মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সন্ত্রাসী দল জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি আইন করে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। আজ শনিবার (১০ জুন) বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা ভাস্কর্য শিল্পী রাশা, সংগঠনের সহ-সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সুজন প্রমুখ।  

সংগঠনের উপদেষ্টা ভাস্কর্য শিল্পী রাশা বলেন, ‌‘স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি জামায়াত-শিবিরকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘দেশবাসীর বিবেকের কাছে প্রশ্ন, জামায়াত-শিবির কি সত্যিই ইসলামের চর্চা করে? এরা প্রকৃতপক্ষে আবু জেহেলের অনুসারী অভিশপ্ত গোষ্ঠী। কারণ সাম্প্রদায়িক অপশক্তি জামায়াত-শিবির ইসলাম ধর্মের লেবাস লাগিয়ে প্রতিনিয়ত ইসলাম পরিপন্থী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে যাচ্ছে। এদের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাহাত্তরের সংবিধান অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করেছিলেন। একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তানি অপশক্তি স্বাধীনতাবিরোধীরা পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাহাত্তরের সংবিধানকে কেটে ছিঁড়ে ধ্বংস করে আবার বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল। কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ একা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেনি। একাত্তরে সকল ধর্মের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। সকল ধর্মের মানুষের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। ধর্মনিরপেক্ষ মানে ধর্মহীনতা নয়, সকল ধর্মের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। রাষ্ট্র ও ধর্ম দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। ধর্মকে রাজনীতিতে নিয়ে আসলে সেই ধর্ম কলুষিত হয়। ধর্মকে পুঁজি করে ধর্ম ব্যবসায়ী জামায়াত-শিবির ইসলাম ধর্মকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। ভারত, আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রগুলোর সংবিধানে কোথাও রাষ্ট্র ধর্ম উল্লেখ নেই। এমনকি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইন্দোনেশিয়াতেও রাষ্ট্র ধর্মের কথা উল্লেখ নেই। তাদের সংবিধানেও ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি রয়েছে। রাষ্ট্র সকলকে সমান চোখে দেখবে। এটাই ইসলাম শিক্ষা দেয়। রাষ্ট্র কোনো নির্দিষ্ট ধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে অন্য ধর্মের মানুষদের খাটো করার অধিকার রাখে না। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনি জিয়া  সুকৌশলে সংবিধানে সাম্প্রদায়িক বিষ ঢুকিয়ে মানুষের মগজ ধোলাই করে দিয়েছিল। যার ফলাফল এখনো বাংলাদেশকে ভুগতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর বাহাত্তরের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হলে বাংলাদেশ অনেক আগেই সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত হতো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রণীত বাহাত্তরের সংবিধানের বিরোধিতাকারী জামায়াত-শিবির দেশ ও জাতির শত্রু। অবৈধ সামরিক শাসক খুনি জিয়া কর্তৃক অবৈধভাবে সংশোধিত সংবিধানের পক্ষে যারা কথা বলে তারা প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের দোসর। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা ও গণধর্ষণ জড়িত জামায়াত-শিবিরকে আইন করে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। অন্যথায় দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এরপর জামায়াত-শিবির যেখানেই কর্মসূচি দেবে সেখানেই পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে প্রতিহত করবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। ’ 

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, ‘পেট্রোল বোমায় ঝলসানো বাংলাদেশ, বাতাসে মানুষ পোড়া গন্ধ, মানুষ হত্যার বীভৎস উৎসব বাংলার মানুষ আর দেখতে চায় না। তাই অচিরেই স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর-আলশামসদের সন্ত্রাসী দল জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি আইন করে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। স্বাধীন দেশের পবিত্র মাটি ৩০ লাখ শহীদের রক্তে সিক্ত। স্বাধীনতার দুশমন উগ্র সাম্পদায়িক জঙ্গিবাদী সংগঠন জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি দীর্ঘদিনের। একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানের দোসর  জামায়াত-শিবিরের একমাত্র উদ্দেশ্য ধর্মকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাওয়া ও বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ভূলুণ্ঠিত করা। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন। সেই জামায়াতকে ১০ বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার মাধ্যমে সরকার চরম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ জামাত-শিবির আবার আগুন সন্ত্রাস ও রগ-কাটার রাজনীতি শুরু করবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও প্রায় সোয়া ৪ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে আমরা এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত কখনোই মেনে নেব না। সরকারের নিকট দাবি, অবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি আইন করে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করে এদের সকল জঙ্গিবাদী অর্থের উৎস বন্ধ করতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের তালিকা তৈরি করে এদের সন্তান ও বংশধরদের নাগরিকত্ব বাতিলসহ সকল সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে চাইলে সকল রাজনৈতিক দলকে অবশ্যই বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে মেনে নিয়ে রাজনীতি করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতে হবে। অন্যথায় এদেশে তাদের রাজনীতি করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।  সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের মাস্টারমাইন্ড জামায়াত-শিবির আজও পর্যন্ত বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি। এরা সবসময় মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ পরিপন্থী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। একাত্তরে ৩০ লাখ মানুষকে গণহত্যা ও দুই লাখ নারীকে গণধর্ষণের অপরাধ স্বীকার করে এরা আজও পর্যন্ত জনগণের নিকট ক্ষমা চায়নি। এ দেশে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি জামায়াত-শিবিরকে রাজনীতি করার সুযোগ দিলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। ’

সংগঠনের সহ-সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সুজন বলেন, ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা-এই চার মূলনীতির ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। বাহাত্তরের সংবিধানের ১ম অনুচ্ছেদে এই রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনি জিয়া অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত সংবিধান কেটে ছিঁড়ে ধ্বংস করে দিয়েছিল। খুনি জিয়া অবৈধ শাসনামলে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সামরিক সদস্যদের বিনা বিচারে ফাঁসি দিয়ে লাশ গুম করা হয়েছিল। খুনি জিয়ার মরণোত্তর বিচারের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করে জাতির সামনে অবৈধ সামরিক শাসক জিয়ার মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। ধর্ম ব্যবসায়ী জামায়াত-শিবিরের বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র আবার শুরু হয়েছে। এদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। কারণ জামায়াত-শিবির সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রকৃত শত্রু। এরা বাংলাদেশকে ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এখন দেশের মানুষ অনেক সচেতন। ধর্ম ব্যবসায়ী জামায়াত-শিবিরের প্রকৃত চরিত্র ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। সামনে আরোও হবে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। সেই ইসলাম ধর্মের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য প্রতিনিয়ত জামায়াতের ধর্ম ব্যবসায়ীরা ষড়যন্ত্র করছে। এরা প্রকৃতপক্ষে ইসলামের শত্রু, মানবতার শত্রু। ধর্মীয় সভাগুলোতে জামায়াত-শিবিরের কিছু নামধারী আলেম অন্যধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত উস্কানিমূলক অপপ্রচার চালিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালায়। এরা পবিত্র মসজিদ ও মাদ্রাসাগুলোতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী। এহেন ইসলাম ধর্ম বিরোধী কর্মকাণ্ড কখনোই বরদাশত করবে না মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। ধর্মীয় লেবাশধারী উগ্রবাদীদের শক্ত হাতে দমন করার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী দণ্ডপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে বলে গুজব ছড়িয়ে যারা নাশকতা করে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছিল, সেই মৌলবাদী অপশক্তিরাই সম্প্রতি ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এরা শান্তির ধর্ম ইসলামের শত্রু। এরা কখনোই ইসলাম ধর্মের আদর্শ ধারণ করে না। ধর্মীয় লেবাসে রাষ্ট্র বরোধী ষড়যন্ত্র করাই এদের মূল উদ্দেশ্য। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে এরা জঙ্গিবাদ রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এরা ইসলাম, দেশ ও জাতির শত্রু। একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানের দোসররা এহেন ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড দ্বারা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ধর্মের নামে এরা অপরাজনীতি শুরু করেছে। ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের আবেগকে পুঁজি করে নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্যে হাসিলের চেষ্টা করছে। আমরা লক্ষ করেছি, করোনা সংকটেও জামায়াত-শিবিরের কিছু ধর্মীয় লেবাসধারী ওয়াজ বক্তা দেশে করোনা নেই বলে প্রতিনিয়ত গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল। দেশের মাদ্রাসাগুলোতে যৌন নিপীড়ন বন্ধে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি ধর্ষণের ন্যায় বলাৎকারের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন ধর্মীয় সভায় ওয়াজের নামে গুজব ছড়ানো ও উসকানিমূলক অপপ্রচার বন্ধ করার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দেশের অনেক মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত বাজানো হয় না, জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয় না, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানো হয়না যা দেশের সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সংবিধানবিরোধী এসব কর্মকাণ্ডই ধর্মীয় উগ্রবাদকে আরোও উসকে দিচ্ছে। মাদ্রাসাগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা বাধ্যতামূলক করতে হবে। অন্যথায় দেশপ্রেম ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। ’

news24bd.tv/আইএএম