একসময় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতেন জামালপুরের বকশীগঞ্জের বাসিন্দা মাহমুদুল আলম বাবু। জীবিকা নির্বাহ করতেন মুদির দোকান চালিয়ে। জাতীয় পার্টি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। রাতারাতি বনে যান প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা।
১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্রসমাজের বকশীগঞ্জ উপজেলার প্রথম সারির কর্মী ছিলেন বাবু।
২০১১ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। সে বছরই সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অংশ নেন। কিন্তু এলাকায় জনসম্পৃক্ততা না থাকায় ভোটে পাস করেননি। পরে ২০১৪ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। তারপর থেকে বকশীগঞ্জ উপজেলায় নিজের অবস্থান জানান দিতে থাকেন। পরে খুব সহজেই ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়ে হয়ে যান চেয়ারম্যান।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, চেয়ারম্যান বাবু টাকা আর ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষসহ দলীয় নেতাকর্মীদেরও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন। সাংবাদিকদের আগে থেকেই শত্রুর চোখে দেখতেন তিনি। ভোটারদেরও মারধর ও গালিগালাজের নিয়মিত অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ অন্যান্য সরকারি অনুদান মেরে দেওয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পুলিশের সাবেক এক ডিআইজির চাচাতো ভাই হিসেবে সর্বস্তরে শক্তি প্রদর্শনের দুঃসাহস দেখাতে থাকেন। এরপর ধীরে ধীরে হয়ে যান সাধুরপাড়া ইউনিয়নের ‘অঘোষিত ডন’।
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বাবু। দলীয় পদে থাকার সুবাদে ২০২১ সালে ফের নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন না হওয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৯ বছরের সাধারণ সম্পাদক আর দুবারের চেয়ারম্যানের পদ তার বেপরোয়ার ধারাকে আরও শাণিত করে।
অভিযোগ আছে, নারী কেলেঙ্কারিসহ মাদক ও ডলার ব্যবসায় জড়িত বাবু। সাংবাদিক নাদিম তার অপরাধের চিত্র তুলে ধরায় পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করেছে বাবু ও তার ছেলের নেতৃত্বাধীন বাহিনী।
সূত্র বলছে, বাবার প্রভাবে ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাতও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকায় গ্যাং গ্রুপেরও প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। বাবুর চরিত্র তখনই সবার সামনে আসে, যখন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা আক্তার অভিযোগ করা শুরু করেন। সাবিনা আক্তারের অভিযোগ, বাবু চেয়ারম্যান তাকে প্রথমবার তালাক দিয়ে ফের বিয়ে করেন। দ্বিতীয়বার বিয়ের পর সাবিনা মা হন। কিন্তু সন্তান জন্মের পর থেকেই বাবু সাবিনাকে স্ত্রী হিসেবে অস্বীকার করা শুরু করেন।
এদিকে স্ত্রী সাবিনা যখন তার অধিকার ফিরে পেতে চান, তখন গোলাম রাব্বানী নাদিম সাবিনার পক্ষে সংবাদ প্রকাশ করেন। এরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বাবু। বারবার বাবুর বিরুদ্ধে সত্য সংবাদ প্রকাশ করায় নাদিম ও অন্য আরেক সাংবাদিকের নামে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছিলেন বাবু। সেই মামলা খারিজের ৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলার শিকার হন সাংবাদিক নাদিম।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বলেন, শনিবার দুপুরে বকশীগঞ্জ থানায় নিহত নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান আসামি করে মামলা করেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ বলেন, অপরাধীর কোনো ছাড় নেই সে যে-ই হোক, যে দলেরই হোক। নাদিম হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচার চাই।
news24bd/ARH