নিকট-অতীতে মুসলিম বিশ্বের যেসব নারী কোরআনের সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, শায়খা তানাজুর মুহাম্মদ মোস্তফা নাজুলি (রহ.) তাঁদের একজন। তিনি মিসরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নারী হাফেজ ও কারি। প্রায় ৭০ বছর তিনি কোরআনের পাঠদান করেন। দেশ-বিদেশের অসংখ্য শিক্ষার্থী তার কাছ থেকে কোরআনের পাঠ গ্রহণ করে।
শায়খা তানাজুর (রহ.) ১৯২৪ সালে মিসরের গারবিয়া প্রদেশের নাসিরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই দুর্ঘটনাক্রমে লাঠির আঘাতে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারান। তবে দৃষ্টিহীনতা তাঁর জন্য প্রতিবন্ধক হতে পারেনি, বরং আল্লাহ তাঁকে চোখের আলোর প্রতিদানে কোরআনের আলো দান করেছেন। কোরআনের আলোয় তাঁর অন্তরকে আলোকিত করেছেন।
শায়খা তানাজুর নিজের সম্পর্কে বলেন, আমি শায়খ আবদুল লতিফ আবু সালিহের কাছে কোরআনের হিফজ শুরু করি। তবে তা ছিল তাজবিদ ছাড়া। এরপর আমি শায়খ মুহাম্মদ আবু হালাওয়ার কাছে তাজবিদ শিখি। তাঁর কাছেই সুরা ইউনুস পর্যন্ত সাত কেরাতের পাঠগ্রহণ করি। তাঁর কাছে আমার শিক্ষাকাল ছিল ১৫ বছর। অতঃপর আমি শায়খ আবদুল জাওয়াদের কাছে শাতেবি পদ্ধতিতে সাত কেরাত শিখি। তিনি আমাকে সুরা ফাতিহা থেকে সুরা তাওবা পর্যন্ত শেখান।
শায়খা তানাজুর (রহ.) ছিলেন অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী একজন নারী। কোরআন ছিল যার জীবনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। কোরআনের প্রতিটি শব্দ-বাক্য ছিল তাঁর নখদর্পণে। সম্মানিতা এই নারী তাঁর ঘরকে কোরআনপ্রেমীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। ফলে তা কোরআনের পাঠশালায় পরিণত হয়েছিল। কোরআনপ্রেমীদের ভিড়ই ছিল তার জীর্ণশীর্ণ ঘরের সৌন্দর্য।
শায়খা তানাজুর (রহ.) ৯ জানুয়ারি ২০২১ সালে ইন্তেকাল করেন। তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় না। মিসরের বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ শাহাভি তাঁর ছেলে। শায়খা তানাজুর (রহ.) ইন্তেকাল করার পর শায়খুল আজহার ড. আহমদ তাইয়িব এক টুইট বার্তায় লেখেন, ‘মুসলিম জাতি একজন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হারাল। আল্লাহ তাঁর দৃষ্টিকে কোরআনের আলোয় আলোকিত করেছিলেন। তিনি কোরআনের জ্ঞান বিস্তারে সর্বোত্তম চেষ্টা করেছেন এবং উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি শায়খা তানাজুর নাজুলি। বয়সে তিনি প্রবীণত কারিয়া ও কোরআনের হাফেজা। হে আল্লাহ, কোরআনকে আপনি তাঁর জন্য সুপারিশকারী করুন। হে পরম করুণাময়, তাঁকে আপনি আপনার রহমত ও ক্ষমার চাদরে আবৃত করুন। ’
news24bd.tv/আইএএম