সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে ইভিএম আতঙ্ক শুরু হয়েছে : জিএম কাদের

সংগৃহীত ছবি

সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে ইভিএম আতঙ্ক শুরু হয়েছে : জিএম কাদের

অনলাইন ডেস্ক

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, আমরা সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমরা দেখতে চাই এবং মানুষকে দেখাতে চাই, সরকার কী করছে - কী করতে চায়। প্রার্থীরা বলছেন, সিটি নির্বাচনে ইভিএম চাপিয়ে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে ইভিএম আতঙ্ক শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ কিন্তু বোকা নয়। ইভিএম নিয়ে বর্তমান সরকার কেরিকেচার করেছে। ইভিএমে কে কোথায় ভোট দিলো তার প্রমাণ থাকে না। কে কীভাবে ডিক্লেয়ার করে তার প্রমাণ থাকে না।

সাধারণ মানুষ মনে করে, ইভিএম দিয়ে সরকার যাকে খুশি বিজয়ী ঘোষণা করতে পারে। সাধারণ মানুষ বলেন, ভোট দিতে গেলে সরকারদলীয় লোকজন ভোট দিয়ে দেয়। আমরা ভোট দিলেও সরকারি দল আর না দিলেও সরকারি দলই পাশ করছে। সরকার, প্রশাসন ও নির্বাচন ব্যবস্থার সাথে জড়িত সবাই ইভিএম ব্যবহার করে সরকারের ইচ্ছেমত ফলাফল ঘোষণা করার ব্যবস্থা করছে।

সোমবার বিকালে জাপার বনানী কার্যালয়ে বিকল্প স্বেচ্ছাসেবক ধারা সভাপতি আবুল বাসার ও সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বাবুর নেতৃত্বে বিকল্পধারার শতাধিক নেতাকর্মী জাতীয় পার্টিতে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এসময় নবাগতদের স্বাগত জানিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

জিএম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। একটি দল খারাপ কিছু শুরু করলে পরবর্তীতে অন্য দল ক্ষমতায় এসে তা আরো বাড়িয়ে দেয়। দোষ-ত্রুটির দিক থেকে কেউ কারো চেয়ে কম না। এভাবে দুটি দল দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমন বাস্তবতায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপক্ষে একটি বিকল্প শক্তি হতেই বিকল্পধারা সৃষ্টি হয়েছিলো। কিন্তু তারা বিকল্প শক্তি হতে পারেনি। তাই যারা বিকল্প শক্তি হতে চেয়েছিলো তারা এখন জাতীয় পার্টিতে দলে দলে যোগ দিচ্ছেন। এতে প্রমাণ হয়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপক্ষে জাতীয় পার্টি একমাত্র বিকল্প শক্তি। জাতীয় পার্টিই পারবে এই দুটি দলের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে। আর, জাতীয় পার্টি ব্যর্থ হলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশকে ধ্বংস করে দেবে।

জিএম কাদের বলেন, ৯১ সালের পর থেকে সংবিধানের চারটি মূল নীতির একটিও বজায় রাখছে না কেউ। দেশের গণতন্ত্র ধংস করা হয়েছে। দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রের কথা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সরকার গঠন করা হবে। দেশে এটি সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। তাই কেউ আর জনগণের কথা চিন্তা করে কাজ করে না। বরং জনগণের কথা কীভাবে বন্ধ করা যায়, কীভাবে গণমাধ্যমে গণমানুষের দাবি প্রকাশ না হয় সেজন্য বিভিন্ন আইন করা হচ্ছে। যারা সংবিধানের দোহাই দেন তারা কেউই গণতন্ত্র বিশ্বাস করেন না।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন জাতীয় পার্টি বর্জন করেছিলো। কারণ ওই নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে দলীয় লোকজন বসিয়েছিলো বিএনপি। আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। একই দাবিতে আওয়ামী লীগও ওই নির্বাচন বর্জন করেছিলো। ৯৬ সালে শেখ হাসিনা বলেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চিরস্থায়ী করতে হবে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠলো আওয়ামী লীগসহ আমরা আবার নির্বাচন বর্জন করেছি। ওয়ান ইলেভেনের কারণে বিএনপির নির্বাচনের চেষ্টা শেষ হয়ে গিয়েছিল। এখন সেই বিএনপি বলছে, আমরা নির্বাচন ব্যবস্থা সরকারের আওতার বাইরে দেখতে চাই। নির্বাচন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে পারিনি এটা আমাদের ব্যর্থতা।

তিনি বলেন, দলীয়করণের মাধ্যমে দেশে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। ৯১ সালের পর থেকে টেন্ডারবাজী করে এক শ্রেণির লোক আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হয়ে গেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে। আওয়ামী লীগ একবার আর বিএনপি দুর্নীতিতে চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এরশাদ এর দেশ পরিচালনার সময় দেশ কখনোই দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়নি। বিএনপি দেশে বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড শুরু করেছে। আওয়ামী লীগসহ আমরা তার প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আরো বেড়েছে। এখন সারা পৃথিবীতে আমাদের দুর্নাম ছড়িয়ে পড়েছে।

‘উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে লুটপাটের উদ্দেশ্যে। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি, এটা এখন ওপেন সিক্রেট। যারা লুটপাট করেছে তারা বিদেশে টাকা পাচার করেছে, বাড়ি-ঘর বানিয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ কী খেয়ে থাকবে। আইএমএফ এর তথ্য মতে মুদ্রাস্থিতি আরো বাড়বে। আগামী দিনে আরো রিজার্ভ কমতে পারে। আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলোও টাকা পয়সা অপচয় করেনি,’যোগ করেন তিনি।

জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ৩২ বছরে দেশের মানুষের শান্তি হরণ করেছে। দুটি দলের কারণে এত দিনেও দেশের নির্বাচন পদ্ধতি নির্ধারণ হয়নি। আবার অওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি দলই প্রমাণ করেছে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। আনুপাতিক হারে নির্বাচন হলেই দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাত থেকে মুক্তি চায়।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও লালমনিরহাট জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক শেরীফা কাদের এমপির সভাপতিত্বে এবং নির্বাহী সদস্য ও লালমনিরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব জাহিদ হাসান এর পরিচালনায় যোগদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, বিকল্প স্বেচ্ছাসেবক ধারার সভাপতি আবুল বাশার, সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বাবু।

উপস্থিত ছিলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা একেএম মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, খান মোহাম্মদ ইসরাফিল খোকন, মাসরুর মওলা, ইঞ্জিনিয়ার মনির আহমেদ, মো. খলিলুর রহমান খলিল, মো. মাশরেকুল আজম রবি, ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আবুল খায়ের, দপ্তর সম্পাদক-২ এমএ রাজ্জাক খান, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, কেন্দ্রীয় খুররম ভূঁইয়া, হুমায়ুন কবির শাওন, নজরুল ইসলাম সর্দার, আলমগীর হোসেন, রেজাউল করিম, সোহেল রহমান, মাহমুদ হাসান আলাল প্রমুখ।

যোগদানকারীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রচার সম্পাদক আনোয়ার শাহাদৎ হোসেন সুজন, আইটি সম্পাদক রেফাজুল ইসলাম আদম, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদুর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য লাভলুর রশিদসহ বিভিন্ন জেলা ও থানার নেতৃবৃন্দ।

news24bd.tv/SHS