একসাথে দুই কলেজের অধ্যক্ষ তিনি, রয়েছে শিক্ষিকাকে হেনস্তার অভিযোগ

মো. হাসানুল সিরাজী।

একসাথে দুই কলেজের অধ্যক্ষ তিনি, রয়েছে শিক্ষিকাকে হেনস্তার অভিযোগ

মাদারীপুর প্রতিনিধি

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাসানুল সিরাজী বিরুদ্ধে একইসাথে দুই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিযোগ উঠেছে। এটা নিয়ম বহির্ভূত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অন্য শিক্ষকরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মো. হাসানুল সিরাজী কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত থাকাবস্থায় ২০২০ সালের ২৩ মার্চ তারিখে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটের কাজি আজহার আলি কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন।

যোগদান করার পর একই বছরের ৯ জুলাই তারিখ পর্যন্ত কাজি আজহার আলি কলেজে অধ্যক্ষ পদে কর্মরত ছিলেন।

কাজি আজহার আলি কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর কাজি আজহার আলি কলেজে অধ্যক্ষ পদে বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেন কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাসানুল সিরাজী। ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন এবং একই তারিখে কলেজটির গভর্নিং বডি কর্তৃক এবং ৫ মার্চ তারিখে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নিয়োগ অনুমোদন হয়।

মার্চ মাসের ৯ তারিখে নিয়োগপত্র প্রদান করা হয় এবং ২০২০ সালের মার্চ মাসের ২৩ তারিখে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন অধ্যক্ষ মো. হাসানুল সিরাজী। এরপর ২০২০ সালের ২৩ মার্চ তারিখে যোগদানোত্তর ছুটির আবেদন করেন এবং ২০২০ সালের ৭ জুন ছুটি বর্ধিকরণের আবেদন করেন।

এরপর ২০২০ সালের ৯ জুলাই কাজি আজহার আলি কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ পত্র প্রদান করেন তিনি।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর ১১.১৭ ধারা মোতাবেক ‘এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক-কর্মচারী একই সাথে একাধিক কোনো পদে/চাকরিতে বা আর্থিক লাভজনক কোনো পদে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না। এটি তদন্তে প্রমাণিত হলে সরকার তার এমপিও বাতিলসহ দায়ী ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

তবে মো. হাসানুল সিরাজী একদিকে কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ পদে অন্যদিকে একই সময়ে ফকিরহাটের কাজি আজহার আলি কলেজে অধ্যক্ষ পদে চাকরি করলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ধরণের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বছরের পর বছর সরকারের দেওয়া এমপিও’র অংশের টাকা তছরুপ করছেন তিনি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকুরীর শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ এর ৮নং বিধি অনুযায়ী, ‘কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ খন্ডকালীন ভিত্তিতে নিযুক্ত হতে পারবেন না এবং একজন পূর্ণকালীন শিক্ষক খন্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে একাধিক কলেজে শিক্ষকতা করিতে পারবেন না। তবে
আইন কলেজের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনবোধে এই বিধি শিথিল করতে পারবে। ’

কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মো. হাসানুল সিরাজী কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ না করে ফকিরহাটের কাজি আজহার আলি কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। অর্থাৎ তিনি এই সময় একইসাথে কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ পদে এবং ফকিরহাটের কাজি আজহার আলি কলেজে অধ্যক্ষ পদে চাকরি করেন। যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকুরীর শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ এর ৮নং বিধি এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর ১১.১৭ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর তৎকালীন গভর্নিং বডির সভাপতি ও কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিনা অনুমতিতে একাধিক দিন কলেজে অনুপস্থিত থাকায় তাকে শোকজ করেন এবং সাত কর্মদিবসের মধ্যে শোকজের জবাব চান। কিন্তু প্রায় তিন বছর পার হলেও সেই শোকজের জবাব দেননি অধ্যক্ষ সিরাজী। শুধু অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনাই নয় অর্থ আত্মসাৎ এবং নারী শিক্ষিকাকে হেনস্তার অভিযোগও রয়েছে এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। আর এই অর্থ আত্মসাৎ এবং নারী শিক্ষিকাকে হেনস্তা, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে কলেজটির ৩৫ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ পত্র জমা দেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে। যা তদন্ত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাসানুল সিরাজী বলেন, আমি যে সময়ে ফকিরহাটের কাজি আজহার আলি কলেজে যোগদান করি সে সময় ছিল করোনাকালীন। মানুষের চেষ্টা থাকবে অন্য কোন ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার। কিন্তু কালকিনি কলেজ থেকে ছাড়পত্র না পাওয়ায় আমি সেখান থেকে চলে আসি। সরকারের কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধা আমি গ্রহণ করিনি। ফলে চাকরিবিধি লঙ্ঘন হয়নি। এমপিও নীতিমালা এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি বিধিমালার শর্তে অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগদান সময় অবশ্যই পূর্বের প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। কিন্তু আপনি যোগদান করলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেই যোগদান পত্র অনুমোদন করলেন, ছুটি নিলেন, ছুটি বর্ধিত করলেন এরপর দীর্ঘ কয়েকমাস পরে পদত্যাগ পত্র জমা দিলেন কিভাবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোনো আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করিনি।

এসময় ঢাকা বোর্ড কর্তৃক শোকজ নোটিশের যথাযথ জবাব দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

কলেজের ৩৫ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্রে আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ, অব্যবস্থাপনা ও নারী শিক্ষিকাকে হেনস্তার অভিযোগ এনে মাউশির ডিজি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন যার তদন্ত হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আমি সঠিকভাবে কলেজটি পরিচালনা করছি ফলে এক পক্ষ আমাকে সহ্য করতে পারছে না। বিষয়টি তদন্ত হয়েছে মাউশি যে সিদ্ধান্ত দেবে সেই সিদ্ধান্ত তিনি মাথা পেতে নেবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও কালকিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক বলেন, তিনি ইচ্ছেমত কলেজে আসেন যান। একাধিকবার তাকে শোকজ করার পরও কোন ধরণের জবাব তিনি দেননি।

news24bd.tv/FA

এই রকম আরও টপিক