মৌখিক অভিযোগে র‍্যাব কাউকে তুলে নিতে পারে কি, প্রশ্ন হাইকোর্টের
মৌখিক অভিযোগে র‍্যাব কাউকে তুলে নিতে পারে কি, প্রশ্ন হাইকোর্টের

সংগৃহীত ছবি

মৌখিক অভিযোগে র‍্যাব কাউকে তুলে নিতে পারে কি, প্রশ্ন হাইকোর্টের

মামলা ছাড়া শুধু কারও মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাব কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে এবং স্বীকারোক্তি নিতে পারে কি না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। নওগাঁয় র‍্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন নামের এক নারীর মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিতে এ প্রশ্ন তোলেন উচ্চ আদালত।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টে বেঞ্চে রিটের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে মামলার বাদী রাজশাহী স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক মো. এনামুল হকের দেওয়া এজাহার এবং র‍্যাবের বক্তব্য অনুযায়ী, অফিশিয়াল কাজে নওগাঁ আসার পথে নওগাঁ বাসস্ট্যান্ডে র‍্যাবের টহল দলের কাছে অভিযোগ দেন এনামুল হক।

এরপর র‍্যাব তাঁকে নিয়ে অভিযানে যায় এবং নওগাঁর মুক্তির মোড় এলাকা থেকে আটক করে। এরপর সেই এলাকাতেই এনামুল হকসহ আরও কয়েকজন ব্যক্তির উপস্থিতিতে সুলতানা জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে জেসমিন অসুস্থ হয়ে পড়েন।

হাইকোর্ট জানতে চেয়েছেন, সুলতানা জেসমিনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ এবং হাসপাতালে নেওয়ার আগে পর্যন্ত সবকিছু আইনানুগ হয়েছে কি না।

রাষ্ট্রপক্ষকে এসব প্রশ্ন সংক্রান্ত আইন ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। আর এ বিষয়ে আগামী ৫ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়।  

আরও পড়ুন...‘র‌্যাব হেফাজতে মারা যাওয়া’ জেসমিনের ছেলে সৈকত নিখোঁজ

নওগাঁয় র‍্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক রিটটি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। র‍্যাব গঠন করা হয়েছিল দাগি চোর-ডাকাত, মাদক–চোরাকারবারিদের ধরতে। যে আইনে মামলা হয়েছে তার তদন্ত করার ক্ষমতা র‍্যাবের নেই। তারা এটি বেআইনি কাজ করেছে। র‍্যাব এখানে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। তাঁকে (জেসমিন) ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোর্টে নেওয়া হয়নি। পরে রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে মামলা করা হয়েছে। ’

আইনজীবী মনোজ কুমার আরও বলেন, ‘কোনো অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতেই র‍্যাব এ ধরনের বেআইনি ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা আজ অসহায়। র‍্যাব যাকে ইচ্ছা তাকে তুলে নিয়ে উধাও করে দিচ্ছে। তাকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আটক করা হয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক সুলতানা জেসমিনের মাথায় আঘাত থাকার কথা বলেছেন, যা পত্রিকায় এসেছে। নারীর মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। শুধু এটি না, র‍্যাব যে অবৈধ কাজ করছে তা খুঁজে বের করার জন্যও। এই মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের দায়িত্ব ছিল এফআইআর করার। তাঁরা করেননি। ’

আরও পড়ুন...‘র‌্যাব হেফাজতে মৃত্যু’: মামলার আগেই আটক করা হয় জেসমিনকে

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন নওগাঁ সদর হাসপাতাল এবং রাজশাহী মেডিকেলের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘সুলতানা জেসমিনের উচ্চ রক্তচাপ ছিল, মৃত্যু হয়েছে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে। এক ব্যক্তির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ মার্চ ১১টা ৫০ মিনিটে আটক করা হয়। পরে জনসাধারণের সামনে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‍্যাব। আর ওই নারীর মোবাইল ফোন থেকে অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য ও নথি উদ্ধার করা হয়। ’

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘আটকের কিছুক্ষণ পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে দুপুর সোয়া ১টায় প্রথমে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ওই দিনই রাত ৯টা ২০ মিনিটে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তিতে রক্তক্ষরণ জনিত সমস্যার কথা উল্লেখ রয়েছে। তাই এটি সম্পূর্ণ ভুল যে, ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ওই নারীকে রাখা হয়েছে। ’

এ সময় আদালত বলেন, ‘কোনো অনুমানের ভিত্তিতে আমরা ঘটনাটি বিবেচনা করব না। তিনি তো র‍্যাবের হেফাজতে মারা গেছেন। ’ অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘না, তিনি হাসপাতালে মারা গেছেন। ’ আদালত বলেন, ‘তাঁর মাথায় আঘাতের কথা বলা হচ্ছে। নিয়ম হলো আটকের পর পুলিশের কাছে সোপর্দ করতে হবে। সেটা দেখা যাচ্ছে না। পুরো দেশবাসীর প্রশ্ন, তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছিল কি না। এই বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আমরা দেখতে চাই। ’ তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন (আগামী) সোম–মঙ্গলবার আসতে পারে। ’

আদালত বলেন, ‘কেউ যেন ভিকটিমাইজ না হয়। কোনো নাগরিক যত জঘন্য অপরাধই করুক না কেন, তার জন্য আইন আছে, বিচার আছে এবং অপরাধীরও বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। এই ঘটনায় মামলা হবে কি হবে না সেটা রাষ্ট্র এবং ওই নারীর স্বজনদের বিষয়। আমাদের জানা দরকার তাঁর মৃত্যুর কারণ। র‍্যাবের জুরিসডিকশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। র‍্যাব গঠন-নিয়ন্ত্রণ, তাদের এখতিয়ার সম্পর্কিত আইন দেখতে চাই। দেখতে চাই মামলা ছাড়া কারও অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাব কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার এবং স্বীকারোক্তি নিতে পারে কি না। ’

news24bd.tv/আইএএম