জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃতির অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি প্রশাসনিক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের ওপর আরও কঠোর হলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অধ্যাপক ইমতিয়াজ ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ধরনের একাডেমিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না।
গতকাল রোববার সিন্ডিকেটের এক নিয়মিত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাপক ইমতিয়াজ রচিত ‘হিস্টোরাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড: স্টেট ভার্সেস পারসন’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগের বিষয় উদ্ঘাটনের জন্য গঠিত কমিটির সুপারিশ সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করা হয়। সভা মনে করে, তাঁর গ্রন্থে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধু এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে পরিবেশিত কতিপয় তথ্য অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও ইতিহাসের বিকৃতি।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আজ সোমবার অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সিন্ডিকেটের কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমি জানি না। তাই এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না।
গত ২৯ মার্চ একটি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত কলামে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী অভিযোগ করেন, ২০০৯ সালে প্রকাশিত ইমতিয়াজের ‘হিস্টোরাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড: স্টেট ভার্সেস পারসন’ শীর্ষক বইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। এরপর বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়। ২ এপ্রিল ইমতিয়াজ আহমেদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ এবং একটি উচ্চক্ষমতার তদন্ত কমিটি গঠন করে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরীও সেখানে যোগ দেন।
এরপর ইমতিয়াজ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে ৩ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টির পরিচালক ফকরুল আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ৬ এপ্রিল উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। ৭ এপ্রিল এক বিবৃতিতে অভিযোগ তদন্ত করে অধ্যাপক ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা। এমন প্রেক্ষাপটে ১১ এপ্রিল ইমতিয়াজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক পদ থেকে এবং ১৩ এপ্রিল অফিস অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেন উপাচার্য।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে ২ এপ্রিল রাতে একটি বিবৃতি পাঠান ইমতিয়াজ আহমেদ। সেখানে তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের অভিযোগ ওঠায় তিনি আশ্চর্য হয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘যে বইটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সংঘটিত জেনোসাইডের বিচার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টার প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়ে রচিত, তাতে ১৯৭১ সালের জেনোসাইডকেই অস্বীকার কিংবা এর গুরুত্ব কমিয়ে দেখানো কীভাবে সম্ভব? প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের অভিযোগ ওঠায় আমি আশ্চর্য হয়েছি। আমি মনে করি, কোথাও বইয়ের কোনো কোনো অংশ বুঝতে ভুল হয়েছে কিংবা ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। ’
মুচলেকার শর্তে বিএনপিপন্থী শিক্ষককে ক্ষমা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকনেতা এ এস এম আমানুল্লাহর ফেসবুক পেজে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে একটি ‘মনগড়া ও ভিত্তিহীন’ পোস্টের বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন জিয়া রহমানের একটি প্রতিবেদন গতকালের সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করা হয়। পরে সভায় মুচলেকার শর্তে আমানুল্লাহর ক্ষমার আবেদন মঞ্জুর করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিন্ডিকেট সভা মনে করে, এ এস এম আমানুল্লাহর ফেসবুক পোস্ট পাঠ্যপুস্তক, সরকারের শিক্ষানীতি ও ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করার একটি অপপ্রয়াস। তিনি ইতিমধ্যে তাঁর কৃতকর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন৷ ভবিষ্যতে এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড ও আচরণ করবেন না—এই মর্মে লিখিত মুচলেকা দেওয়ার শর্তে তাঁর ক্ষমাপ্রার্থনার আবেদন সভায় মঞ্জুর করা হয়েছে।
news24bd.tv/আলী