খুলনা সিটির তিন মেয়র প্রার্থীসহ ৭৫ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত

সংগৃহীত ছবি

খুলনা সিটির তিন মেয়র প্রার্থীসহ ৭৫ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত

খুলনা প্রতিনিধি

বাজেয়াপ্ত হচ্ছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে তিন জন মেয়র প্রার্থীসহ ৭৫ জনের জামানত। ফলাফলে বৈধ ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট না পাওয়ায় এরা জামানত হারাচ্ছেন। এবার নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচ জনের মধ্যে তিন জন, ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৩৬ জনের মধ্যে ৫৭ জন এবং সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থী জামানত হারাচ্ছেন। কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘কোনও প্রার্থীকে জামানত রক্ষা করতে হলে মোট প্রদত্ত বৈধ ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট পেতে হবে। ’

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফলাফল অনুযায়ী এবার নির্বাচনে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৩৬ জন। যার মধ্যে ১ হাজার ৬৫৯ ভোট বাতিল হয়েছে। আর বৈধ ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ৫৬ হাজার ২৭৭।

সবমিলিয়ে ৪৮ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা অনুযায়ী, কোনও প্রার্থীকে জামানত রক্ষা করতে হলে মোট প্রদত্ত বৈধ ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট পেতে হবে। সেই অনুযায়ী কেসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে ৩২ হাজার ২৪২ ভোটের কম পাওয়ায় তিন মেয়র প্রার্থী জামানত হারাচ্ছেন। ফলাফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৫ ভোট পেয়ে পুনরায় নগর পিতা নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের মো. আব্দুল আউয়াল পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৪ ভোট। জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম মধু লাঙল প্রতীকে পেয়েছেন ১৮ হাজার ৭৮ ভোট, জাকের পার্টির এসএম সাব্বির হোসেন গোলাপ ফুল প্রতীকে পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৬ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ১৭ হাজার ২১৮ ভোট। মোট প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট না পাওয়ায় জামানত হারাচ্ছেন জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের মো. শফিকুল ইসলাম মধু, জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকে এসএম সাব্বির হোসেন এবং স্বতন্ত্র টেবিল ঘড়ি প্রতীকে এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক।

সাধারণ ওয়ার্ডে জামানত হারাচ্ছেন- ১ নং ওয়ার্ডে মো. নাসির ও মো. মফিজুর রহমান, ২ নং ওয়ার্ডে মো. বজলুর রহমান, ৩ নং ওয়ার্ডের আবজাল জমাদ্দার ও কাজি ইব্রাহিম মার্শাল, ৪ নং ওয়ার্ডে জামিরুল ইসলাম ও মো. মহির মোল্যা, ৬ নং ওয়ার্ডে মো. শামসুল আলম মিল্টন, ৮ নং ওয়ার্ডে সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন, ৯ নং ওয়ার্ডে কাজী সরয়ার উল আযম, মো. দেলোয়ার হোসেন মাতব্বার ও মো. মাহফুজ পারভেজ মুন্না, ১০ নং ওয়ার্ডে মো. শহিদুল ইসলাম লিটন ও শেখ মনির হোসেন, ১১ নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মুন্সি আব্দুল ওদুদ ও মো. খলিলুর রহমান, ১২ নং ওয়ার্ডে মো. তৌহিদুল ইসলাম ও মো. রবিউল গাজী, ১৪ নং ওয়ার্ডে একেএম মোসফেকুস সালেহীন, খান মো. আলী সিদ্দিকী, মো. আল ফাহাদ হোসেন, মো. নাসির সরদার, শেখ গোলাম কিবরিয়া ও শেখ মাহফুজুর রহমান, ১৫ নং ওয়ার্ডে মাহবুবুর রহমান শামীম, ১৬ নং ওয়ার্ডে মল্লিক আসাদুজ্জামান, মো. শামীম শেখ ও মো. হায়দার বিশ্বাস, ১৭ নং ওয়ার্ডে মো. আব্দুর রশিদ, মো. মোবারক খান সুমন ও মো. শামীম পারভেজ, ১৮ নং ওয়ার্ডে ওয়াহিদ আল মাহফুজ, কে এম রাশেদ আহমেদ, টি এম আরিফ, মো. ইমরান হোসেন ও মো. জাকির হোসেন, ১৯ নং ওয়ার্ডে কাজী মো. নুরুল ইসলাম বেবি, রোজিনা শেখ আয়শা, শাহ মো. জিয়াউর রহমান, শেখ মো. আরিফুজ্জামান ও শেখ বদিউজ্জামান লিটু, ২১ নং ওয়ার্ডের মো. মনিরুল ইসলাম, মো. মোতালেব মিয়া ও মো. মোফাজ্জল হোসেন, ২২ নং ওয়ার্ডে কাজী হাসানুর রশীদ ও শেখ মো. আনোয়ারুল কবির ফিরোজ, ২৫নং ওয়ার্ডে মো. ইমরান হোসেন মিয়া, ২৭ নং ওয়ার্ডে শেখ হাফিজুর রহমান, ২৮ নং ওয়ার্ডের মো. এজাজ শেখ ও মো. নজরুল ইসলাম, ৩০ নং ওয়ার্ডে ফরিদা বেগম, মো. আসাদুজ্জামান, মো. মেহেদী হাসান ও মো. লোকমান হাকিম, ৩১ নং ওয়ার্ডে আব্দুস সালাম, মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও মো. হাছান চাঁন।

এছাড়া সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে জামানত হারাচ্ছেন- ২ নং ওয়ার্ডে পারভীন আক্তার ও মোছা. লীনা আক্তার, ৪ নং ওয়ার্ডে মোসা. মর্জিনা বেগম, ৫নং ওয়ার্ডে তাসলিমা আক্তার ও নাসিমা আক্তার কাজল, ৬নং ওয়ার্ডে মৌসুমী আক্তার বর্ণা, ৭ নং ওয়ার্ডের খাদিজা আক্তার ও লাকী আক্তার, ৮ নং ওয়ার্ডে ঝুমুর বেগম ও সুমা আক্তার, ৯ নং ওয়ার্ডে রেখা খানম, ১০ নং ওয়ার্ডে আঙ্গুয়ারা বেগম, নিয়তি রায়, মোসা. মাসুদা খানম ও মোসা. হোসনেয়ারা।

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ের পর স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পেতে অপেক্ষা করতে হবে ৪ মাস। আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বর্তমান কাউন্সিলররাই নিজ পদে থাকবেন। কাউন্সিলরদের মধ্যে যারা পরাজিত হয়েছেন এবং নির্বাচনে অংশ নেননি এমন ১৮ জন কাউন্সিলরও নিজ পদে থাকবেন ১০ অক্টোবর পর্যন্ত। ১১ অক্টোবর নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরা দায়িত্ব বুঝে নেবেন।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এর প্রথম অধ্যায়ের সিটি করপোরেশনের মেয়াদ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘করপোরেশনের মেয়াদ কমিটি গঠিত হওয়ার পর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ হতে পাঁচ বৎসর হবে’।

কেসিসি থেকে জানা গেছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তালুকদার আবদুল খালেকের নেতৃত্বাধীন কেসিসির বর্তমান পরিষদ দায়িত্বগ্রহণ করে ওই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর। বর্তমান পরিষদের প্রথম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় ১১ অক্টোবর। অর্থাৎ চলতি পরিষদের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ১০ অক্টোবর। মেয়াদ শেষের পরই নতুন পরিষদ দায়িত্বগ্রহণ করবেন।

news24bd.tv/আইএএম