বরাদ্দ ৭ লাখ, তবুও পুরোনো মঞ্চেই কেন সাংস্কৃতিক উৎসব?

আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক উৎসব উপলক্ষ্যে তৈরি গেট

বরাদ্দ ৭ লাখ, তবুও পুরোনো মঞ্চেই কেন সাংস্কৃতিক উৎসব?

নাসিম উদ্দীন • নাটোর প্রতিনিধি

আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক উৎসব বলে কথা! যোগ দিতে এসেছেন রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার সংস্কৃতিকর্মীরা। নাটোরে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছেন খোদ সংস্কৃতি মন্ত্রী ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। সাথে আছেন সরকারের এক প্রতিমন্ত্রী ও দুই সংসদ সদস্য।

অনুষ্ঠানে আগত স্থানীয়দের মতে, আতিথ্য আর উৎসবের নাটোরকে পরিকল্পিতভাবে ৮ জেলার মানুষের কাছে ছোট করা হয়েছে।

একটি আঞ্চলিক আয়োজনের পরিসর ও আমেজ যেমনটা হওয়া উচিত, তার কিছুই ছিলো না আয়োজনে।

এ উৎসব উপলক্ষ্যে শহরের বিভিন্ন স্থানে গেল এক সপ্তাহ ধরে করা হয়েছে ব্যাপক পোস্টারিং। হয়েছে মাইকিংও। অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রও বানানো হয়েছে।

মোট কথা আয়োজনের পরিসর জানান দিতে রাখা হয়নি বিন্দুমাত্র ঘাটতি। পুরো আয়োজনে বরাদ্দ ৭ লাখ টাকা।  

news24bd.tv

অথচ কাল নাটোর শহরের কানাইখালী মাঠে গিয়ে দেখা যায়, অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে প্রস্তত করা হয়নি নতুন কোনো মঞ্চ। ৪ দিন আগে একই মাঠে আয়োজিত কনসার্টের মঞ্চই ব্যবহার করা হয়েছে। গ্রিনরুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে স্থানীয় একটি বাড়ি। আট জেলার প্রতিযোগী-দর্শকদের জন্য নেই কোনো ব্যবহারযোগ্য টয়লেট।

জানা যায়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের উদ্যোগে পুরো অনুষ্ঠানের আয়োজনে ছিল চলনবিল আঞ্চলিক সংস্কৃতি উৎসব কমিটি। এতবড় একটি আয়োজনের মঞ্চসজ্জায় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তথাকথিত ‘সংস্কৃতিকর্মী’ বলে দাবিদার একজনকে! বিষয়টি জানাতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই কমিটির এক সদস্য।

আঞ্চলিক সংস্কৃতি বিনিময়ের এমন অনুষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, দর্শক ও জনপ্রতিনিধিরা।

পৌর যুবলীগ নেতা সায়েম হোসেন বলেন, একটি আঞ্চলিক আয়োজন এমন হতে পারে, জানা ছিল না। আয়োজক কর্তৃপক্ষকে এ জন্য জাবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।

বিলহালতি ত্রিমোহনী কলেজের অধ্যক্ষ মকছেদ আলী বলেন, ‘আঞ্চলিক আয়োজনের নামে এক প্রকার প্রতারণা করা হয়েছে। আমেজের কোনো আবহই নেই। ’

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তোজা আলী বাবলু বলেন, ‘সরকারের একজন মন্ত্রী এই আয়োজন উদ্বোধন করলেন, অথচ পুরো অনুষ্ঠানে কোনো রাজনৈতিক নেতাকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। আওয়ামী লীগেও যে সংস্কৃতিমনা লোক আছেন, সেটা বোধহয় আয়োজকরা ভুলে গেছেন। এখানে আয়োজকদের খামখেয়ালিপনা স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। ’

এদিকে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো ছবি অনুষ্ঠানের ব্যানারে না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, ‘তাহলে কিসের সাংস্কৃতিক উৎসব হলো, যদি বাঙ্গালি সংস্কৃতির ধারকই(বঙ্গবন্ধু) না থাকেন?’

রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি তাপস মজুমদার বলেন, ‘দেশে এখনও সাংস্কৃতিক আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি হয়নি। ’

৭ লাখ টাকা বরাদ্দের আয়োজন এমন কেন- জানতে চাইলে আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ও নাটোর ভিক্টোরিয়া পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘অনুষ্ঠানের দিন পর্যন্তও নির্ধারিত বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ধার-দেনা করে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়েছে। প্রথম দিনের আয়োজনে একটু ত্রুটি থাকতে পারে। আমরা সংশোধনের চেষ্টা করছি। ’


নাসিম▐ অরিন▐ NEWS24

সম্পর্কিত খবর