ডলার সংকটে আটকা পড়েছে ফার্নেস অয়েল আমদানি। ঋণপত্র খুলতে পারছে না বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো (আইপিপি)। একই অবস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনেরও (বিপিসি)। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চাহিদা অনুযায়ী ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে পারছে না।
অপরদিকে আমদানি করতে না পারায় বেসরকারি মালিকরাও ফার্নেস অয়েলের জন্য বিপিসির সঙ্গে যোগযোগ করছে। বিপিসি বলছে, হঠাৎ ফার্নেস অয়েলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তাদের মজুত ফুরিয়ে আসছে। তাদের হাতে এই মুহূর্তে ৭ জুন পর্যন্ত ২৯ হাজার ৯৮০ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল মজুত আছে।
দেশে এই মুহূর্তে ফার্নেস অয়েল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে কমপক্ষে ৬ হাজার মেগাওয়াট।
চলমান এই সংকটের কারণে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক প্রায় সব বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রয়েছে। বিপিসি বলছে, এ অবস্থায় ১০ দিন পর কমপক্ষে ৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাবে। এতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও দ্বিগুণ বাড়বে।
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা বলেছেন, পিডিবির কাছে তাদের বিদ্যুৎ বিক্রির বকেয়া বিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। তারা চরম তারল্য সংকটে পড়েছেন। পাশাপাশি আছে ডলার সংকট। জ্বালানির জন্য তাদেরও ভরসা এখন বিপিসি। কিন্তু বিপিসি বলছে, ২৫ জুনের আগে নতুন করে আর তেল আসছে না। শিডিউল অনুযায়ী ২০ জুন ফার্নেস অয়েলবাহী জাহাজ চট্টগ্রামে আসার কথা রয়েছে।
বিপিসি জানিয়েছে, এতদিন তারা শুধু সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য পিডিবির কাছে ফার্নেস ওয়েল বিক্রি করত। বেসরকারি মালিকরা নিজেরা ফার্নেস অয়েল আমদানি করতেন। কিন্তু চলমান ডলার সংকটে আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। ২০ জুন জাহাজ এলেও সবকিছু ঠিকঠাক করে বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছাতে আরও ৪-৫ দিন লাগবে।
বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) সাবেক সভাপতি ইমরান করিম বলেন, ফার্নেস অয়েলের মজুত কমে আসার বিষয়টি সত্য। এ মুহূর্তে তাদের চরম তারল্য সংকট রয়েছে। ফার্নেস অয়েল আমদানি করার মতো সামর্থ্য নেই অধিকাংশ মালিকের। পিডিবির কাছে বকেয়া ১৮ হাজার কোটি টাকা। পর্যাপ্ত ডলারও নেই। তিনি বলেন, সরকার যদি রেশনিং করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, তাহলে বেসরকারিভাবে আমদানি করা ফার্নেস অয়েলের যে মজুত রয়েছে, তা দিয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত চলবে। আর যদি চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে হয়, তাহলে এই মজুত দিয়ে সর্বোচ্চ ১০-১২ দিন চলবে। বেসরকারি উদ্যোগে নতুন জাহাজ আসার কথা রয়েছে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে।
বিপিসির সূত্র জানিয়েছে, ফার্নেস অয়েল ছাড়াও অন্যান্য ধরনের জ্বালানি আমদানিতে এলসি খোলার সমস্যার কারণে সেগুলোর মজুতও হ্রাস পাচ্ছে। ব্যাংকগুলোয় ডলারের দাম বাজার দরের চেয়ে কম হওয়ায় তারা ঘোষিত দরে বিপিসির জন্য আমদানির এলসি খুলতে অনীহা প্রকাশ করছে। চলমান ডলার সংকটকালে সরকার নির্ধারিত হারে অন্য ব্যাংকগুলো যাতে বিপিসিকে বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে সহায়তা করে, এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তাও চাওয়া হয়েছে।
news24bd/ARH