আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে যা বললেন জাহাঙ্গীর

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে যা বললেন জাহাঙ্গীর

অনলাইন ডেস্ক

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে দল। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার (১৬ মে) দুপুরে গাজীপুরের ছয়দানা এলাকায় তার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে ভোটে লড়তে মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। ঋণখেলাপির দায়ে তার মনোনয়ন বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন।

হাইকোর্টে রিট করেও শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হতে পারেননি তিনি।  

অন্যদিকে নিজের মা জায়েদা খাতুনও মেয়র পদের প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র তোলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি টিকে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে। ভোটের প্রচারে ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন পুরো মহানগর।

বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাওয়া হয় জাহাঙ্গীর আলমের কাছে।  

প্রথমেই দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ক্ষমতার জন্য না, পদের জন্য না, একটি সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য মা-ছেলে লড়ছি। যেকোনো সময় আমি হারিয়ে যেতে পারি, যেকোনো কিছু হতে পারে, কিন্তু আমার মা বলেছে, একজন সন্তান চলে গেলেও গাজীপুরে আমার হাজার হাজার সন্তান রয়েছে। ’ 

নিজে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘আমি চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সত্যটা জানুক। যেহেতু কেন্দ্রীয় নেতারা কেউ মুখ খুলছে না চেয়ারের ভয়ে, পদের জন্য; পদ তো একটি বিবেকের জায়গা। আজকে আমার কোনো পদ নেই, কিন্তু লাখ লাখ নেতাকর্মী আমার পাশে আছেন। ’ 

আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে তিনি ও তার মা নির্বাচনে লড়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পাশে কালিয়াকৈর যেটা গাজীপুরের এক আসন। কালিয়াকৈর পৌরসভার নির্বাচনে একজনকে নৌকা দেওয়া হয়েছিল। সেখানে আমাদের সম্মানিত আ ক ম মোজাম্মেল সরাসরি নৌকার ভোট না করে আনারস মার্কায় ভোট করেছিল। কিন্তু তার কোনো বিচার হয়নি। পরে তিনি আবার সভাপতি হয়েছেন, সিনিয়র মন্ত্রী হয়েছেন। তারা যদি মিথ্যা তথ্য দেন, তাহলে আমি ন্যায়বিচার কোথায় পাব?’ 

দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় দল, আমি জন্মের পর থেকে আওয়ামী লীগ করি। এজন্য দল যে সিদ্ধান্ত নেয় তা আমি মানি। বহিষ্কার বিষয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা হয়নি। আপনাদের মাধ্যমে, ফেসবুকে, মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন থাকবে, দীর্ঘ দেড় বছরে কী হয়েছে না হয়েছে এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের সবার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি শুধু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে চেয়েছিলাম, আমার অপরাধটা কী, এটা সামনা-সামনি জবাব দিতে চেয়েছিলাম। কেন্দ্রীয় নেতারা আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু আমার বিশ্বাস আমার বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছু বলে নাই। ’ 

নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তারা যদি কর্মীবান্ধব হয়, আমি তো একজন মানুষ। এই পার্টির জন্য জন্মলগ্ন থেকে আছি। আমি নেত্রীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি, কথা বলতে চেয়েছি কিন্তু কেউ আমার কথা রাখেনি। আমি ৬ বছর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, ৩ বছর মেয়র ছিলাম সে হিসেবে হলেও তাদের আমার কথা অন্তত ২ মিনিট শোনার দরকার ছিল। আমার কাছে অবিচার করা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত নেত্রীর কাছে না বলতে পারব, নেত্রী যা বলে আমি শুনব, শুনি কিন্তু আমার কথাটা শুনতে হবে। সত্য যেন প্রতিষ্ঠিত হয় মিথ্যার ধ্বংস হয় এজন্য নেত্রীকে বলতে চাই। ’

মায়ের নির্বাচন নিয়ে কঠিন একটা পরিস্থিতিতে পড়েছেন জানিয়ে জাহাঙ্গীল বলেন, ‘আমি একটা কঠিন জায়গার মধ্যে আছি। একটা হলো আদর্শের জায়গা, আমার পার্টি। আওয়ামী লীগ, নৌকা ও প্রধানমন্ত্রী—তিনটা জায়গা আমার পছন্দের; কিন্তু একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমার মা প্রতিবাদ করেছে। আমার মা বলছে, এই শহরের প্রতি অবিচার করা হয়েছে, মা আমাকে নির্দেশ দিয়েছে। সেজন্য সন্তান হিসেবে আমি মায়ের সঙ্গে থাকব নাকি আজমত উল্লার সঙ্গে থাকব বলেন? নীতিগতভাবেই আমার মায়ের সঙ্গে থাকতে হয়।

‘এজন্য আমি মনে করি, যারা আওয়ামী লীগ করেন তারা আমার অনুভূতির জায়গা, ভালোবাসার জায়গায় রয়েছে। তারা যেন কষ্ট না পায়। মা ৭০ বছর বয়সে সন্তানকে যে মিথ্যা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়েছে, সেটার প্রতিবাদে এবং শহরের মানুষের জন্য নির্বাচনে মা দাঁড়িয়েছে। ’ 

আদর্শের জায়গা থেকে যারা তার মাকে সমর্থন করছেন, তাদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগও তোলেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘আমি যেহেতু আদর্শের জায়গায় আওয়ামী লীগ করি, সেজন্য আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠন করে তারা অনেকেই আমার মা ও আমার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেয়। কিন্তু সেখানে তাদের থ্রেট দেয়, বহিষ্কার করে। বিভিন্ন কৌশলে তাদের হুমকি দিচ্ছে। আমি চাই যাদের আদর্শ রয়েছে এই লাখ লাখ মানুষকে যেন হয়রানি না করে। ’ 

এ সময় তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বলেন, ‘জনগণ যে রায় দেয়, জনগণ যেহেতু শহরের মালিক তাই তাদের বিরুদ্ধে যেন অবস্থান না নেয়। ভোটের জায়গায় যেন কোনো পক্ষপাতিত্ব না করে। ’ 

তার মাকে পরাজিত করা সম্ভব নয় জানিয়ে বলেন, ‘গাজীপুরের মানুষ আমার মাকে নগরীর মা বলেন। যখন একজন নারী সবার মা হয়ে যায়, তখন সেই নারীকে পরাজিত করতে পারে না। আমার বিশ্বাস, আমার মাকে যেহেতু সবাই মা বলেছে, তাই তারা ২৫ তারিখ শুধু আমার মাকে ভোট দেওয়ার জন্য যাবে। আমার মা লাখ লাখ ভোটে জয়লাভ করবে। ’

news24bd.tv/আলী