প্রধান শিক্ষকশূন্য এক উপজেলার ৩৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়

সংগৃহীত ছবি

প্রধান শিক্ষকশূন্য এক উপজেলার ৩৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়

অনলাইন ডেস্ক

বরিশালের বানারীপাড়ায় বিশারকান্দি ইউনিয়নের কলাভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৩ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক নেই। ৭ পোস্টের এ বিদ্যালয়ে মাত্র তিনজন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন সহকারী শিক্ষক শারমিন পারভীনকে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে। এ জন্য তাকে প্রশাসনিক কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়।

প্রায়ই তাকে প্রত্যন্ত জনপদের এ বিদ্যালয় থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সন্ধ্যা নদী পাড় হয়ে বানারীপাড়া উপজেলা সদরে শিক্ষা অফিসে দাপ্তরিক কাজে যেতে হয়। অংশ নিতে হয় ট্রেনিং ও ক্লাস্টারসহ বিভিন্ন মিটিংয়ে। তখন তিনি ক্লাস নিতে পারেন না। বাকি দুজন সহকারী শিক্ষককে সামলাতে হয় পুরো বিষয়।
এতে ব্যাহত হচ্ছে লেখাপড়া।  

একই চিত্র বানারীপাড়া উপজেলার ৩৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এসব বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক নেই। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বছরের পর বছর ধরে প্রধান শিক্ষক নেই সেগুলো হলো- উপজেলার পশ্চিম বিশারকান্দি, মধ্য পূর্ব বিশারকান্দি, মধ্য বিশারকান্দি, উত্তর বিশারকান্দি কলাভিটা দক্ষিণ পশ্চিম উমারেরপাড়, বলদিয়া ইলুহার, মধ্য মলুহার, মলুহার বালীবাড়ী আদর্শ, পশ্চিম মলুহার, বড় করফাকর, নলশ্রী, তালাপ্রসাধ, পূর্ব সৈয়দকাঠী, পশ্চিম সৈয়দকাঠী, বাওয়ালিয়া, চাখার, সলিয়াবাকপুর এ রব, খোদাবকসা, দক্ষিণ বাইশারী, নাটুয়ারপাড়, কচুয়া রাড়ীপাড়া, পশ্চিম বাইশারী, গঙ্গামনি, ততলা মধুরভিটা, উদয়কাঠী ইউনিয়ন প্রগতি, দক্ষিণ বিশারকান্দি, ত্রিমূখী কদমবাড়ী মন্ডলপাড়া, উত্তর বিশারকান্দি বটতলা, দক্ষিণ ইলুহার, মলুহার, দিদিহার শেরে বাংলা, মধ্য সৈয়দকাঠী-১, উত্তর সৈয়দকাঠী, উত্তর তেতলা ও পূর্ব উদয়কাঠী মহম্মদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।  

এছাড়া উপজেলার ১২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬২ সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে।  ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানসহ শিক্ষা কার্যত্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। জানা গেছে, শহর এলাকায় স্কুলগুলোতে অবসরের কারণে পদ শূন্য হলে অন্য এলাকা থেকে বদলি হয়ে পদ পূরণ হয়। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলোতে অবসরে যাওয়ার পর পদ শূন্যই থেকে যাচ্ছে। তাই প্রতিবছরই বাড়ছে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য স্কুলের সংখ্যা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষকের পদগুলো ৬৫ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৩৫ ভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের বিধান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। আবার সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়াও বন্ধ রয়েছে। তাই প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা ও বানারীপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদ হোসেন বলেন, মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে দ্রুত শিক্ষক সংকট দূরীকরণ প্রয়োজন।  

এ বিষয়ে বানারীপাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি ও নিয়োগ বন্ধ থাকায় প্রধান শিক্ষক পদে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে শুধু পাঠদানই নয় শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও অফিসিয়াল তথ্যপ্রদানসহ বিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। মামলাসহ যেসব জটিলতা রয়েছে তা দূর করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।  

এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা শিক্ষা কমিটি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান  গোলাম ফারুক বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শিশুদের শিক্ষার ভীত তৈরি হয়। তাই সেখানে পাঠদান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য পদোন্নতি ও নিয়োগ সংক্রান্ত সব জটিলতার অবসান ঘটিয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের জন্য সরকারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

news24bd.tv/আইএএম