প্রতারণার নতুন ফাঁদ, একজনের ফ্ল্যাট বিক্রি করেন আরেকজন

প্রতারক চক্রের ছয় সদস্য

প্রতারণার নতুন ফাঁদ, একজনের ফ্ল্যাট বিক্রি করেন আরেকজন

মাসুদা লাবনী 

সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থে এবং ব্যাংক থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে চান অনেকে। আর এই ফ্ল্যাট কেনাবেচার ক্ষেত্রে কখনো মালিক ও ক্রেতার মাঝে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য রয়েছে অসংখ্য মধ্যস্ততাকারী। কিন্তু ফ্ল্যাট ক্রেতারা হরহামেসায় মধ্যস্ততাকারী নামধারী কিছু প্রতারকের খপ্পরে পড়ছেন।

এমনি এক প্রতারক চক্র, তারা ফ্ল্যাটমালিকের কাছে অল্প কিছু টাকায় ফ্ল্যাটের বায়না করে।

যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তার কাছ থেকে কাগজপত্র নেয়। পরে জাল দলিল বানিয়ে অন্যকে মালিক সাজিয়ে সেই ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিচ্ছে এবং ওই একটি ফ্ল্যাট দেখিয়ে তিন-চারটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। কিন্তু ফ্ল্যাটের প্রকৃত মালিক এর কিছুই জানেন না।

মূল মালিকের পাসপোর্টে হালিমার ছবি বসিয়ে তৈরি করা হয়েছে জাল দলিল

এই চক্রের খপ্পরে পড়েছেন হাফিজুর রহমান।

রাজধানীর ভাটারা থানায় করা মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, মিরপুরের দারুস সালাম এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীনের মাধ্যমে সালমা কাশেম নামে একজন নারীর কাছ থেকে ভাটারায় ফ্ল্যাট কেনার জন্য টাকা দেন। গত বছর ৩০ নভেম্বর ফ্ল্যাটটি সালমা কাশেম দলিল করে দেন। পরে ফ্ল্যাটটি বুঝে নেওয়ার জন্য গেলে হাফিজুর জানতে পারেন সালমা কাশেম নামে যে নারী ফ্ল্যাট দলিল করে দিয়েছেন তিনি প্রকৃত মালিক নন। এরপর হাফিজুর টাকার জন্য চাপ দিলে জয়নাল তার সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে হাফিজুরকে বেদম মারধর করে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে এবং তার কোম্পানির সাদা চেকে স্বাক্ষর নিয়ে রাখেন।

এ ঘটনায় গত ৩০ এপ্রিল হাফিজুর আবার ডিবিতে অভিযোগ করেন। এর ভিত্তিতে ডিবির ওয়ারী বিভাগ গত ২ মে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জয়নালসহ ফ্ল্যাট প্রতারক চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এরপরই অনুসন্ধানে ডিবি জানতে পারে, জয়নালের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় গত বছর মেঘনা ব্যাংক ও চলতি বছর আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি প্রতারণার মামলা করেছে। পুলিশ বলছে, পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে শতাধিক ব্যক্তির সাথে প্রতারণা করেছেন তারা। হয়েছেন বিপুল সম্পত্তির মালিক।

ভুক্তভোগীকে নির্যাতন

হাফিজুর বলেন, ‘ফ্ল্যাট বিক্রির সময় চক্রটি প্রকৃত মালিক সালমা কাশেমের জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করে, তার পাসপোর্টের সব তথ্য ঠিক রেখে শুধু ছবি পরিবর্তন করে অন্য এক নারীকে মালিক সাজিয়ে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি করে দেয়। ’ তিনি আরও বলেন, ‘সঞ্চিত ৯০ লাখ টাকা এবং একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ করে ফ্ল্যাট কেনার টাকা দিয়েছিলেন।

শুধু হাফিজুর নয়, তাদের ফাঁদে পা দিয়ে নিঃশ্ব হয়েছেন অনেকে। বেশ কয়েক জনের সাথে কথা বলতে চাইলে ভয়ে মুখ খুলতে চান না তারা, করেন না মামলাও।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারি বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, মূলত ফ্ল্যাট বিক্রির নামে বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করে তারা। প্রতারিত হওয়ার পর টাকা ফেরত চাইলে ক্রেতাকে নির্যাতনসহ হত্যার হুমকিও দেয় চক্রটি।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, এভাবেই ফ্ল্যাট প্রতারক চক্রগুলো ফ্ল্যাটের ফাঁদ পেতে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যাংকও এ চক্রের ফাঁদে পা দিচ্ছে বলে জানায় পুলিশ।

news24bd.tv/আইএএম