মাদক কারবারে বাঁধা দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধার ঘর পুড়িয়ে দিলো প্রতিপক্ষরা

সংগৃহীত ছবি

মাদক কারবারে বাঁধা দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধার ঘর পুড়িয়ে দিলো প্রতিপক্ষরা

মাদারীপুর প্রতিনিধি

মাদারীপুরে মাদক বিক্রিতে বাধা দেয়ায় শত্রুতার সৃষ্টি হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েক জনের সঙ্গে। সেই ঘটনার জেরে মুক্তিযোদ্ধার ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। রোববার রাত ২টার দিকে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের গৌদি গ্রামে আগুন দেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে। একই ঘটনার জেরে দুদিন আগে ইব্রাহিম সরদারের ঘরও পুড়িয়ে দেয় তারা।

এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত খলিল সরদার ও তার লোকজন গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানা যায়। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। আর অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের গৌদি গ্রামের দীর্ঘদিন থেকে মাদক ব্যবসা করে আসছে খলিল সরদার ও তার পরিবারের লোকজন।

এলাকার যুব সমাজের কথা চিন্তা করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাহার সরদার ও আশেপাশের কিছু লোক মাদক কারবারে বাধা দেয়। এ ঘটনার পর থেকে শত্রুতার সৃষ্টি হয় মুক্তিযোদ্ধা আজাহার সরদার ও খলিল সরদারের মধ্যে। তারই জেরে গত ৩০শে এপ্রিল খলিল সরদার, ইমন সরদার, বাদল সরদার, রোমান সরদার, ফয়সাল জমাদ্দারসহ তাদের লোকজন মুক্তিযোদ্ধা আজাহার সরদার ও ইব্রাহিম সরদারের ঘর ভাঙচুর করে ও কয়েকজনকে মেরে আহত করে।

ওই গ্রামের অহিদ তালুকদারের ছেলে মাসুদ তালুকদারকে কুপিয়ে আহত করে তারা। ছেলেকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় রাতেই ১৮ জনকে আসামি করে মামলা করে বাবা অহিদ তালুকদার। তবে ওই দিন ইব্রাহিমের ঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা নিলেও মুক্তিযোদ্ধার মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। একই সময়ের ঘটনা বলে দুটি মামলা নিতে রাজি হয়নি বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। তখন যে দুটি ঘর ভাঙচুর করা হয়েছিল সে দুটি ঘরই দুদিনের ব্যবধানে পুড়িয়ে দেয়া হয়।

শুক্রবার রাতে ইব্রাহিম সরদারের ঘর ও রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে মুক্তিযোদ্ধার ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়। ঘটনাস্থলে ৩টি পেট্রোল বোমা ও একটি ককটেল বোমা ফেলে গেছে বলেও জানায় ভুক্তভোগীরা।

ঘর পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানায় ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ভুক্তভোগীদের। ভুক্তভোগীরা আরও জানায়, থানা পুলিশ বিভিন্ন কারণে সঠিক তদন্ত করতে পারবে না। তাই সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সিআইডি বা পিবিআইকে তদন্ত দাবি তুলেছেন তারা।

স্থানীয়রা জানায়, মাদক কারবার নিয়েই মূলত দ্বন্দ্বের শুরু। এরপরে ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। এর পরে গত দুদিনে দুটি ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এলাকায় এ দ্বন্দ্বটি একটি বিপদ সংকেত বহন করছে। দ্রুত এর সমাধান ও দোষীদের নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তাই পুলিশের নিরপেক্ষ থেকে কাজ করা উচিত। ভুক্তভোগীদের বিচার পেতে সাহায্য করা উচিত।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাহার সরদার বলেন, আমি কোনো মারামারি চাই না। আমি শান্তিতে বসবাস করতে চাই। কিন্তু খলিল সরদার আমাকে তার সঙ্গে থেকে মারামারিতে জড়াতে বলে। খলিল সরদারের পরিবার মাদক ব্যবসায়ী বলে তার কথায় রাজি হইনি। তাই কিছুদিন আগে একবার ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছিল। আজ দেখেন আমার বসতবাড়ি পোড়াই দিলো। স্ত্রীকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বের না হতে পারলে দুজনই পুড়ে মরতাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি এর সঠিক বিচার চাই।

ওহিদ তালুকদার বলেন, তার ছেলেকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে মাদক ব্যবসায়ী খলিল সরদার ও তার লোকজন মিলে। ১৮ জনকে আসামি করে মামলা দিয়েছি। সেদিন মুক্তিযোদ্ধার ঘর কোপানোর ঘটনায় মামলা নিলে আজ পোড়াতে সাহস পেত না। একই সময়ে নাকি দুটি মামলা নেওয়া যায় না পুলিশ বলে। আসলে মাদক কারবারিদের সঙ্গে সবাই যোগাযোগ রাখে। তাদের তো কাচা টাকা আছে। নিরীহ মানুষের কথা কেউ শুনতে চায় না, তাদের পাশে থাকতে চায় না। সরকারের কাছে দাবি গ্রামে যেন শান্তিতে বসবাস করা যায় তার ব্যবস্থা করে দেন।

মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, বিগত দিনের ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে। ঘর পোড়ার বিষয়টি শুনেছি। ভুক্তভোগী মামলা বা অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দোষীদের ছাড় দেয়া হবে না।

news24bd.tv/SHS

এই রকম আরও টপিক