গণরুম বিলুপ্তির দাবিতে জাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

সংগৃহীত ছবি

গণরুম বিলুপ্তির দাবিতে জাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

অনলাইন ডেস্ক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আবাসিক হলগুলোর গণরুম বিলুপ্তি, অছাত্রদের অবিলম্বে হল ত্যাগ এবং গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিতের দাবিতে বুধবার বিকেল থেকে অনশন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন শিক্ষার্থী। তিনি ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়। এবার তার দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে শনিবার (৩ জুন) বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এ দিন সন্ধ্যা ৭টায় বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে থেকে শুরু হয়, যা পরে ছাত্রী হলগুলো প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এসে শেষ হয়।

এরপর শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ের জন্য উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশফার রহমান নবীনের সঞ্চালনায় সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের আসন দিতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রশাসন। ফলে গণরুম ও গেস্টরুমে শিক্ষার্থীরা র‌্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছে। আবাসিক হলগুলোতে আসন সংকট থাকা সত্ত্বেও অছাত্রদের হল থেকে বের করতে পারছে না প্রশাসন।

প্রত্যয় যে দাবী নিয়ে অনশনে, সেই দাবি জাবির শিক্ষার্থীদেরও। কিন্তু এই দাবি ক্ষমতাশীন ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে যাবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা মেনে নিতে গড়িমসি করছে। প্রশাসন ক্ষমতাশীন ছাত্র সংগঠনের লেজুড়বৃত্তি করছে। এ কারণেই মনে হয় তারা অছাত্রদেরকে বের করতে কোনো সাহস পাচ্ছে না। ’
নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী নবীন কিশোর গোস্বামী বলেন, আমাদের গণরুমগুলোতে আচরণ শেখানোর নামে নির্যাতন করা হয়। অথচ তা প্রশাসনের চোখে পড়ে না। ’

নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নূরে তামিম স্রোত বলেন, ‘প্রত্যয়ের অনশনকালীন প্রশাসন তাকে সহযোগিতার বিপরীতে মানসিকভাবে অসুস্থ হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা করেছে। এই দাবি সবার। সে চাইলে পারতো নিজের ব্যবস্থা করে সরে পড়তে। কিন্তু সে তা করেনি, বরং সবার কথা ভেবে তার অনশন চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাও তার দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এখানে অবস্থান করছি। উপাচার্য এসে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত আমরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব। ’

দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সজীব আহমেদ বলেন, ‘আমরা চার মাস ধরে গণরুমে আছি। খাবারের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। এগুলো নিয়ে প্রশাসনের কোনো নজর নেই। আমাদের গণরুমগুলোতে শিক্ষার্থীদের মুরগি বানায়, ঝুলিয়ে রাখে, এমনকি টয়লেটে যেতে হলেও আমাদের ফরমাল ড্রেস পরিধান করতে হয়। এই কালচার বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। ’

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় আমাকে এই আশ্বাস দিয়ে ভর্তি করানো হয়েছিল যে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ আমার সঙ্গে নিয়ে আসা তোশকটিও রাখার জায়গা পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আসে জ্ঞান অর্জন করতে, ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের গড়ে তুলতে, অথচ এখানে এসে তারা শিখছে দাসত্ব। ’

অনশনরত শিক্ষার্থী প্রত্যয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত তিনি অনশন চালিয়ে যাবেন। তিনি কোনো আশ্বাসে অনশন বন্ধ করবেন না। প্রশাসনকে তিনি গত এক বছর ধরে এসব বিষয়ে জানিয়ে আসছেন বলে দাবি করেন।

এদিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিলেও উপাচার্য একটি মিটিংয়ের জন্য ঢাকায় আছেন বলে জানা যায়। তবে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা জানান, মিটিং শেষে তিনি বাসভবনে আসবেন।
news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক