স্বাস্থ্য খাতে ৫ লাখ কর্মী রপ্তানির সুযোগ তৈরি হচ্ছে: শাহরিয়ার আলম

সংগৃহীত ছবি

‘লেটস টক’

স্বাস্থ্য খাতে ৫ লাখ কর্মী রপ্তানির সুযোগ তৈরি হচ্ছে: শাহরিয়ার আলম

অনলাইন ডেস্ক

ইউরোপের দেশগুলোতে প্রায় ৫ লাখ দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী প্রেরণার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটিতে সম্প্রতি সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত ‘লেটস টক: ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস অ্যান্ড ইকোনমি’ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় এ তথ্য জানান তিনি।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই (স্বাস্থ্য) খাতকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। এ বিষয়ে এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে যার অধীনে নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোতে ভাষা শিক্ষার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।

এখন আমাদের শিক্ষার্থীদের এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য যথাযোগ্যভাবে তৈরি হতে হবে।

তিনি আরও জানান, আগামী ৫ বছরের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে ৫০ হাজারের বেশি নার্স ও ডাক্তার প্রেরণের সুযোগ তৈরি হতে যাচ্ছে।

সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর ইয়াং বাংলা আয়োজিত লেটস টক অনুষ্ঠানের ৪৫তম আয়োজনে তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে দেশের নীতি-নির্ধারকরা সরাসরি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ জেলার ৩৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০০ জন শিক্ষার্থী।

অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশ নেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম, সংসদ সদস্য এস. এম. শাহাজাদা, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. এ. এস. এম. লুৎফুল আহসান এবং ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮’ বিজয়ী ও অল ফর ওয়ান ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কাম্রুন্নেসা মিরা।

মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘তৈরি পোশাক শিল্পের পাশাপাশি বাংলাদেশ বর্তমানে চামড়া, ফারমাসিউটিক্যালস পণ্য, স্পোর্টসওয়্যার, আইটি সম্পর্কিত পণ্য রপ্তানি করছে এবং বাজারে ভালো দাম পাচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যেই ডাইভারসিফাইড কোমোডিটি ইকোনমিতে অবস্থান করছি। ’

প্রতিমন্ত্রী আরও তুলে ধরেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে অনেক দেশের শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুসম্পর্ক থাকার কারণে দেশটি এখন বিশ্বের দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর একটি। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ আঞ্চলিক সংযোগ সহজতর ও বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দিতে চায়।

অনিয়মিত অভিবাসীদের সমস্যা সমাধানে অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নের উত্তরে শাহরিয়ার আলম কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতনতা তৈরির দিকে জোর দেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে প্রায় ১ কোটি বাংলাদেশি অভিবাসী রয়েছে। ১০-২০ হাজার অবৈধ অভিবাসীর কারণে তাদের অবস্থানের সঙ্গে আপস করা যাবে না। ’

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক সম্পর্ক ও যোগাযোগের প্রভাব নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি তিনটি দিক দিয়ে প্রভাবিত হয়- কৃষি, রেমিট্যান্স এবং রপ্তানিকারক পণ্য। বরাবরই বাংলাদেশের প্রবণতা হলো তার সামর্থ্যের চেয়ে বেশি করা। তাই আমরা স্বপ্ন দেখি রপ্তানি খাতকে ৬০ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার মার্কেটে পরিণত করার। শুধু তাই নয়, মানুষ যদি সঠিক ও আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অভিবাসন করে, তাহলে আমাদের রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২০-২২ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলারে পরিণত হতে সময় লাগবে না। ’

বিদেশে কর্মদক্ষ জনশক্তি বৃদ্ধি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় এমপি এস এম শাহাজাদাকে। তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকার অদক্ষ জনশক্তিকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার জন্য অনেক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশ টেকনিক্যাল এডুকেশন বোর্ডের অধীনে প্রায় ৮০টি টেকনিক্যাল স্কুল রয়েছে। বিদেশে গিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক জনগোষ্ঠী যদি এই ট্রেনিং নিয়ে বিদেশে যায়, তাহলে দক্ষ জনশক্তির সংখ্যা বাড়তে থাকবে।  

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ড. এ. এস. এম. লুৎফুল আহসান কথা বলেন বিদেশি দূতাবাসের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুসম্পর্ক নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ থেকে প্রতি বছর অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন দেশে স্কলারশিপ, ফান্ড নিয়ে বিদেশে পড়তে যাচ্ছে। সেই সাথে এক্সচেঞ্জ স্টুডেন্ট হিসেবেও তারা পড়ছে। এর পাশাপাশি অন্য দেশের অনেক শিক্ষার্থীও বাংলাদেশে পড়তে আসছে বিশেষ করে কৃষি ও মেডিকেল বিভাগে। ’

২০১৮ সালের জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী কামরুন্নেসা মীরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি প্রথম দেশের বাইরে ভ্রমণ করি যখন আমি মাত্র প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলাম। একটি গবেষণার কাজে মালয়েশিয়াতে গিয়েছিলাম। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমাদের সবসময়ই নতুন সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা নেয়া ও তা অন্বেষণের প্রেরণা থাকতে হবে। কখনই নিজেকে একা ভাববেন না কারণ আপনাকে সাহায্য করার জন্য সেখানে একটি বাংলাদেশী দূতাবাস সবসময় থাকবে। ’

সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর ইয়াং বাংলা দেশের সর্ববৃহৎ তারুণ্যের প্ল্যাটফর্ম। দেশ গঠনে এগিয়ে আসা তরুণদের হাতে হাত ধরে ‘কানেক্টিং দ্য ডটস’ স্লোগানকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এটি। তরুণের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে নীতি নির্ধারকদের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে নিয়মিত আয়োজন ‘লেটস টকস’ আয়োজন করে।