‘মোবাইল ব্যবহারে অটিস্টিকের বৈশিষ্ট্য ত্বরান্বিত হয়’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইপনার ৫ম বর্ষ উদযাপন 

‘মোবাইল ব্যবহারে অটিস্টিকের বৈশিষ্ট্য ত্বরান্বিত হয়’

অনলাইন ডেস্ক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিজঅর্ডার এন্ড অটিজম (ইপনা) প্রতিষ্ঠার ৫ম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আজ শনিবার (১৭ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, লেখক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এ বিএম আব্দুল্লাহ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, শিশুরা হলো ফুলের মতো। ফুল বিভিন্ন সময়ে বিকশিত হয়, প্রস্ফূটিত হয়। শিশুরাও নানা সময়ে ফুলের মতো বিকশিত হয়। শিশুর মেধার বিকাশের জন্য তাদের অনুপ্রেরণা দিতে হবে।

তাদের যে কোনো কাজে অনুপ্রেরণা দিতে হবে। অটিজম শিশুদের পর্যবেক্ষণ করে দেখতে তারা কোনো বিষয়ে তাদের আগ্রহ আছে। তাদের সে বিষয়ের দিকে ধাবিত করতে পারলে মেধার বিকাশ নিশ্চিত হবে। অটিস্টিক শিশুরা একেক জন একেক বিষয়ে এক্সপার্ট হয়ে ওঠেন।

তিনি বলেন, অটিজম সম্পর্কে এখনো দেশের মানুষের মধ্যে অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের ব্যবহারের কারণে পাগল বলা হয়। এমনকি ভুল চিকিৎসা করে অনেক শিশুকে অকালে মেরে ফেলা হয়। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুরা বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে খুব দক্ষ হয়ে থাকে। তাই এদেরকে প্রতিবন্ধী হিসেবে চিহ্নিত না করে বিশেষ শিশু বলা উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা গেলে অনেক শিশুর পক্ষে স্বাভাবিক জীবন-যাপন সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইপনা একটি ইতিহাস। ইপনার মতো সম্প্রতি আরও দুটি ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। দেশের প্রথমবারের মতো সফল লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ও ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টও ইতিহাসের অংশ।

তিনি বলেন,  ইপনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সুপরিচিত দানে সহায়ক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক জায়গা থেকে অস্টিটিক শিশুদের নিয়ে কাজ করে চলেছেন। তাঁর সুযোগ্যকন্যা সায়মা ওয়াজেদ অটিজম শিশুদের জন্য সারা বিশ্বে মানবিক পরিবেশ সৃষ্টি এবং এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের মেধার মূলায়নের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য হিসেবে সায়মা ওয়াজেদ অটিজম শিশুদের সুরক্ষা,  প্রশিক্ষণ ও মেধা বিকাশের কাজ করার কারণে সারাবিশ্বে তাকে স্বাগত জানায়।

তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ইপনা ইতিবাচক কাজ করছে। এই কাজকে আরও বেগবান করার জন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য হিসেবে সায়মা ওয়াজেদ এর অনুমতি নিয়ে তাকে ফ্যাকাল্টি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসা সারা দেশে মেডিকেল কলেজের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে। একটি কোর্স রাখতে হবে অটিস্টক শিশুদের নিয়ে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. জাফর ইকবাল বলেন, ছোট্ট শিশুরা সামাজিক রেসপন্স থেকে ইদানিং পিছিয়ে পড়ছে। এর কারণ স্ক্রিন বা মোবাইলের দিকে শিশুর রিসপন্স। অনেক মা বাবা শিশুর হাতে মোবাইল দিয়ে খাবার খায়ানোসহ নানা কাজ করেন। এটি করলে শিশুরা ক্রিন মুখী হয়ে যাবে। শিশুদের বর্তমান এবনর্মালিটির জন্য অনেকাংশে মোবাইল দায়ী। এতে করে শিশুর মেধা বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়।  শিশুর মোবাইল ব্যবহারে অটিস্টিকের বৈশিষ্ট্যকে ত্বরান্বিত করে।

তিনি বলেন, ইপনা’র থিম সং এ শিশুদেরকে ফুলের সাথে তুলনা করা হয়েছে, তারা ফুলের মতোই পবিত্র। আর এসব বিশেষ শিশুদের বিশেষ যত্ন নিলে তারাও সমাজে বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

উল্লেখ্য যে, ২০০৯ সালে অটিজম ও অন্যান্য স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যায় ভুগতে থাকা শিশুদের সেবায় যাত্রা শুরু করে Centre for Neuro development and Autism in Children (CNAC) । এরপর কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়া এবং দেশের সব প্রান্ত থেকে শিশু রোগী ও তাদের অভিভাবকদের প্রত্যাশা পূরণে ২০১৪ সালে প্রকল্প হিসেবে কাজ শুরু করে Institute of Paediatric Neurodisorder and Autism (IPNA)। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও পূর্নাঙ্গ ইনস্টিটিউট হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

news24bd.tvতৌহিদ