'জ্বর হলে দ্রুত এনএস-১ পরীক্ষা করান'

বিএসএমএমইউতে ডেঙ্গু নিয়ে সেমিনার

'জ্বর হলে দ্রুত এনএস-১ পরীক্ষা করান'

অনলাইন ডেস্ক

ডেঙ্গুর পরিবর্তনশীল ধরণের উপসর্গ নিয়ে (চেঞ্জিং প্যাটার্ন অব ডেঙ্গু সিনড্রোম) নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বিশেষ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (৩ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে সেমিনারের আয়োজন করে ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগ। সেমিনারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দ রোগ প্রতিরোধে এডিস মশার নিধন, ডেঙ্গুজ্বর চিকিৎসার ক্ষেত্রে গাইডলাইন অনুসরণের পাশাপাশি রোগ ও রোগীর অবস্থাভেদে চিকিৎসার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশে ডেঙ্গু চিকিৎসার জাতীয় নীতিমালার প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশররফ হোসেন।

সেমিনারে প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটু মিয়া, অধ্যাপক ডা. এমএ জলিল চৌধুরী, বিএসএমএমইউর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও ডেঙ্গু গবেষক অধ্যাপক ড. কবিরুল বাসার।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বী চৌধুরী। সেমিনার শেষে কেবিন ব্লকের সাধারণ জরুরি বিভাগে ডেঙ্গু কর্নারের শুভ উদ্বোধন করা হয়।

সেমিনারে বলা হয়, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রথম প্রাদুর্ভাব শুরু হয় ২০০০ সালে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুর সাধারণ উপসর্গ ছিল জ্বর, কাশি, র‍্যাশ হওয়া, মাথা ব্যথা হওয়া ইত্যাদি। কিন্তু ২০২১ সালের পর ডেঙ্গুর উপসর্গ পরিবর্তন হয়। তখন ডেঙ্গুতে নতুন উপসর্গ পেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানায় পরিবর্তন হয়। এটি এখনো চলমান রয়েছে। ২০২২ সালে সর্বমোট আক্রান্ত হন ৬১,৭৬৩ জন এবং মারা যায় ২৮১ জন যা অতীতের তুলনায় সর্বাধিক।

২০২৩ সালে ২ জুন পর্যন্ত আক্রান্ত ১৭৯৩ জন এবং মারা যান ১৩ জন। ২০২৩ সালে জানুয়ারিতে ৫৫৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন ও মে-তে ৭৮৫ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।

বক্তারা বলেন, সাধারণত দেশে জুন মাস থেকেই ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। কিন্তু এবার মে মাসেই সর্বাধিক ডেঙ্গু রোগী সারাদেশে শনাক্ত হয়। এজন্য এ বছর বাড়তি সতর্কতা জরুরি। জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জ্বর হলেই প্রথম দিনেই ডেঙ্গু পরীক্ষা এনএস ওয়ান পরীক্ষা করাতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়লে পর্যাপ্ত পানি জাতীয় খাবার এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। সেইসাথে অযাচিত এন্টিবায়োটিক সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।

এসময়ে অ্যাসপিরিন জাতীয় ও ব্যথার ওষুধ বন্ধ রাখতে হবে। বমি, পাতলা পায়খানা, পেট ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, শরীরে কোথাও রক্তপাত হলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্লাটিলেট অথবা রক্ত দেয়ার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে চিকিৎসক এর সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রক্ত দেয়ার প্রয়োজন নেই। ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্রতিরোধই উত্তম। সেজন্যে মশারী ব্যবহার, বাচ্চাদের ফুল হাতা জামা পড়ানো, বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য সাধারণ জনগণের সচেতন হতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, গত বছর ২০২২ সালে প্রায় ৬২ হাজার আক্রান্ত হয়েছিল যাতে মারা গেছেন ২৮১ জন। এ বছর জুন-জুলাই আসার পূর্বেই আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২ হাজার কিন্তু এরই মধ্যে ১৩ জন মারা গেছেন যা উদ্বেগের বিষয়। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে গুরুত্ব দিতে হবে। একটি গান আছে, ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়, সাদা সাদা ফোটা দেখে এডিস মশা চেনা যায়। এই মশা চিনতে হবে। এই মশাই ডেঙ্গুর জন্য দায়ী।

তিনি বলেন, নতুন বিল্ডিং তৈরি করার সময়, উন্নয়নমূলক কাজ করার সময় এবং বৃষ্টির পরে ছাদে পানি জমে থাকে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে দায়ীদের জরিমানা করা যেতে পারে। বাড়ির পেছন পরিষ্কার রাখতে হবে। খালি পাত্র থাকলে তা উল্টো করে রাখতে হবে যাতে করে পাত্রের ভেতরে পানি জমে না যায়। শরীরে ফুল হাতা শার্ট ও পায়ে মোজার ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে। ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তা জানতে জ্বর হলে শুরুতেই এনএস ওয়ান টেস্টটি করে নিতে হবে এবং জ্বর হলেই এসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। ফলমূলসহ পানি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। ডেঙ্গু প্রথমবার হলে মৃত্যু হার কম কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার হলে মৃত্যুহার বেশি। যারা ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন ধরণের রোগে ভুগছেন তাদেরকে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, জ্বর হলে প্রয়োজন ছাড়া অযথা বাড়তি টেস্ট এবং বার বার টেস্ট না দেওয়া হয়। ডেঙ্গু জ্বরের কারণে প্লাটিলেট কমে গেলেই রক্ত দিতে এ হবে এই ধারণা ভুল। আবার রক্ত দেয়া যাবেই না এটাও ঠিক না। রোগীর অবস্থা বুঝে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন রোগীকে কি কি চিকিৎসা দিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. আবুল কালাজ আজাদ বলেন, ডেঙ্গু ও কোভিডে একই ধরণের উপসর্গ দেখা দেয়। উভয় রোগেই জ্বর, সর্দি, কাশির লক্ষণ দেখা যায়। এজন্য জ্বর হলেই ডেঙ্গু ও কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে। বর্তমানে পানিবাহিত রোগ টাইফয়েড আক্রান্ত রোগীও অনেক পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য জ্বর হলেই প্রথম দিনেই এনএস ওয়ান টেস্টটি করাতে হবে। শুরুতে রোগ চিহ্নিত না হলে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।

news24bd.tv/FA