এক অবিশ্বাস্য জয় এনে দিলেন মোস্তাফিজ

জয় উপহার দিলেন মোস্তাফিজ

এক অবিশ্বাস্য জয় এনে দিলেন মোস্তাফিজ

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

এ কি করে দেখাল মোস্তাফিজ! এক অবিশ্বাস্য ম্যাচকে এমন ভাবে জিতিয়ে দিলেন সে! শেষ ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান যা বোলিং উপহার দিলেন! মাত্র ৮ রান প্রয়োজন আফগানদের। সেখানে মোস্তাফিজের বোলিং তাপে মাত্র ৪ রানের বেশি করতে পারেনি আফগানরা। পড়েছে একটি উইকেটও। অবশেষে ৩ রানের অবিশ্বাস্য, শ্বাসরূদ্ধকর এ জয়ে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলার আশা টিকে রইলো বাংলাদেশের।

পেন্ডুলামের মত দুলছিল ম্যাচটা। বলের সঙ্গে রানের ব্যবধান ধীরে ধীরে কমিয়ে আনছিল আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা। প্রথমে মোহাম্মদ শাহজাদ, পরে আসগর আফগান এবং হাশমতউল্লাহ শহিদি। সর্বশেষ আফগান ব্যাটিংয়ের হাল ধরে অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি।

বাংলাদেশের বোলারদের একের পর চেষ্টা ব্যর্থ করে দিচ্ছিলেন তারা। মাশরাফি বিন মর্তুজা মাঝে দু’বার সাফল্যের দেখা পেলেও অন্যরা হচ্ছেন ব্যর্থ।

৪৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সাকিব আল হাসানকেও বিশাল এক ছক্কা হাঁকালেন মোহাম্মদ নবি। ম্যাচটা একেবারে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছিলেন এই ছক্কা মেরে। কারণ তখন ১০ বলে প্রয়োজন হয় মাত্র ১২ রান। এমন মুহূর্তে সাকিবকে আরেকটি ছক্কা মারতে গিয়ে লং অফে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ধরা পড়েন নবি।

শেষ ওভারে প্রয়োজন ৮ রান। বোলার মোস্তাফিজুর রহমান। ব্য্যাটসম্যান রশিদ খান। প্রথম বলেই নিলেন দুই রান। ৫ বলে প্রয়োজন ৬ রান। দ্বিতীয় বলেই মোস্তাফিজের বলটিতে খুব সহজে ক্যাচ তুলে দিলেন রশিদ খান। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ ধরলেন মোস্তাফিজ।

ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামেন গুলবাদিন নাইব। ৪ বলে প্রয়োজন ৬ রান। তৃতীয় বলে পায়ে লাগিয়ে একটি রান নেন। সিনওয়ারি। ক্যাচের আবেদন করলেও আম্পায়ার তাতে সাড়া দেননি। চতুর্থ বলে কোনো রান দিলেন না। পঞ্চম বলে একটি লেগ বাই রান নিলেন গুলবাদিন নাইব। শেষ বলে প্রয়োজন ৪ রান। ব্যাটসম্যান সামিউল্লাহ সেনওয়ারি। শেষ বলে মোস্তাফিজ আর রানই দিলেন না। শিনওয়ারি ব্যাটে বলই লাগাতে পারলেন না। বরং, তার হাত থেকে ব্যাটই ছুটে চলে যায়। ৩ রানের অবিশ্বাস্য এক জয় পেয়ে যায় বাংলাদেশ।

মোহাম্মদ শাহজাদ এবং হাশমতউল্লাহ শহদির জুটিটা একটা বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের জন্য। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বোলিংয়ে এনে ব্রেক থ্রু দিতে পেরেছিলেন মাশরাফি। রিয়াদ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন হাফ সেঞ্চুরি করা শাহজাদকে। এরপর আসগর আফগানকে নিয়ে আরও একটি ভালো জুটি গড়েন শহিদি।

৮৮ রানের জুটি গড়ে যখন এই দুই ব্যাটসম্যানও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল, তখনও ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মাশরাফি। তার বলেই শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন ৩৯ রানে থাকা আসগার আফগান। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সেই ক্যাচ ধরে বাংলাদেশকে খেলায় ধরে রাখেন।

অন্য প্রান্তে হাশমতউল্লাহ শহিদি কিন্তু সত্যিকারার্থেই বাংলাদেশের জন্য বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ৭১ রান করে তিনি ধীরে ধীরে বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচটা বের করে নিয়ে আসছিলেন। এমন সময় আবারও ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মাশরাফি। এবার তার বলে বোল্ড হয়ে গেলেন শহিদি।

২৫০ রানের চ্যালেঞ্জ। বোলাররা ভালো করতে না পারলে এই চ্যালেঞ্জটা ধরে রাখাও খুব কঠিন। যদিও এই উইকেটে ২৫০ রান জয়ের জন্য ভালোই যথেষ্ট। তবুও শুরুতে পরপর দুই উইকেট পড়ার পরও আফগান ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ এবং হাশমতউল্লাহ শহিদি ৬৩ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন।

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো মোহাম্মদ শাহজাদ হাফ সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচটা ধীরে ধীরে বের করে আনতে শুরু করে দিয়েছিলেন। মাশরাফি নিজে, নাজমুল ইসলাম অপু, মোস্তাফিজ, মেহেদী হাসান মিরাজ কিংবা সাকিব আল হাসান- কেউই পারছিলেন না শাহজাদকে একটু ফাঁদে ফেলতে।

শেষ পর্যন্ত মাশরাফি দ্বারস্থ হলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। অফ ব্রেক বোলার হলেও তিনি নিয়মিত নন। মাঝে-মধ্যে প্রয়োজন হলে অকেশনাল বোলার হিসেবে তাকে ব্যবহার করেন অধিনায়ক। এবারও মাশরাফি আস্থা রাখলেন তার ওপর। সেই আস্থার প্রতিদান তিনি দিলেন প্রথম ওভারেই, ভয়ঙ্কর শাহজাদকে ফিরিয়ে দিয়ে।

ওভারের ৪র্থ বলটি তিনি কিছুটা সুইং করিয়েছিলেন। শাহজাদ ব্যাকফুটে গিয়ে জায়গা তৈরি করে চেষ্টা করেন খেলার। কিন্তু মিস করলেন তিনি। বল গিয়ে আঘাত করলো সোজা উইকেটে। ৫৩ রান করে আউট হয়ে গেলেন মোহাম্মদ শাহজাদ। দলীয় রান তখন ৮৯।

এর আগে দুর্দান্ত এক ফিল্ডিং করে রহমত শাহকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। নাজমুল ইসলাম অপুর বলে খেলেছিলেন মোহাম্মদ শাহজাদ। নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে ছিলেন রহমত শাহ। রান নেয়ার জন্য দৌড় দেন তারা। সাকিব ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাত দিয়ে বল ফেরান। উল্টে অন্য হাত দিয়ে বলটি থ্রো করেন। সরাসরি হিটে রানআউট হয়ে গেলেন রহমত।

তার আগে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বল করতে এসেই প্রথম বলে উইকেটের দেখা পান মোস্তাফিজুর রহমান। তার বলে ইহসানউল্লাহ ক্যাচ তুলে দেন নাজমুল ইসলাম অপুর হাতে। ১১ বলে ৮ রান করে ফিরে যান তিনি।

(নিউজটোয়েন্টিফোর/ কামরুল)

সম্পর্কিত খবর