মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আজীবন সাধনা করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম: প্রধানমন্ত্রী

মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আজীবন সাধনা করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম: প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নজরুলের সাহিত্যকর্মে পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের বাণী উচ্চারিত হয়েছে। অসামান্য ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক ও জাতীয়তাবোধের মূর্ত প্রতীক।  

আজ  জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে  দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

শেখ হাসিনা বলেন  মানবতা, সাম্য ও দ্রোহের কবি নজরুলের আজীবন সাধনা ছিল সমাজের শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং মানুষের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন। নজরুল জন্মেছিলেন এবং বেড়ে উঠেছিলেন একটি পরাধীন সমাজে। পরাধীনতার গ্লানি তিনি উপলব্ধি করেছেন মর্মে মর্মে। এ ছাড়াও তিনি অন্যায়, অসত্য, নির্যাতন-নিপীড়ন, নানামাত্রিক অসাম্য ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে যুগে যুগে প্রতিবাদ প্রতিরোধের অনাবিল প্রেরণা যুগিয়েছেন।

স্বল্পকালীন সৃষ্টিশীল জীবনে তিনি রচনা করেছেন প্রেম, প্রকৃতি, বিদ্রোহ ও মানবতার অনবদ্য সব কবিতা, গান, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস ও নাটক। কালজয়ী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুল তাঁর লেখনির মাধ্যমে আমাদের সাহিত্য, সংগীত ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান স্বাতন্ত্র মহিমায় সমুজ্জ্বল। তাঁর সাহিত্য ও সংগীত শোষণ, বঞ্চনা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে মুক্তিরও দীক্ষা স্বরূপ। তাঁর ক্ষুরধার লেখনির স্ফুলিঙ্গ যেমন ব্রিটিশ শাসনের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিল, তেমনি তাঁর বাণী ও সুরের অমিয় ঝর্ণাধারা সিঞ্চিত করেছে বাঙালির হৃদয়কে। তিনি প্রকৃতই প্রেমের এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি। ধর্ম-বর্ণের  ঊর্ধ্বে মানবতার জয়গান গেয়েছেন, নারীর অধিকারকে করেছেন সমুন্নত। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি যিনি ব্রিটিশ অধীনতা থেকে ভারতকে মুক্ত করার জন্য স্বরাজের পরিবর্তে পরিপূর্ণ স্বাধীনতার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। সকল জাতি, ধর্ম ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে নজরুল ছিলেন সাহসের প্রতীক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কবি নজরুল তাঁর প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনির মাধ্যমে এ দেশের মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত করেছিলেন। তাঁর গান ও কবিতা সব সময় যে কোনো স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। নজরুল সাহিত্যের বিচিত্রমুখী সৃষ্টিশীলতা আমাদের জাতীয় জীবনে এখনও প্রাসঙ্গিক। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন কবির প্রতি একান্তঅনুরক্ত। স্বাধীনতা পরবর্তী পর্যায়ে তাঁরই ঐকান্তিক আগ্রহে কবিকে কলকাতা হতে বাংলাদেশে এনে জাতীয় কবির সম্মানে অধিষ্ঠিত করা হয়। কবি নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন, তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতার সংগ্রাম ও কর্মে। শেখ হাসিনা বলেন,  তিনি বিশ্বাস করেন, নজরুলের রচনা আমাদের কর্ম, চিন্তা ও মননে সকল কূপমন্ডকতা এবং প্রতিবন্ধকতা দূর করে একটি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ, সুখী-সমৃদ্ধ ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে। একই ভাবে তিনি মনে করেন মহান মানবতাবাদী কবি নজরুলের সংগ্রামশীল জীবন এবং তাঁর অবিনাশী রচনাবলী বাঙালি জাতির জন্য অন্তহীন প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী  জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

news24bd.tv/আইএএম