রামপালে ২২ ঘণ্টা আটকে নির্যাতন: প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

রামপালে ২২ ঘণ্টা আটকে নির্যাতন: প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটের রামপালে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চুরির অপবাদ দিয়ে শেখ আব্দুল্লাহ (২৫) নামে এক যুবককে ২২ ঘণ্টা আটকে রেখে অমানুসিক নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসান আলীকে বুধবার রাত দুটার দিকে ব্রি-চাকশ্রী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে রামপাল থানা-পুলিশ।

এর আগে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাতে শেখ হাসান আলীসহ চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত নামা ৩ থেকে চারজনকে আসামি করে নির্যাতনের শিকার শেখ আব্দুল্লাহার মা খালেদা বেগম বাদী হয়ে রামপাল থানায় মামলা দায়ের করেন।

রামপাল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সামছুদ্দিন গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানান যায়, গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে ইজিবাইকযোগে বাগেরহাট আসার পথে রামপাল উপজেলার চাকশ্রি নামক স্থান থেকে জোরপূর্বক শেখ আব্দুল্লাহকে তুলে নিয়ে যায় ব্রি চাকশ্রী এলাকার শেখ হাসান আলী ও ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর ভাগ্নে আবু সালেহসহ কয়েকজন। চুরির অপবাদ দিয়ে ২২ ঘণ্টা নির্যাতনের পরে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ফাকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে নির্যাতনের বিষয়টি কাউকে না জানানোর শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয় আব্দুল্লাকে।

নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ বাগেরহাট সদর উপজেলার মুনিগঞ্জ এলাকার শেখ গফুরের ছেলে। সে বর্তমানে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, যুবক আব্দুল্লাহ‘র শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা-জখম রয়েছে। মারাত্মক ইনজুরি রয়েছে কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যাবে।

নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ বলেন, পূর্ব পরিচিত হওয়ায় ব্রি চাকশ্রী এলাকার শেখ হাসান আলীকে আমি ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা ধার প্রদান করি। কিন্তু সে আমাকে টাকা না দিয়ে ঘোরাতে থাকে। পরে টাকা বাবাদ শেখ হাসান আলী তার মালিকানাধীন ইজিবাইকটি আমার কাছে বিক্রি করে দেয়। প্রতিদিন দুশ টাকা ভাড়ায় সে ইজিবাইকটি চালাতে থাকে।

কিন্তু কয়েকদিন টাকা দেওয়ার পরে আর টাকা দেয় না। যার কারণে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমি ইজিবাইক নিয়ে বিক্রি করে দেই। পরে এই বিষয় নিয়ে আর কথা হয়নি।

কিন্তু হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে ইজিবাইকযোগে রামপাল থেকে বাগেরহাট আসার পথে চাকশ্রী নামক স্থান থেকে শেখ হাসান আলী ও চেয়ারম্যানের ভাগ্নে আবু সালেহসহ কয়েকজন মিলে জোরপূর্বক আমাকে ধরে নিয়ে যায়। ব্রি চাকশ্রী এলাকায় শেখ হাসান আলী বাড়িতে নিয়ে আমাকে নির্যাতন করে। সন্ধ্যার দিকে আমার বন্ধু প্রাইভেট কার চালক আল আমিনকে চাকশ্রী আসার জন্য আমাকে দিয়ে ফোন করায়। পরে আল আমিন গেলে তাকেও বেধে রাখে হাসান ও আবু সালেহ‘রা। সারারাত আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করেছে আবুল সালেহ ও হাসানসহ কয়েকজন। বেধরকের মারপিটের সাথে শরীরে সিগারের ছেঁকা ও আঙুলগুলের মধ্যে খেজুরের কাঁটা ঢুকিয়েছে। চোখ উঠিয়ে ফেলার কথা বলেছে। সারারাত এভাবে অত্যাচারের পরে দুপুরে বাইনতলা ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর কাছে নিয়ে ফাকা স্ট্যাম্পে আমার এবং আমার মায়ের স্বাক্ষর রেখে এবং ৩ লাখ টাকার দেওয়ার স্বীকারোক্তি রেখে ছেড়ে দেয়। আমার উপর হামলাকারীদের কঠিন বিচার চাই।

বাইনতলা ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহ বলেছেন, তার সামনে কোনো নির্যাতন হয়নি। আবু সালেহ আমার ভাগ্নে নয়।

ভাইরাল হওয়া ২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ঘরের পিছনে আম গাছের সাথে বেঁধে এক যুবককে মারধর করছে কয়েকজন যুবক। পরে মাটিতে শোয়ায়ে এক পা পাড়ায়ে ধরে আরেক পা উপড়ে উঠিয়ে গালিগালাজ করা হচ্ছে। এক পর্যায়ে দুই পায়ের তলায় মোটা লাঠি দিয়ে পেটাতে দেখা যায় আবু সালেকে। ওই যুবক তখন মাগো মাগো বলে চিৎকার করছিলেন।

news24bd.tv/তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক