জাবিতে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি, তোপের মুখে উপাচার্য

সংগৃহীত ছবি

জাবিতে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি, তোপের মুখে উপাচার্য

অনলাইন ডেস্ক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গণরুম বিলুপ্তিসহ তিন দফা দাবিতে অনশনকারী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ  কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুধবার (৭ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির এক জুরুরি সভায় এ কমিটি গঠন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেককে আহ্বায়ক করে গঠিত এ কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন মো. মাহতাব-উজ জাহিদ (ডেপুটি রেজিস্ট্রার-আইন), সদস্য হিসেবে রয়েছেন- মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক নিগার সুলতানা।

এ কমিটিকে আগামী ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এদিকে, এ দিন বিকালে এক আলোচনা সভা চলাকালে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আগে জড়িতদের সাময়িক বহিষ্কারের দাবি জানান। এছাড়া, তারা ৭ দিনের পরিবর্তে প্রশাসনকে ১ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন।

এসময় দাবি না মানলে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করার হুঁশিয়ারি দেন তারা। পরে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষুব্ধরা প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।

তবে তখন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার, প্রক্টর ফিরোজ-উল হাসানসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তা ব্যক্তি পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যান।  

এসময় শিক্ষার্থীদের তোপে মুখে পড়তে হয় উপাচার্যকে। পরে শিক্ষার্থীরা 'উপাচার্য পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেছেন'- বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় তারা বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দেন।

এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে অনশনকারী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।

হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শৌমিক বাগচি, ৪৭ ব্যাচের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের মনিকা, ৪৮ ব্যাচের বঙ্গবন্ধু ও তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী সুরসহ ৫ জন আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণরুমের বিলুপ্তি, আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের উচ্ছেদ ও বৈধ শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিতের দাবিতে মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে অনশন করে আসছেন ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিদ্যুৎ চলে গেলে হঠাৎ ওই হলের ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ (সহসম্পাদক), তারেক মীর (সহসম্পাদক), রাব্বির (কার্যকরী সদস্য) নেতৃত্বে গৌতম কুমার দাস (দর্শন, ৪৫), সৌমিক (৪৫ ব্যাচ), সজীব (৪৫), তুষার (৪৫), ফেরদৌস (ফার্মেসি, ৪৫), গোলাম রাব্বী (ইংরেজি ৪৫) নোবেল (বাংলা, ৪৩), মুরসালিন (৪৬), সোহেল (ইংরেজি, ৪৬), তানভীর (৪৬), রায়হান (৪৬), নাফিসসহ (৪৬) অজ্ঞাত আরো কয়েকজন অনশনকারী প্রত্যয় ও তার সাথে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। তখন বাঁধা দিতে গেলে সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচীকেও মারধর করেন তারা। এছাড়া মাশিয়াত সৃষ্টি, মনিকা নকরেক এবং শারমিন সুরসহ কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করা হয়। '

হামলায় জড়িতদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত।

এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে গতকাল রাত বারোটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এসময়, আন্দোলনকারীরা ৫ দফা দাবি ঘোষণা করেন।

দাবিগুলো হলো- রাতের মধ্যে মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে অবৈধ ছাত্রদেরকে বের করা, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে উপাচার্যকে বাদী হয়ে মামলা করা, প্রক্টর এবং হল প্রাধ্যক্ষকে অব্যাহতি দেওয়া, গণরুম বিলুপ্ত করা, বৈধ শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা।

পরে রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দাবি বাস্তবায়নের বিষয়ে বিক্ষুব্ধদের আশ্বস্ত করলে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন তারা।

মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাব্বির আলম গণমাধ্যমকে বলেন, হামলার ঘটনাটি তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ১ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের বহিষ্কার করতে হবে বলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। এতো কম সময়ে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।  

news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক