মানিকগঞ্জ ডিসির অপসারণে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিল ছাত্রলীগ

সংগৃহীত ছবি

মানিকগঞ্জ ডিসির অপসারণে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিল ছাত্রলীগ

অনলাইন ডেস্ক

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অপসারণে দাবি জানিয়ে ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে (আলটিমেটাম) দিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ। জেলায় রাষ্ট্রমালিকানাধীন ওষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের জন্য জমি অধিগ্রহণে ‘কারসাজি’র চেষ্টা আটকে দেওয়ায় জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নিয়েছে ছাত্রলীগ। অপসারণ করা না হলে ডিসির কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুমকি দেন ছাত্রলীগের নেতারা।

রোববার (২৯ মে) দুপুরে জেলা শহরে আয়োজিত এক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই হুমকি দেন।

শহরে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশে জেলাবাসীর ব্যানারে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদরের মেঘশিমুল এলাকায় রাষ্ট্রমালিকানাধীন এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) জন্য জমি অধিগ্রহণের নামে কারসাজির চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। কারখানার জন্য সাড়ে ৩১ একর জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে কয়েক গুণ বেশি দামে অধিগ্রহণের চেষ্টা চলছিল। এতে সরকারের কমপক্ষে ৬০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি দিয়েছেন।

এর প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার জেলা শহরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ। ওই কর্মসূচি থেকেই আজকে রোববার জেলা প্রশাসকের অপসারণের দাবিতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসকের অপসারণের দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বেলা একটার দিকে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সদর উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসরাফিল হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুদেব কুমার সাহা, মানিকগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আরশেদ আলী, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক খান, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাত কোরাইশী ওরফে সুমন, সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলাম প্রমুখ।

সমাবেশে জেলা প্রশাসকের উদ্দেশে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাত কোরাইশী ওরফে সুমন বলেন, ‘আপনার নেতৃত্বে ১০ কোটি টাকার মাটি কাটা হয়েছে। আপনারা এই টাকার ভাগ পান। প্রত্যেক ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) সরকারিভাবে সেখান থেকে চাঁদা তোলেন। সব নথি আছে, সব প্রমাণ আছে। আমরা এসব নথিপত্র ও প্রমাণ এক জায়গায় করছি। আগামী ৭২ ঘণ্টার ভেতরে ডিসি প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করব, তালিকা প্রকাশ করব। সেই সঙ্গে কোন উপজেলা থেকে কত মাটি কেটে নিয়েছেন, আমরা সেগুলো প্রমাণসহ আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করব। ’

সিফাত কোরাইশী আরও বলেন, ‘আপনি যদি স্ব-ইচ্ছায় মানিকগঞ্জ থেকে যেতে না চান, আপনার অফিস ঘেরাও কর্মসূচি দেব। মানিকগঞ্জের মানুষের সঙ্গে আপনি ছিনিমিনি খেলতে পারেন না। আমরা আপনাকে এই ছিনিমিনি খেলতে দেব না। এ কথাটি মনে রাখবেন। ’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের প্রশংসা করেন ছাত্রলীগ নেতা কোরাইশী। তিনি বলেন, ‘আমরা শত বছরের বন্ধকতা ঘুচিয়ে একটি মন্ত্রী পেয়েছি, সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রী পেয়েছি। যাঁর নেতৃত্বে মানিকগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আপনি ডিসি, এর আগেও সরকারি কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করেছেন। আপনারা টাকা না পেলে উন্নয়নকাজ করতে দেন না। ’
সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসকের অবসারণের দাবিতে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেন দলীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ই সিদ্ধান্ত দেবে।

news24bd.tv/আইএএম