‌‘কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনের সংস্কার প্রয়োজন’

‌‘কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনের সংস্কার প্রয়োজন’

অনলাইন ডেস্ক

প্রচলিত শিশু আইনে কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জটিল। বর্তমান আইন অনুযায়ী কিশোর অপরাধীদের সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হলেও তারা কতখানি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে সেটি প্রশ্ন সাপেক্ষ। কিশোর অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হলে আইনের সংস্কার প্রয়োজন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে কিশোর অপরাধীরা আশকারা পেয়ে থাকে।

রাজনৈতিক সদিচ্ছাই কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই। জুনিয়র সিনিয়র বিরোধ, হিরোইজম, প্রযুক্তির অপব্যবহার, পারিবারিক বন্ধনের শিথিলতা, ত্রুটিপূর্ণ সামাজিকীকরণসহ আকাশ সংস্কৃতি কিশোর অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। ঢাকা শহরে ৮০ টি কিশোর গ্যাং রয়েছে, যাদের সদস্য সংখ্যা ৩৩৯ জন।
২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রাজধানীতে কিশোর অপরাধ সংশ্লিষ্ট ৪৬টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে একটি মামলার বিচার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে হলে অভিভাবকসহ সমাজের সকল অংশীজনকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

আজ (৮ এপ্রিল ২০২৩) বাংলাদেশ চলচিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির কারণ নিয়ে আয়োজিত এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক এসব কথা বলেন। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, তথ্য প্রযুক্তি অপব্যবহার সমাজে অপরাধ প্রবণতা বাড়িয়ে তুলছে। বিতর্কিত অ্যাপস টিকটকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তারকা বানিয়ে আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে নিন্মআয়ের পরিবারের মেয়েদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফাঁদে ফেলছে এসব অপরাধী। এমন কি সুকৌশলে এসব কিশোরীকে ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হচ্ছে। বিশেষ করে টিকটক, লাইকি, ইমো, ফেসবুক, স্ট্রিমকার, মাইস্পেস, হাইফাইভ, বাদু ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার কিশোর-তরুণদের বিপথগামী করে তুলছে। তৈরি হচ্ছে টিকটক হৃদয়, অপু, সজীব, নয়ন বন্ড, সুজন ফাইটারের মতো অপরাধীরা।

তিনি আরও বলেন, কিশোর তরুণদের জন্য বর্তমানে নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ওয়েব সিরিজ। কিছু কিছু অনলাইন প্লাটফর্মে তুমুল অশ্লীলতা, নোংরা সংলাপ, উদ্ভট গল্প দিয়ে ওয়েব সিরিজ প্রদর্শিত হচ্ছে। নির্লজ্জতায় ভরা এসব ওয়েব সিরিজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে সহজেই কিশোর-কিশোরীরা আসক্ত করে ফেলছে। হিন্দির পাশাপাশি বাংলা নোংরা এসব ওয়েব সিরিজ নেট দুনিয়ায় সমালোচনার ঝড় তুলেছে। যৌনতা, ঘন ঘন বেডসিন, খোলামেলা পোশাক, স্নানের দৃশ্য সম্বলিত এসব ওয়েব সিরিজ নীল ছবির চাইতে কম নয়।

এর মধ্যে বাংলাদেশি নির্মাতাদের তৈরি ইউটিউবে মুক্তি পাওয়া কয়েকটি ওয়েব সিরিজ ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তুলেছে। অনুষ্ঠানে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান ১০ দফা সুপারিশ করেন।

সুপারিশগুলো হলো- ১) কিশোর অপরাধ রোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রকাশ করা ২) সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পরিবারের ভূমিকা বাড়ানোর লক্ষ্যে কৌশল নির্ধারণ। ৩) আগামী জাতীয় নির্বাচনের নির্বাচনী ইশতেহারে কিশোরদের রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণা বা ভোট সংশ্লিষ্ট কোনো কাজে সম্পৃক্ত না করার অঙ্গীকার প্রদান করা ৪) সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও অপরাধ বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে জাতীয় পর্যায়ে কমিটির মাধ্যমে কাউন্সেলিং গাইডলাইন প্রস্তুত করে তা বাস্তবায়ন করা ৫) সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা এলাকার ওয়ার্ড পর্যায়ে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ সিটিজেন মনিটরিং কমিটি গঠন করা ৬) শিশু-কিশোরদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে আরও বেশি সম্পৃক্ত করে এলাকাভিত্তিক পাঠাগার, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, খেলাধূলাসহ বিনোদনের ব্যবস্থা করা ৭) পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করে সামাজিক জাগরণ তৈরি করা ৮) রাত ১০ টার পর থেকে সকাল পর্যন্ত অপ্রয়োজনীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বন্ধ রাখা ৯) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারাবাহিক অ্যাকশন এর মাধ্যমে কিশোর গ্যাংদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা ১০) কিশোর অপরাধ সংশোধন কেন্দ্রগুলো আধুনিকায়ন করে সেখানে কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করা। ‌

‘তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণেই কিশোর অপরাধ বাড়ছে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে সামসুল হক খান স্কুলকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয় নওগাঁর মান্দা থানা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মোরছালীন বাবলা, সাংবাদিক অনিমেষ কর, সাংবাদিক দিপু সিকদার প্রমূখ। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।