নিয়েছিলেন প্রশিক্ষণ, নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতেন রাজাকার মতিন

সংগৃহীত ছবি

নিয়েছিলেন প্রশিক্ষণ, নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতেন রাজাকার মতিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যুদ্ধাপরাধী ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. আব্দুল মতিনকে (৭০) কে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর টিকাটুলিতে র‍্যাব-৩ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার অপরাধ প্রমাণ হলে ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।

তবে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল মতিন দীর্ঘদিন ধরেই পলাতক জীবন-যাপন করে আসছিলেন।  

তিনি বলেন, রোববার রাতে সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী মো. আব্দুল মতিন মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানার পাখিয়ালা গ্রামের মৃত মিরজান আলীর ছেলে।  

আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ রয়েছে।

আসামি আব্দুল মতিন এবং একই মামলার আরেক আসামি তারই আপন ভাই আব্দুল আজিজ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের বারপুঞ্জিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে তারা পালিয়ে বড়লেখায় এসে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন।

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রেপ্তার আব্দুল মতিন বড়লেখা থানা জামায়াতে ইসলামী এবং ১৯৭১ সালে গঠিত ইসলামী ছাত্র সংঘের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। আব্দুল মতিনসহ রাজাকার বাহিনীর অন্য সদস্যরা মিলে মৌলভীবাজার এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাতেন।

তিনি জানান, ১৯৭১ সালের ১৯ মে আব্দুল মতিনসহ এই মামলার অপর দুই আসামি আব্দুল আজিজ, আব্দুল মান্নান এবং তাদের সহযোগীরা মিলে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতা হরেন্দ্রলাল দাস ওরফে হরিদাস, মতিলাল দাস, নগেন্দ্র কুমার দাস এবং শ্রীনিবাস দাসকে অপহরণ করে তিনদিন ধরে বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে অমানবিক নির্যাতন করার পরে জুড়ি বাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে যান। সেই বধ্যভূমিতে হরেন্দ্রলাল দাস ওরফে হরিদাস, মতিলাল দাস এবং নগেন্দ্র কুমার দাস এই তিনজনকে হত্যা করা হয়। অপহরণ হওয়া শ্রীনিবাস দাস নির্যাতিত অবস্থায় কোনোক্রমে পালিয়ে কয়েকদিন পর বাড়ি ফিরে যান।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থা ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর গ্রেপ্তার আব্দুল মতিন, আব্দুল মান্নান ওরফে মনাই এবং আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর তদন্ত শেষ হয় এবং তদন্ত চলাকালে একই সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

২০১৬ সালের ১ মার্চ তারিখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুল ও আব্দুল মান্নান ওরফে মনাইকে গ্রেপ্তার করে। তারা বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। অপরদিকে আসামি আব্দুল মতিন তখন গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরপরই গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি পলাতক জীবনযাপন শুরু করেন। তিনি মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানার পাখিয়ালা গ্রামের নিজ বাড়ি ছেড়ে সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ থানা এলাকায় তার ভাগ্নের বাড়িতে আত্মগোপন করেন। সেখানে সে নিজেকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে পলাতক জীবন শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত মতিন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার ভাগ্নের বাড়িতে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে পালিয়ে আত্মগোপন ছিলেন। গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

news24bd.tv/FA