার আত্মীয়রা। পুলিশের দাবি, নিহত বালকের আত্মীয় অনুপের আড়াই বছর বয়সী ছেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। তার সুস্থতার আশায় তান্ত্রিকের পরামর্শ মতো ওই বালকের চার আত্মীয় শিশুটিকে বলি দেয়।

পুলিশ সুপার প্রশান্ত বর্মা জানিয়েছেন, পারসা গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ বর্মার ছেলে বিবেককে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে সেদিন রাতেই তার গলাকাটা দেহ উদ্ধার হয় গ্রামের ক্ষেতে৷ এ ঘটনায় তদন্তে নেমে নিহত শিশুর তিন আত্মীয়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
news24bd.tv/আলী