প্রেম-ধর্ষণ-হত্যা তার কাজ!

প্রেম-ধর্ষণ-হত্যাই তার কাজ। প্রতীকী ছবি

প্রেম-ধর্ষণ-হত্যা তার কাজ!

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে টার্গেট করা মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ডেকে আনতো সে। ধর্ষণ শেষে হত্যা করে রাতের আঁধারে লাশ ফেলে রাখতো পার্শ্ববর্তী গ্রামে। পুলিশ যাতে ধরতে না পারে এজন্য লাশের সঙ্গে রেখে দিত অন্যের ছবি ও মোবাইল নম্বর। পুলিশ এই ক্লু’কে ঘিরেই চালাতো তদন্ত কাজ।

খুন করতো শফিক, দায় নিয়ে জেলে যেতো অন্য কেউ। এভাবেই অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাত সে।

অবশেষে গত ১৮ সেপ্টেম্বর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় শফিক।

সে বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের রামচন্দপুর গ্রামের মৃত ওয়াহাব উল্লাহর ছেলে।

পুলিশ ও আদালতে স্বীকারোক্তিতে শফিক জানায় তার একাধিক প্রেমিকা হত্যার রোমহর্ষক কাহিনী।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্বনাথের পাঠাকইন গ্রামের তবারক আলীর বাড়ির রাস্তায় পাওয়া যায় অজ্ঞাত কিশোরীর হাত-বাঁধা ও গলায় ওড়না পেঁচানো লাশ। ওড়নায় মোড়ানো পাওয়া যায় দুটি মোবাইল নম্বর। প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ঘটনার তথ্য উদ্ঘাটনে তদন্তে নেমে টাঙ্গাইল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শফিককে। পরে আদালতে দেওয়া শফিকের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে একে একে বেরিয়ে আসে অজ্ঞাত লাশের রহস্য।

স্বীকারোক্তিতে শফিক জানায়, সম্প্রতি লাশ পাওয়া অজ্ঞাত কিশোরী নাম রুমি আক্তার (১৬)। রুমি টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর গ্রামের আউতপাড়া গ্রামের আতাউর রহমানের মেয়ে। টাঙ্গাইলেই স্ত্রী সোনালি আক্তার হীরাকে নিয়ে বসবাস করছিল শফিক। রুমির সঙ্গে প্রণয়ের পর স্ত্রীকে রেখে তাকে নিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে নিজের গ্রামের বাড়িতে ওঠে শফিক। বাড়ি এসে শফিকের মন-ভোলানো কথায় মিল না পেয়ে বিচলিত হয়ে পড়ে রুমি। এক পর্যায়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে সে। পরে বাড়ির পাশের খালে চুবিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। রুমরি লাশ অন্যত্র ফেলে রাতেই বাড়ি ত্যাগ করে শফিক। পরদিন ফের চলে যায় টাঙ্গাইল। কাছ থেকে এ হত্যাকাণ্ডের পুরো চিত্র দেখলেও প্রতিবাদ জানায়নি তার দুই ভাবি দীপা ও লাভলী বেগম। বরং তারা সহায়তা করেছিল তাকে।

২০১৭ সালের ২২ এপ্রিলের ঘটনা এটি। একই কায়দায় শফিক ও তার এক সহযোগী অজ্ঞাত এক তরুণীকে গ্রামে এনে ধর্ষণ শেষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে। লাশের সঙ্গে অন্যের ছবি রেখে আত্মরক্ষা দেখানোর চেষ্টা করে তারা। এ ঘটনায় অন্যায় না করেও জেল খাটেন রামচন্দ্রপুর গ্রামের ইমরান আহমদ ও পালেরচক গ্রামের লুৎফুর রহমান।

এছাড়াও গত ২৯ জানুয়ারি শফিক ও তার সহযোগীরা পার্শ্ববর্তী ছাতক উপজেলার এক মাদরাসা ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিয়ে এসে টানা আটদিন আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালায়। পরে তাকে অচেতন অবস্থায় সিলেট তালতলা ব্রিজে রেখে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় হওয়া গণধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামিও সে।

বিশ্বনাথ পুলিশ স্টেশনের অফিসার ইনচার্জ জানান, শফিক নারী পিপাসু ও লম্পট প্রকৃতির লোক। সে এ পর্যন্ত আটটি বিয়ে করেছে। বর্তমানে সে চারজন স্ত্রী নিয়ে বসবাস করছে। বিশ্বনাথ থানার গণধর্ষণ মামলার পলাতক আসামি হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকে সবার অগোচরে নিরীহ মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে একের পর এক হত্যা ও ধর্ষণ করতো। হত্যার পর কৌশলে নিরীহ লোকদের ফাঁসিয়ে নিজে আত্মরক্ষার অপচেষ্টা চালিয়ে যেতো।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর