‘উচিৎ শিক্ষা দিতে’ নাদিমের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে বাবু

সংগৃহীত ছবি

‘উচিৎ শিক্ষা দিতে’ নাদিমের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে বাবু

অনলাইন ডেস্ক

ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও প্রতিহিংসা থেকে ‘উচিৎ শিক্ষা দিতে’ সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেন সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। সে অনুযায়ী ঘটনার রাতে নিজের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নাদিমের ওপর হামলা করান তিনি। এ সময় খুব কাছ থেকে নির্দেশনাও দিচ্ছিলেন তিনি।

শনিবার (১৭ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাহিনীর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

বাংলানিউজের সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু, তার দুই সহযোগী মনিরুজ্জামান মনির ও জাকিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয় জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এর আগে সকালে সকালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলাকারী এবং বাবুর অপর সহযোগী রেজাউল করিমকে বিকেলে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানায় সংস্থাটি। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সাংবাদিক নাদিম খুনের ঘটনায় জড়িতদের অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও স্থানীয় র‌্যাব-১৪ তৎপরতা শুরু করে।

ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়।

শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার হওয়া রেজাউল সর্বপ্রথম নাদিমের মোটরসাইকেল ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন বলেও জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গ্রেপ্তার বাবুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, তার পরিকল্পনাতেই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। নাদিম সম্প্রতি চেয়ারম্যান বাবুর বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন করায় তিনি ক্ষিপ্ত হন। সংবাদের ঘটনায় প্রথমে নাদিমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি পরে আদালত খারিজ করে দেন। এরপর নাদিম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এতে চেয়ারম্যান বাবু আরও ক্ষিপ্ত হন।

কমান্ডার মঈন বলেন, ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে বাবু তার সন্ত্রাসী গ্রুপের মাধ্যমে সাংবাদিক নাদিমকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। এর অংশ হিসেবে তার সন্ত্রাসী গ্রুপ ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিল। আর বাবু সন্নিকটেই অবস্থান করে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। বাকি তথ্য তদন্ত শেষ হলে পাওয়া যাবে।  

নাদিম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বাবু পঞ্চগড়ে তার দুঃসম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন। সেখান থেকেই দুই সহযোগীসহ বাবু গ্রেপ্তার হন। রেজাউলকেও বগুড়ার এক আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন। বাবু যেখানে আত্মগোপনে ছিলেন, তার সঙ্গে মোবাইল ছিল না। তাই তিনি ভেবেছেন তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব না। প্রাথমিকভাবে দেশত্যাগের বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য দেননি।

এখন পর্যন্ত চেয়ারম্যান বাবুর ছেলেকে শনাক্ত করা যায়নি বলেও জানিয়েছে র‍্যাব। বাবুও তার বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তবে তিনি স্বীকার করেছেন হামলার সময় তার ছেলে ঘটনাস্থলে ছিল। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, হামলার ঘটনায় এখনো দুয়েকজনকে শনাক্ত সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছেন, আমাদের অভিযান চলমান।

এর আগে নিজের কর্তব্যপালন শেষে রাত ১০টার দিকে বাসায় ফিরছিলেন সাংবাদিক নাদিম। ঘটনাস্থলে আসার পর রেজাউল দৌড়ে গিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেন। এরপর মনির, জাকিরসহ অন্য সন্ত্রাসীরা দৌড়ে গিয়ে নাদিমকে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করেন। এ সময় নাদিমের সঙ্গে থাকা তার আরেক সহকর্মীকেও মারধর করা হয়। নাদিমের চিৎকারে এলাকাবাসীরা বাঁচাতে এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এরপর গুরুতর আহত নাদিমকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরেরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

news24bd/ARH