বখাটেদের হাতে বাবাকে মার খেতে দেখে মেয়ের আত্মহত্যা!

সংগৃহীত ছবি

বখাটেদের হাতে বাবাকে মার খেতে দেখে মেয়ের আত্মহত্যা!

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

উত্ত্যক্তকারীদের হাতে বাবাকে মার খেতে দেখে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল শামসুন নাহার চাদনী (১২) নামে সপ্তম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী। শুক্রবার দিবাগত রাতে খুলনার হরিণটানা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নিজ বাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় শনিবার লবণচরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন নিহত স্কুলছাত্রীর বাবা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট রবিউল ইসলাম।

জানা যায়, বখাটেরা বাড়িতে ঢুকে স্কুলছাত্রী চাঁদনীর বাবা মো. রবিউল ইসলামকে মারধর করে।

বাবাকে হেনস্তার এই দৃশ্য দেখে শোবার ঘরের ফ্যানের সঙ্গে শাড়ী পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে চাঁদনী।  

খুলনা নগরের সরকারি করনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল শামসুন নাহার চাঁদনী (১২)। তার বাবা মো. রবিউল ইসলাম একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল চাঁদনী।

গত কয়েক মাস ধরে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে চাঁদনীকে উত্ত্যক্ত করছিল হরিণটানা মধ্যপাড়া এলাকার শাহ আলমের ছেলে শুভ। সে লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। চাঁদনীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাবার হুমকি দিয়েছিল সে।

এ ঘটনা মাকে জানিয়েছিল চাঁদনী। এরপর চাঁদনীর বাবা রবিউল শুভর বাড়িতে গিয়ে তার বাবাকে ঘটনাটি জানান এবং তার মেয়েকে উত্ত্যক্ত না করার অনুরোধ করেন।
সবশেষ শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে বখাটে শুভ কয়েকজনকে নিয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে রবিউলকে মারধর শুরু করে। এ ঘটনা দেখে চাঁদনী ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দেয় এবং গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করে। চাঁদনীকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখে তার মা চিৎকার করে উঠলে শুভ ও তার সঙ্গীরা পালিয়ে যায়।

নিহতের বাবা রবিউল ইসলাম বলেন, শুভ নামের একটি বখাটে ছেলে চাঁদনীকে উৎপাত করতো। এই ঘটনা জানার পর গত শনিবার আমি শুভ'র মা-বাবাকে জানাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শুভসহ কয়েকজন আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে অপমান অপদস্থ করে। চাঁদনী এসব দেখে ওর মায়ের শাড়ি দিয়ে আড়ার সঙ্গে আত্মহত্যা করে।  
এদিকে ঘটনার পর থেকে বখাটে শুভ ও তার পরিবারের সবাই পলাতক।

চাঁদনীর প্রতিবেশী এমদাদুল হক ও ওমর আলী জানান, গত এক সপ্তাহ আগে উত্ত্যক্তের বিষয়টি জানার পর চাদনীর বাবা স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে শুভদের বাসায় যান। তিনি শুভর বাবার কাছে চাদনীকে উত্ত্যক্ত না করার জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু শুভ শুক্রবার রাত ৮টারদিকে লোকজন নিয়ে চাঁদনীদের বাসায় গিয়ে তার বাবাকে হুমকি দেন ও মেয়ের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ সময় তাঁদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। বিষয়টি নিয়ে চাঁদনীর বাবা অপমান বোধ করেন এবং মেয়েকে বকাঝকা করেন। এ ঘটনার পর রাত ১০টার দিকে চাঁদনী ঘরের আড়ার সঙ্গে শাড়ী বেধে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

হরিণটানা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে। কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

তবে হত্যার ঘটনায় থানায় একটি মামলা হলেও এখনো কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।  

সম্পর্কিত খবর