ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা জানালেন বসুন্ধরা চেয়ারম্যান

ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা জানালেন বসুন্ধরা চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলে আমি বিনামূল্যে জমি দান করবো। ’

শনিবার (২০ মে) রাতে ‘কুরআনের নূর-পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা গ্রুপ’-এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে আহমেদ আকবর সোবহান এ কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে অনুরোধ করবো, তিনি যাতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দেশে একটি ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

'

তিনি আরও বলেন, 'ইসলামের খুঁটি যে অনেক শক্ত, তা আমরা সমগ্র বিশ্বকে দেখাতে চাই। আপনারা দোয়া করবেন, যাতে বসুন্ধরা এটি করতে পারে। ’

খুদে হাফেজদের মধুর কণ্ঠে আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের হাফেজদের কণ্ঠ যাতে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, বসুন্ধরা গ্রুপ সে উদ্যোগ নেবে। এই আয়োজনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে প্রতিবছর ৯ ফেব্রুয়ারি যাতে এটি শুরু হয়।

’ এ ধরনের সুন্দর আয়োজনের জন্য তিনি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটিকে ধন্যবাদ জানান।

পুরস্কারের পরিধি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতায় অন্তত ১৫ জনকে পুরস্কৃত করা উচিত। কেননা দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে ছোট ছোট প্রতিযোগীরা যেভাবে অংশগ্রহণ করেছে, সেভাবে তাদেরকে উৎসাহিত করা দরকার। প্রতি জেলা থেকে যেভাবে প্রতিযোগীরা আসে, আমি চাই না তারা যাতে বিরাগভাজন হয়ে ফিরে যায়।

খুদে হাফেজদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি, অর্থনৈতিক ও মানবিক উন্নতি কামনা করে তিনি বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতা সারা বিশ্বে দেখানো হয়েছে। এ ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কুরআন বিষয়ে তাদের সম্যক জ্ঞানের পরিধি আরও বাড়ুক, এ প্রত্যাশা করি। ’

আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘স্বনামধন্য আলেমরা এখানে উপস্থিত হয়েছেন। হাফেজরা যাতে বাংলায়ও পবিত্র কুরআনকে বুঝতে পারে, তারা যাতে ভবিষ্যতে আরও অনেক উঁচু স্থানে চলে যেতে পারে এই আশা করি। এই হাফেজরাই তাদের বুকের ভেতর পবিত্র কুরআনকে সংরক্ষণ করবে।

অনুষ্ঠানের সামগ্রিক পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনি বলেন, ‘ইসলাম কত সুন্দর, কত শান্ত, কত নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আজকের এই অনুষ্ঠান। এত সুন্দর আয়োজন আমি আমার জীবনে দেখিনি। কোনো হৈচৈ নেই। সবাই নির্বিঘ্ন নয়নে চেয়ে আছে। এত সুন্দর সুন্দর তিলাওয়াত শুনে খুবই মুগ্ধ হয়েছি। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ১০৫ বিঘা জমিতে মক্কা-মদিনার আদলে একটি কবরস্থান করছি। আপনাদের সবার দোয়া এবং আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা ইসলামের খেদমতে এ ধরনের সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাই। ’

‘কুরআনের নূর-পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা গ্রুপ’ দেশের ইতিহাসে বৃহৎ ইসলামিক রিয়ালিটি শো। ৯ ফেব্রুয়ারি পর্দা উঠেছিল, আজ ২০ মে সফল সমাপ্তি। ১০০ দিনের মহা আয়োজনে অংশ নেয় অন্তত ১০ হাজার হাফেজ; যাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে। কচিকাঁচা এই হাফেজদের অংশগ্রহণে পুরো আয়োজন ছিল বর্ণিল। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির এই সুন্দর আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ।

গত ১ ফেব্রুয়ারি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই রিয়ালিটি শো আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল। এরপর অভাবনীয় সাড়া জাগে। সারা দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হাজারো মাদরাসা থেকে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে নিবন্ধন করেছিল ১০ হাজারের বেশি হাফেজ। সমগ্র বাংলাদেশ থেকে নিবন্ধিত হাফেজদের মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠত্ব বাছাইয়ে নেওয়া হয় নিখুঁত পরিকল্পনা।

এর সঙ্গে যুক্ত হন দেশের নামজাদা ইসলামিক স্কলারবৃন্দ। নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করেন বিভিন্ন মাদরাসার মুহতামিম, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা। প্রতিযোগিতা ছিল অত্যন্ত সুশৃঙ্খল। সব মিলিয়ে ১১টি জোনে বিভক্ত করে শুরু হয় অডিশন রাউন্ড। ১১টি জোন হলো ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, খুলনা ও ফরিদপুর।

৯ ফেব্রুয়ারি সকালে একযোগে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় জোনে অডিশনের মধ্য দিয়ে পর্দা ওঠে ‘কুরআনের নূর-পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা গ্রুপ’ রিয়ালিটি শোর। ১১ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা, ১২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম, ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী ও রংপুর, ১৮ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর ও খুলনা, ২০ ফেব্রুয়ারি বরিশাল বিভাগীয় জোনে চলে অডিশন রাউন্ড। ২২ ফেব্রুয়ারি দিনভর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা উত্তর জোনের অডিশন। সর্বশেষে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি একই স্থানে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা দক্ষিণ জোনের অডিশন। প্রাথমিক অডিশন থেকে ইয়েস কার্ড পায় ৪৫ জন হাফেজ।

ঢাকার দুই জোন থেকে ৯ জন করে ১৮ জন এবং বাকি ৯টি জোনে তিনজন করে ২৭ জন হাফেজকে নিয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতার থিয়েটার রাউন্ড। থিয়েটার রাউন্ড চলে ৪ থেকে ৮ এপ্রিল। এখান থেকে সেরা ৩০ জন জায়গা করে নেয় কোয়ার্টার ফাইনালে। ৯ থেকে ১৩ এপ্রিল কোয়ার্টার ফাইনাল রাউন্ড চলে। তাদের মধ্য থেকে সেরা ২০ জন জায়গা করে নেয় সেমিফাইনাল রাউন্ডে। এই পর্বে প্রতিযোগিতার জন্য প্রতিযোগীদের চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। সেমিফাইনাল রাউন্ড শুরু হয় ২০ এপ্রিল। প্রতি গ্রুপ থেকে দুজন করে চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নেয় আটজন হাফেজ। শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য চূড়ান্ত পর্বে যারা লড়েছিল- গ্রুপ ১ থেকে কুমিল্লার হাফেজ মো. মুশাররফ হুসাইন ও ময়মসিংহের মো. লাবিব আল হাসান। গ্রুপ ২ থেকে ঢাকা দক্ষিণের হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ মারুফ ও বশির আহমেদ। গ্রুপ ৩ থেকে ঢাকা উত্তরের হাফেজ শাহরিয়ার নাফিজ সালমান ও নুরুদ্দীন জাকারিয়া। গ্রুপ ৪ থেকে ঢাকা দক্ষিণের হাফেজ নাসরুল্লাহ আনাছ ও সিলেটের মো. আবু তালহা।

দেশবরেণ্য ইসলামিক স্কলার ও অভিজ্ঞ হাফেজদের সমন্বয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী দায়িত্ব পালন করেন এবং নিখুঁতভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে শ্রেষ্ঠত্ব নির্বাচন করেন।

কুরআনের হাফেজদের নিয়ে বৃহৎ এই রিয়ালিটি শো চলতি রমজানে প্রতিদিন নিউজটোয়েন্টিফোর টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়েছিল। এর মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকম ও ক্যাপিটাল এফএম।