ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ভয়াবহ পরিণতি

প্রতীকী ছবি

ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ভয়াবহ পরিণতি

 মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে. আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ঋণ ছাড়া শহীদের সব গুনাহই ক্ষমা করে দেওয়া হবে। ’  (মুসলিম, হাদিস : ৪৭৭৭)

অথচ আল্লাহর রাস্তায় শহীদ ব্যক্তির পুরস্কার হলো, জান্নাত। যাবতীয় পাপ থেকে মুক্তি। কিন্তু এত বড় পুণ্যের কাজ করেও ঋণ থেকে অব্যহতি পাওয়ার সুযোগ নেই।

অন্য হাদিসে বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে পাওয়া যায়। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) লোকদের মধ্যে দাঁড়িয়ে তাদের বলেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান সর্বোত্তম আমল। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমাকে অবহিত করুন, আমি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হই, তাহলে কি আল্লাহ তাআলা আমার সব পাপ মার্জনা করবেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হ্যাঁ। যদি তুমি ধৈর্যসহকারে সওয়াবের আশায় সামনে অগ্রসর হয়ে পিছু না হটে যুদ্ধ করো, তবে ঋণ ব্যতীত।

জিবরাঈল (আ.) আমাকে এরূপ বলেছেন। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ৩১৫৭)

ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি কিয়ামতের দিন তার ঋণ পরিশোধ করা ছাড়া এক পাও নড়তে পারবে না। সেদিন তার কাছে ঋণ পরিশোধ করার জন্য টাকা-পয়সা, দিনার-দিরহাম কিছুই থাকবে না। সেদিন তাকে তার নেক-আমল দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যদি নেক আমল না থাকে, তাহলে পাওনাদারের পাপের বোঝা নিজের মাথায় নিতে হবে। অথচ সেদিনের একেকটি নেকির সামনে গোটা পৃথিবীর সমস্ত সম্পদেরও কোনো মূল্য থাকবে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেউ ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা গেলে (কিয়ামতের দিন) তার ঋণ পরিশোধ করার জন্য কোনো দিনার বা দিরহাম (টাকা-পয়সা) থাকবে না; বরং পাপ ও নেকি অবশিষ্ট থাকবে। ’ (মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস : ২২২২)

এ জন্য হয়তো নবীজি (সা.) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জানাজা পড়তেন না। অর্থাৎ কেউ ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা না রেখে মারা গেলে তিনি তার জানাজায় পর্যন্ত অংশগ্রহণ করতেন না। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে যখন কোনো ঋণী ব্যক্তির জানাজা উপস্থিত করা হতো তখন তিনি জিজ্ঞেস করতেন, সে তার ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত সম্পদ রেখে গেছে কি? যদি তাঁকে বলা হতো যে সে তার ঋণ পরিশোধের মতো সম্পদ রেখে গেছে, তখন তার জানাজার সালাত আদায় করতেন। নতুবা বলতেন, তোমাদের সাথির জানাজা আদায় করে নাও। পরবর্তী সময়ে যখন আল্লাহ তাঁর বিজয়ের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন, তখন তিনি বললেন, আমি মুমিনদের জন্য তাদের নিজের চেয়েও অধিক নিকটবর্তী। তাই কোনো মুমিন ঋণ রেখে মারা গেলে সে ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব আমার। আর যে ব্যক্তি সম্পদ রেখে যায়, সে সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের জন্য। (বুখারি, হাদিস : ২২৯৮)

কারণ ইচ্ছাকৃত ঋণ রেখে মারা যাওয়া এতটাই বিপজ্জনক কাজ যে এর জন্য মানুষের জান্নাতে যাওয়া আটকে যায়। এ ব্যাপারে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তির রুহ ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তার ঋণের সঙ্গে বন্ধক অবস্থায় থাকে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১০৭৮)

হয়তো আল্লাহর এই আইনের প্রতি সম্মান জানিয়ে নবীজি (সা.) ঋণগ্রস্তের জানাজায় অংশগ্রহণ করতেন না; কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন তাঁর সচ্ছলতা আসে, তখন তিনি তাঁর নিজের পক্ষ থেকে ঋণগ্রস্ত মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ করে তার জানাজায় অংশগ্রহণ করতেন। তাই আমাদের উচিত, একান্ত বিপদে না পড়লে ঋণ না নেওয়া, যদি নিতেই হয়, তা পরিশোধের আপ্রাণ চেষ্টা করা। কারণ কোনো ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করলে, আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন।

কিন্তু কেউ যদি শুরু থেকেই তা খেলাপি করার মনস্থির করে, তবে আল্লাহ তাকে এমন এমন বিপদ দিয়ে দেন, সে আর তা পরিশোধ করতে পারে না। তার ব্যবসা-বাণিজ্য বা সম্পদ থেকে বরকত উঠে যায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের সম্পদ (ধার) নেয় পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে, আল্লাহ তাআলা তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে তা নেয় বিনষ্ট করার নিয়তে, আল্লাহ তাআলা তাকে ধ্বংস করেন। (বুখারি, হাদিস : ২৩৮৭)

মহান আল্লাহ সবাইকে বোঝার ও সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন

এই রকম আরও টপিক