ফুয়াদের যৌন ব্যবসা, অন্ধকার জগতের অন্য রূপ

ফুয়াদের যৌন ব্যবসা, অন্ধকার জগতের অন্য রূপ

নিউজ ২৪ ডেস্ক

প্রেমের ফাঁদে ফেলে সুন্দরী যুবতীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতেন ফুয়াদ। এরপর সেই যৌনদৃশ্য গোপন ক্যামেরায় ধারণ করে রাখতেন। সেটা দেখিয়ে দিনের পর দিন ওইসব তরুণীদের ব্লাকমেইল করতেন। অনেকক্ষেত্রে ওইসব ভিডিওর কোন কোনটি ইন্টারনেটে ছেড়ে দিতেন।

ঘরে তৈরি পর্নো ভিডিও হিসেবে উচ্চ মূল্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ওয়েবসাইটের কাছে বিক্রি করতেন। এই ভিডিওর ভয় দেখিয়েই যৌনপেশায় নামাতেন অনেক সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়েদের। ধনী খদ্দেরদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন প্রেমের জালে ফাসিয়ে ব্লাকমেইল করা মেয়েটির নগ্ন বা অর্ধনগ্ন ছবি। পুরো প্রক্রিয়াটা তার জন্য ছিল নেশা ও পেশা- দুটোই।
 

অভিযুক্ত ফুয়াদ বিন সুলতান (৩৩) পুলিশের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মৃত. সুলতান আহমেদের সন্তান। একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাজধানীর উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরে নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ফুয়াদকে।  জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই বাসা থেকেই অনেক অশ্লীল পর্নো সিডি ও গোপন ক্যামেরা ও এডিটিংয়ের কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম উদ্ধার করে র‌্যাব।

জানা গেছে, রাজধানীর তিতুমীর কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স পাস করে কয়েকটি দেশি ও বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করেছেন ফুয়াদ। ছাত্রাবস্থায়ই তিনি প্রেমের ফাঁদে ফেলে অনেক মেয়ের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন। হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দিয়ে অপরাধের পথে পা বাড়ান। যৌন ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ে জড়িয়ে পড়েন।  

নারীদের ব্লাকমেইল করে যৌন ব্যবসার চিন্তা অনেকদিন ধরেই ছিল ফুয়াদের মাথায়। শুরুটা ২০১১ সালে। তখন উত্তরা এলাকায় বাসা ভাড়া করে যৌন কাজের জন্য ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া দিতে শুরু করেন ফুয়াদ। ২০১৪ সালের দিকে তিনি ইন্টারনেটের ব্যবসা শুরু করেন। ওই সময়ই তিনি তার যৌন নেশাকে পেশায় পরিণত করেন। বিভিন্ন সময় ধারণ করা ভিডিও এডিট করে টার্গেটকৃত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। বিনিময়ে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের অর্থ। আবার অনেক ভুক্তভোগীকে দিয়ে অর্থের বিনিময়ে খদ্দেরদের মনোরঞ্জন করাতেন। ২০১৬ সালে ২টি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তিনি পর্নোগ্রাফির ব্যবসা শুরু করেন। এই দুটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তিনি বিভিন্নভাবে সংগৃহীত মেয়েদের আপত্তিকর ছবি, মোবাইল নম্বর এবং দৈহিক মিলনের বিনিময়ে নির্ধারিত মূল্য উল্লেখ করে বিভিন্নজনকে আকৃষ্ট করতেন। বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে নিজে মুখোশ পরে অশালীন অবস্থায় মেয়েদের পাশে বসিয়ে ফেসবুকে লাইভ স্ট্রিমিং করে তার পর্নো সাইটকে জনপ্রিয় করতেন। তার ফ্ল্যাটে আসা নারী-পুরুষদের ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সরবরাহ করতেন।

র‌্যাব বলছে, শুধু বান্ধবীই নয়, পেশাদার সুন্দরী যৌন কর্মীদেরও তিনি অর্থের বিনিময়ে ডেকে নিত নিজ ফ্ল্যাটে। গোপন ক্যামেরা বসিয়ে ধারণ করতেন সঙ্গম দৃশ্য। আপত্তিকর এসব দৃশ্য দেখিয়ে দিনের পর দিন ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন ওই নারীদের। ফুয়াদের যৌনসঙ্গী সরবরাহ করার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হতো ডলার খরচ করে। ওয়েব সাইটে দেওয়া সুন্দরী মেয়েদের ছবি দেখে পছন্দ হওয়ার পর রেট অনুযায়ী সরবরাহ করা হতো। তবে ভেন্যু ছিল তার নিজের দুটি ফ্ল্যাট। ফ্লাটের ঠিকানা কাউকে দেওয়া হতো না। শুধু টাকা-পয়সায় ও ফোনালাপে মিল হলে নির্দিষ্ট স্থান থেকে লোক দিয়ে সেই ফ্লাটে নিয়ে যাওয়া হতো খদ্দেরকে।

ফুয়াদ যে শুধু নারীদের ব্লাকমেইল করতেন তাই নয়। র‌্যাব জানিয়েছে অনেক খদ্দেরকে ব্লাকমেইল করে ফুয়াদ হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের টাকা। অনেক খদ্দের নিয়মিত টাকা দিয়ে যাচ্ছেন। যারা ফুয়াদের প্রস্তাবে রাজি হয়নি তাদের আপত্তিকর ভিডিও বিভিন্ন পর্নো ওয়েবসাইটে বিক্রি করে দিয়েছে ফুয়াদ।  

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ফুয়াদের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন এমন অনেক ব্যক্তির সেক্স দৃশ্য ধারণ করে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। অনেকের দৃশ্য তিনি ইন্টারনেটে ছেড়েও দিয়েছিলেন। আবার অনেকগুলো ভিডিও দিয়ে তিনি তৈরি করেছেন পর্নো ছবি। অর্থের বিনিময়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সাইটে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করতেন এগুলো। কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গোয়েন্দা নজরদারি চালানোর পর নিশ্চিত হয়ে ফুয়াদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর