‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ সামাজিক প্রবৃদ্ধি আনবে আসন্ন বাজেট: অধ্যাপক সেলিম

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সেলিম উদ্দিন

বাজেট ২০২৩-২৪

‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ সামাজিক প্রবৃদ্ধি আনবে আসন্ন বাজেট: অধ্যাপক সেলিম

অনলাইন ডেস্ক

আসন্ন বাজেটে কৃষি শিক্ষা ও ব্যবসায় সহায়ক নীতির পাশাপাশি নির্বাচনমুখী ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ সামাজিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে জোর দেওয়া হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সেলিম উদ্দিন। নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের বাংলাদেশের আসন্ন উত্তোরণে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ এর আলোকে ব্লু ইকোনমির খাতগুলোকে কাজে লাগিয়ে সুনীল অর্থনীতি ‘ব্লু গ্রোথ’ অর্জনে রূপরেখা এখনই সামেন আসতে পারে বলে ধারনা দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক। এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ ধারণা দেন।  

অধ্যাপক সেলিম দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং অ্যান্ড ফাইনান্স করপোরেশনের চেয়ারম্যান এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের নির্বাহী পর্ষদের প্রধান হিসেবে।

 

সাক্ষাৎকারে ড. সেলিম বলেন, ‘কৃষি শিক্ষা, ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্পবান্ধব বাজেট আমাদের উন্নয়নগুলোকে টেকসই করে তুলবে। তাই আমাদের গ্রিন প্রবৃদ্ধির দিকে নজর রাখতে হবে। ’ বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির দীর্ঘসূত্রিতার কমাতে ‘পরিবীক্ষণ ও নিরীক্ষা’ বিভাগের সক্ষমতা বাড়ানোসহ পেশাজীবীদের অন্তর্ভুক্তির পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।  

করোনা মহামারি থেকে উত্তরণের সময় শেষ না হতেই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের অস্থির বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ দশমিক ৫৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষিত হতে যাচ্ছে।

যেখানে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলনের সম্ভাবনা যথাক্রমে ৭ দশমিক ৫ এবং ৬ শতাংশ।  

সামষ্টিক অর্থনীতির নির্দেশগুলো যখন চাপে, তখন বাংলাদেশের উন্নয়নশীল অর্থনীতির যাত্রায় এবারের বাজেট কেমন হবে, ধারনা পাওয়া যাবে অধ্যাপক সেলিম উদ্দিনের সাক্ষাৎকারে। এখানে চুম্বক অংশ উল্লেখ করা হলো: 

প্রশ্ন: সামগ্রিকভাবে নির্বাচনের বছরে বাজেট কী রকম হবে বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যাপক সেলিম: আপনি জানেন যে, কোভিড থেকে উত্তরণের সাথে সাথে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে পুরো বিশ্বে প্রায় সকল পণ্যের মূল্য আকাশচুম্বী হয়েছিল এবং বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা অনেকটাই সুখকর ছিল না বা অনেক ক্ষেত্রে ভেঙে পড়েছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সারা বিশ্বের প্রায় দেশেই মুদ্রাস্ফীতি চরম আকার ধারণ করে এবং বৈশ্বিক জীবনযাত্রা ব্যয় সংকটের (cost of living crisis) মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশের আমদানি যেহেতু রপ্তানির তুলনায় বেশি, তাই উচ্চমূল্যে পণ্য আমদানির সঙ্গে সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতিও আমদানি  হয়। যে কারণে মুদ্রাস্ফীতি অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যায় এবং অস্বাভাবিক মূল্যে আমদানি করা পণ্যের মূল্য রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে সংকুলান না হওয়ায় এবং সারা বিশ্বে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ডলার অপ্রতুলতা দেখা যায়। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় মুদ্রাস্ফীতি তুলনামূলক কম বৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশের নিম্নআয়ের জনগণ জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহে হিমশিম খাচ্ছে। তাই আমি মনে করি, এই বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যত ধরনের কলাকৌশল আছে তার বাস্তবায়নে দিক নির্দেশনা থাকবে।  

নিম্নআয়ের মানুষকে এই অস্থির সময়ে স্বস্তি দেওয়ার জন্য টিসিবির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে বিক্রি অব্যাহত রাখা এবং ডিলারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধির প্রত্যাশা করি। সামাজিক নিরাপত্তার বরাদ্দে উপকারপ্রাপ্তির সংখ্যা ও ভাতা বৃদ্ধিসহ উপকারভোগী যাতে সরাসরি ভাতা পেতে পারেন, তার জন্য আরও বেশি ডিজিটালাইজেশনের নির্দেশনা থাকবে। তাই বাজেটে গ্রামীণ অর্থনীতিতে আরও বেশি চাঙা করার লক্ষ্যে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসায়ে পুনঃঅর্থায়ন, সল্পসুদে ঋণসহ নানাবিধ প্রণোদনা কর্মসূচি চলমান থাকা এবং আরও বেশি সহায়তা করলে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

গ্রামীণ অর্থনীতির মস্তবড় স্তম্ভ আমাদের কৃষি খাত–যেটাকে অব্যাহত সাবসিডি দিয়ে  সরকার খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের মতো অসংখ্য প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সুবিধা আমাদের অর্থনীতিতে অনবরত ধনাত্মক প্রভাব ফেলছে। কৃষি খাতে সাবসিডিসহ কৃষি খাত সম্প্রসারণে প্রচার-প্রচারণা, প্রণোদনা, প্রোটেকশন, সল্পসুদে কৃষিঋণ, কৃষিপণ্য পরিবহন, কৃষি বাজারজাতকরণে সব ধরনের অন্যায় প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সুষ্ঠু নীতিকৌশল এই বাজেটে বলিষ্টভাবে গুরুত্ব পাবে।  

কৃষি উপকরণ ও কৃষি যন্ত্রিকীরণে সকল যন্ত্রপাতি সহজলভ্য করে কৃষি সম্পর্কিত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির সুস্পষ্ট প্রস্তাবও এই বাজেটে সবিশেষ গুরুত্ব পাবে।  

আগামী বাজেটে অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়ন প্রকল্পগুলো অর্থায়নের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব পাবে। আমি মনে করি, অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এমনভাবে বাছাই করা উচিত, যেগুলোর বাস্তবায়ন প্রায় শতভাগের কাছাকাছি। যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে জনগণ তথা অর্থনীতিতে সঙ্গে সঙ্গে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে এবং প্রকল্পগুলো অধিক কর্মসংস্থানে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।  

এই বাজেটে আরেকটি উল্লেখযোগ্য খাত হলো রাজস্ব আহরণ প্রচেষ্টা এবং এ কথা এখন সবার মুখে মুখে যে, ঘাটতি হ্রাস তথা অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা। আমাদের কর-জিডিপির অনুপাত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অনেক কম। সুতরাং রাজস্ব আয় বাড়ানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এই পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে কৌশলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ঢেলে সাজাতে হবে। যেমন করনীতি, কর ধার্যকরণ, কর আদায়, কর জরিপ ইত্যাদি বিভাগগুলোকে স্বাধীন সত্তার মধ্যে আনতে হবে।  

এনবিআরের অটোমোশন অনেকদিনের এজেন্ডা। কিন্তু ডিজিটালাইজেশনে এনবিআর উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে আছে। এমনকি ইএফডি (ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস)-সহ নানা যন্ত্রপাতি ক্রয়ে এনবিআরের অনীহা এবং দীর্ঘসূত্রিতা অনুসন্ধানপূর্বক তরিত্ব ব্যবস্থা জরুরি। কর-জিডিপি হার বাড়াতে নতুন নতুন করদাতা খুঁজে বের করে করজালে আনার পরামর্শ এবং বাজেট বক্তৃতায় এর সরব পরিস্ফূটন প্রায় অনেক বছর ধরে শুনে আসছি, কিন্তু
বাস্তবিক ক্ষেত্রে এর বাস্তবায়ন ও সুফল আমরা পাচ্ছি না।  

বাজেট বাস্তবায়ন ও বাজেটের আকারের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী এবং জাতীর রাজস্ব বোর্ডকে যথাযথ সহায়তার মাধ্যমে কর্ম ক্ষমতা ও কর্ম পরিধির ব্যাপারে বাস্তবায়নযোগ্য নীতি কৌশল বাজেটে প্রত্যাশা করি। নির্বাচনের বছরে বাজেট হিসেবে এই সরকার অবশ্যই নতুন কোনো ধরনের সস্তা জনপ্রিয়তা, অনুৎপাদনশীল খাত এবং অপচয় মানের কোনো প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করবে না, এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

সর্বশেষ, এই বাজেটের প্রতিটি বরাদ্দে সরকার অনেক সতর্কতা অবলম্বন করবেন, যাতে কোনো বরাদ্দকৃত অর্থ অপচয় না হয়ে উৎপাদনশীল খাতে হয়। দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়তা, পরিবেশ রক্ষায় সচেষ্ট হয় এবং জনকল্যাণ ও জনমূখী ব্যবসায় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির তাগিদ থাকবে। তবে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং–বাজেট বাস্তবায়ন, নচেৎ বাজেটের উদ্দেশ্য ব্যত্যয় হবে।  

প্রশ্ন: অর্থনীতির নির্দেশকগুলো চাপে আছে, এমনটা বলা হচ্ছে। উত্তরণের পথ কেমন হওয়া উচিত?  

অধ্যাপক সেলিম: আমি আগেই বলেছি–কোভিড, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক বাণিজ্য অবরোধ (স্যাংশন) ইত্যাদি কারণে আমাদের বহিঃখাত–আমদানি, রপ্তানি ও রেমিটেন্স সম্পর্কিত সূচকগুলো সরাসরি চাপে বা অস্বস্তিতে পড়েছে। বহিঃখাতকে কেন্দ্র করে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব, ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদিতে প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ না হওয়ায় সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সূচক করোনা মহামারি পূর্ববর্তী অবস্থার মতো স্থিতিবস্থায় নেই। অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহ, কর কাঠামোর গতিশীল পরিবর্তন, যাতে জীবনযাত্রার ব্যয় হ্রাস হয়, ব্যবসা বাণিজ্য তথা শিল্পের উৎপাদন উৎসাহিত হয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি সহায়ক উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সঠিক সময়ে বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা, গতিশীল সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ- যেমন শিল্পের কাঁচামাল আমদানি, ঋণ প্রবৃদ্ধি (মানি সাপ্লাই) ইত্যাদিতে বেশি কঠোরতা না করে সহনশীল ও মধ্যবর্তী কৌশল নেওয়া, অহেতুক চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করা, অনুৎপাদনশীল খাতকে নিরুৎসাহিত করা, শিল্পে উৎপাদন অবিচল রাখার স্বার্থে জ্বালানি সরবরাহ, রপ্তানি ও কৃষি খাতগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া, জনকল্যাণ, সামাজিক নিরাপত্তা ও সল্পমূল্যে পণ্য বিতরণসহ ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায় বাণিজ্যগুলোকে অগ্রাধিকার গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হবে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হলে চাহিদা বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে সরবরাহ বৃদ্ধিতে ব্যবসা বাণিজ্য শিল্পের গতি বৃদ্ধি পাবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর্মসংস্থান অটুট থাকবে এবং বৃদ্ধি পাবে।  

একইভাবে সামষ্টিক অর্থনীতির যে সূচকগুলো চাপে আছে , সেগুলোতে আস্তে আস্তে স্থিতিশীলতা আসবে।  অর্থাৎ অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ–দুই ধরনের নীতি কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে সক্ষম হবে দেশ।  

উল্লেখ্য, সরকার ইতোমধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে বৈশ্বিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ঝুঁকিমুক্ত করতে অনেক কলা কৌশল ও নীতি বাস্তবায়ন করছে এবং পদক্ষেপ চলমান আছে।  

প্রশ্ন: আসন্ন বাজেটে মূল্যস্ফীতি, ডলারের মূল্য ধরে রাখতে কী ধরনের নীতি প্রয়োজন?  

অধ্যাপক সেলিম: আগের প্রশ্নগুলোতে মূল্যস্ফীতির উৎস সম্পর্কে মোটামুটি পর্যালোচনা করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব কারণের জন্য মূল্যস্ফীতি ঘটে থাকে, সে উৎসগুলো চিহ্নিত করে গতিশীল কৌশিল নীতি এবং হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতিকে হ্রাস এবং নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। উল্লেখ্য, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তথা মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রা ব্যয় হ্রাসকরণ আগামী বাজেটের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। মূল্যস্ফীতি হ্রাস ও নিয়ন্ত্রণের অনেকগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ব্যবস্থা, নীতি ও কৌশল প্রয়োগ করা যায়। তার একটি সংক্ষিপ্ত সুপারিশ বিবেচনাযোগ্য হতে পারে। যেমন: খাদ্য, নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য এবং এসব উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট কাঁচামালে শুল্ক হ্রাস এবং অহেতুক অশুল্ক বাধা দূরীকরণ, নিরবচ্ছিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে জড়িত ব্যবসা শিল্পগুলোকে উৎপাদনে সহায়তা, অকরযোগ্য আয়সীমা বৃদ্ধি, কৃষিপণ্যের নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনে সাবসিডি, কৃষি উপকরণ, কৃষি যন্ত্রপাতি, কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণের অন্যায় প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ, মার্কেটিং ইন্টেলিজেন্সকে শক্তিশালী করে পণ্য মূল্য মনিটরিং, মূল্য অনিয়মে কঠোর ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত খাদ্য মজুতের ব্যবস্থা, খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ তথা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ব্যবস্থাদির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন দিক নির্দেশনাসহ যথাসময়ে গুরুত্বারোপ ও তথ্যাদি প্রকাশ করা, ডলারের বিনিময় মূল্য স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রবাসী আয় প্রেরণে দলিলপত্র সহজীকরণ, প্রণোদনা বৃদ্ধির ব্যবস্থা, স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণে প্রবাসী আয় বাড়বে, জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি না করে কীভাবে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি দেওয়া যায় সে ব্যবস্থা করা, অর্থ সরবরাহে মনিটরিং বাড়ানো, দীর্ঘদিন অর্থ আটকে থাকবে এমন সরকারি ব্যয় পরিহার করা।

প্রশ্ন: এডিপির বাস্তবায়ন ও নিরীক্ষা যেভাবে হচ্ছে, একজন এফসিএ হিসেবে আপনার বিশ্লেষণ কী?  

অধ্যাপক সেলিম: চলতি বছরে এডিপি নানা অস্থির কারণে বিশেষ করে পণ্য সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে এবং বৈশ্বিক টালমাটাল পরিস্থিতির জন্য সরবরাহ বিঘ্ন ঘটায় হয়তো সন্তোষজনক হচ্ছে না। কিন্তু আমরা যদি দীর্ঘ ধারাবাহিক এডিপি বাস্তবায়নের হার দেখি, সেটা সন্তোষজনক নয়। আবার বাস্তবায়ন হার মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে দেখলে বাস্তবায়নে হারে অসমানুপাতিক হার লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত প্রথম ছয় মাসে দেখা যায়
২০-২৫ শতাংশ ও পরের তিন মাসে এবং অর্থবছরের শেষ মাসে প্রচুর প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। এতে করে কাজের গুনগত মান, অর্থের অপচয়, প্রকল্পের উদ্দেশ্য সব ক্ষেত্রে ঋণাত্বক প্রভাব পড়ে।  একজন প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে আমি মনে করি যে, প্রকল্প বাস্তবায়ন, মনিটরিং এবং নীরিক্ষায় যথেষ্ট সক্ষমতার এবং জড়িত লোকজনের আন্তরিকতার অভাব সুস্পষ্ট। কেননা প্রকল্প পরিকল্পনা, ডিজাইন, বাস্তবায়ন এক কথায় কাগজে কলমে সুন্দরভাবে সাজানো থাকলেও নানাবিধ অন্যায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে প্রায় প্রতিটি প্রকল্প ব্যয়ধিক্য ও বাস্তবায়নে সময়োত্তীর্ণ  হওয়াটা স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। অথচ জাইকার প্রকল্পে উল্টো চিত্র দেখা যায়। সেখানে প্রাক্কলিত ব্যয় থেকে অনেক ক্ষেত্রে কম ব্যয় এবং বাস্তবায়ন সময়ের আগেই সম্পন্ন হয়।  আমার মতে, মনিটরিং এবং নিরীক্ষা–এই দুটো বিভাগ যাতে স্বাধীনভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে পরীক্ষা, নীরিক্ষা এবং অনুসন্ধান করে বিঘ্নিত ব্যবস্থার সুপারিশ করার ক্ষমতাসহ প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নানাবিধ কর্মকৌশল নিতে হবে।

news24bd.tv/আইএএম