ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত ১৫ মাসে প্রায় ৬৫০ কেজি বা সাড়ে ৫৫ হাজার ভরি স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ৩৩৪ কোটি টাকার বেশি। বেশির ভাগ স্বর্ণ মধ্যপ্রাচ্য থেকে আনা হয়েছে। বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তৎপরতায় এসব স্বর্ণসহ কিছু বাহক আটক হলেও হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত কয়েক বছরের স্বর্ণ জব্দের পরিসংখ্যান বলছে, নানা কৌশলে এই চোরাচালান চলছে।
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, বিমানের সিট, টয়লেট, ময়লার ঝুড়ি, লাগেজ বা গার্মেন্ট এক্সেসরিজের কার্টন, বাহকের শরীর, এমনকি অন্তর্বাসে করে আনা স্বর্ণর চালান ধরা পড়ছে শাহজালাল বিমানবন্দরে।
ঢাকা কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত এই ১৫ মাসে ৬৪৯.২০৬ কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়।
ঢাকা কাস্টম হাউসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, চোরাচালানের বেশির ভাগ এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। এসবের কিছু চালানে কাউকে আটক করা হয়নি। আবার কিছু চালানে যাত্রীর পাশাপাশি এয়ারলাইনসের কর্মী ও জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। আর্মড পুলিশ বলেছে, যেসব স্বর্ণ বিমানে আসে, অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো বিমানের ভেতর লুকিয়ে রাখা হয়। এসব স্বর্ণ বের করে নিয়ে আসার সুযোগ শুধু বিমান বা বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচকের নির্দিষ্ট কিছু লোকজন রয়েছে। বাইরের লোকজনের বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর জায়গায় যাওয়ার সুযোগ নেই। অর্থের প্রলোভনে পড়েই কিছু কর্মী এটা করছেন বলে মনে করছেন তাঁরা।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সূত্র বলেছে, দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শাহজালালে কিছুদিন পরপরই স্বর্ণসহ কাস্টম ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছে চোরাচালানকারীরা। যারা ধরা পড়ছে, তারা সবাই বাহক। এদের পেছনে রয়েছে দেশ ও বিদেশে কয়েক ধাপের সিন্ডিকেট। তারা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। তবে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো ও সরকারিভাবে শুল্ক দিয়ে স্বর্ণ আনার সুযোগ দেওয়ায় আমদানি বেড়েছে এবং চোরাচালান কিছু কমেছে বলে দাবি করছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টম হাউসের উপকমিশনার ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ করতে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি। আমাদের এখানে গ্রিন চ্যানেল থাকলেও পরিপূর্ণভাবে স্ক্যানিং করি। বিভিন্ন সময় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তল্লাশি করে স্বর্ণের চোরাচালান জব্দ করা হচ্ছে। ’
চট্টগ্রাম শাহ আমানত ও সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরেও নিয়মিত স্বর্ণ উদ্ধার করা হচ্ছে। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকা থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি প্রায় প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ উদ্ধার করছে। চলতি বছরের এপ্রিলে ৩৩ কেজির বেশি স্বর্ণ জব্দ করেছে বিজিবি।
বৈধপথে স্বর্ণ আমদানির নিয়ম: বিনা শুল্কে যাত্রীরা ১০০ গ্রাম বা সাড়ে আট ভরি পর্যন্ত স্বর্ণের গয়না আনতে পারেন। এই পরিমাণ পর্যন্ত আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টম তালিকাভুক্ত করে না।
এর অতিরিক্ত যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ বিধিমালা অনুযায়ী, একজন বিদেশফেরত যাত্রী ২৩৪ গ্রাম বা ২০ ভরি স্বর্ণের বার শুল্ক-কর পরিশোধ করে আনতে পারেন। প্রতি ভরিতে শুল্ক-কর দিতে হয় দুই হাজার টাকা। সাধারণত দুটি বারের ওজন প্রায় ২৩৪ গ্রাম।