‘ফায়ার সর্ভিস কর্মীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল হচ্ছে’

সংগৃহীত ছবি

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির ছায়া সংসদ

‘ফায়ার সর্ভিস কর্মীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল হচ্ছে’

অনলাইন ডেস্ক

বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিট, মশার কয়েল, সিগারেট ও চুলার আগুনসহ সচেতনতার অভাবে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি বাড়ছে। উৎসুক জনতার ভিড় ও পানির উৎসের অভাবের কারণে অগ্নিনির্বাপণ ব্যাহত হয়। ১৩ বছর আগের প্রস্তাবিত জাতীয় বিল্ডিং কোড পাশ হয়েছে গত বছর। যার সংস্কার বা আধুনিকায়ন প্রয়োজন।

বর্তমানে কার্যকর ২০০৩ সালের অগ্নি নিরাপত্তা আইনে বেশ কিছু দুর্বলতা রয়েছে। এ আইনে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে নোটিশ প্রদান করা ছাড়া ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের আর কোন এখতিয়ার নেই। বঙ্গবাজারে অগ্নিকান্ডের পর ফায়ার সার্ভিস ভবনে হামলার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এ হামলায় ১৪টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে যার প্রতিটির মুল্য ৮ কোটি টাকা।
এ ঘটনায় সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

নতুন ভবন নির্মাণে ২ শতাংশ অগ্নি নিরাপত্তার জন্য ব্যয় করলে অগ্নিঝুঁকি কমানো সম্ভব। অগ্নিনির্বাপণে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস বিশ্বমানের সরঞ্জাম ব্যবহার করছে। যে কোন অগ্নি দুর্ঘটনার সংবাদ প্রাপ্তির ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রেসপন্স করে। গত বছর পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ১৩ জন ফায়ার ফাইটার প্রাণ হারিয়েছেন। ঢাকার মিরপুরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা আগামী ছয় মাসের মধ্যে চালু হতে পারে।  

আজ বৃহস্পতিবার (৪ মে) বাংলাদেশ চলচিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতা নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংস্থা ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।  

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেরি চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘আমাদের অগ্নি দুর্ঘটনা নিয়ে আতঙ্ক আছে, কিন্তু সচেতনতা নেই। নেই তেমন কোনো সরকারি-বেসরকারি সঠিক উদ্যোগ। ঢাকা শহরের ৯৮ শতাংশ বিপনী বিতানে অগ্নি ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা নেই। কোন রকম নিয়ম নীতি না মেনেই গড়ে উঠেছে উপানুষ্ঠানিক মার্কেটগুলো। কিছু কিছু মার্কেটে লোক দেখানো ফায়ার এস্টিংগুইশার, পানি রিজার্ভ ট্যাংক, বালুর বালতি, রেসকিউ সিঁড়ি থাকলেও বড় কোন অগ্নি দুর্ঘটনা মোকাবেলায় তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়। ’

তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকা শহরে অপরিকল্পিতভাবে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন নেয়া হয়েছে। ছোটখাট কোন ভূমিকম্প অথবা অন্য যেকোন দুর্ঘটনায় মাটির নিচ দিয়ে যাওয়া অপরিকল্পিত এসব বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন এই শহরকে ভয়াবহ অগ্নিকূপে পরিণত করতে পারে। জনসংখ্যার ঘনত্ব, অপরিকল্পিত নগরায়ন, বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন নির্মাণ, অপ্রশস্ত সড়ক, ভবন মালিকদের উদাসীনতা, সচেতনতার অভাব, ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতার ঘাটতিসহ নানা কারণে দেশে আগুন লাগার ঝুঁকি কমানো যাচ্ছে না। তাই তাজরিন ফ্যাশন, নিমতলী, ছুরিহাট্টা, হাসেম ফুড, বিএম কন্টেইনার, বঙ্গবাজারের অগ্নিকান্ডের কথা মাথায় রেখে ভবন ব্যবহারকারী ও সরকারি সংস্থাগুলোকে আরো বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। ’

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ১০ দফা সুপারিশ প্রদান করেন। এগুলো হলো :

১. আগুন লাগা প্রতিরোধসহ যেকোন ধরণের দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসে, বিল্ডিং কোড বাস্তবায়নে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে  সশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়ে একটি রোড ম্যাপ তৈরি করা।
২. ২০১০ সালের প্রস্তাবিত বিল্ডিং কোড ১৩ বছর পর পাশ হয়েছে ২০২২ সালে। ইতোমধ্যে প্রযুক্তিগত আরো বেশ উৎকর্ষ ঘটেছে। তাই বর্তমান বিল্ডিং কোড সময় উপযোগী করে আধুনিকীকরণের পদক্ষেপ নেওয়া।
৩. বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলির বিরুদ্ধে শুধু নোটিশ নয়, আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা দেয়া।
৪. অগ্নি নির্বাপক সংস্থাগুলোর বিদ্যমান কাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি আধুনিক ফায়ার ইঞ্জিন, ওয়াটার হাইড্রেন্ট, উন্নত অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম সরবরাহ করা।
৫. রাজউক কর্তৃক ভবন ব্যবহারের সনদ না দেওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও টেলিফোন সংযোগ প্রদান না করা।
৬. অগ্নি নির্বাপন কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঝুঁকিভাতা আরো বাড়িয়ে ঝুঁকিভাতা নীতিমালা প্রণয়ন করা।
৭. পেশাগত দায়িত্ব পালনে ফায়ার সার্ভিসের যেসব কর্মী আহত অথবা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
৮. মিরপুরে ফায়ার সর্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের হাসপাতালের জন্য তৈরি হওয়া ভবন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা সুবিধা ও জনবল নিয়োগ করে দ্রুত চালু করা।
৯. ব্যবসায়ী সমিতি ও ভবনমালিক সমিতির সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে অগ্নি ঝুঁকি হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
১০. অগ্নি নিরাপত্তা ঝুঁকি নিরসন বিষয়ক তথ্যচিত্র গণমাধ্যম ও সোস্যাল মিডিয়াতে প্রচার করা।  

‌‘ভবন ব্যবহারকারীদের অসচেতনতাই অগ্নি দুর্ঘটনার প্রধান কারণ’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বিরোধী দল স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশেকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয় সরকারি দল প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মোরছালীন বাবলা, সাংবাদিক সবুজ ইউনুস ও সাংবাদিক ফারাবী হাফিজ। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।  

এই রকম আরও টপিক