কে এই জল্লাদ শাহজাহান

সংগৃহীত ছবি

কে এই জল্লাদ শাহজাহান

অনলাইন ডেস্ক

প্রায় ৩২ বছরের সাজা খেটে অবশেষে মুক্তি পেলেন আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান। তবে মুক্তি পেয়েও আনন্দ ছুঁতে পারেনি শাহজাহানের হৃদয়। কারণ আত্মীয় স্বজন বলতে তেমন কেউ নেই তার। বন্দি দশার এক বন্ধুর বাসা হচ্ছে শাহজাহানের আশ্রয়।

রোববার (১৮ জুন) বেলা পৌনে বারোটায় কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। বের হওয়ার আগে জল্লাদ হিসেবে অনেককে ফাঁসি কার্যকরের ট্রেনিং দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি নেতা বাংলাভাই ও এরশাদ শিকদারসহ ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছেন তিনি।  জেল থেকে বেরিয়ে নতুন দুনিয়ায় পদার্পণ তার।

বঙ্গবন্ধুর ৬ খুনি, যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি নেতা বাংলা ভাই ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারের ফাঁসির আগে তাদের সাথে তার শেষ কথোপকথনের কথাও বলেন তিনি।

জল্লাদ শাহজাহানের মোট সাজা হয়েছিল ৪২ বছর। তার মধ্যে তিনি ১০ বছর ৫ মাস ২৮ দিন রেয়াত পেয়েছেন। প্রায় ৩২ বছরের সাজা শেষে তিনি মুক্তি পাচ্ছেন।

কারা সূত্রে জানা গেছে, সাজার মেয়াদ কমানোর বাসনায় কয়েদি থেকে জল্লাদ বনেছিলেন শাহজাহান। একের পর এক অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন চার দেয়ালের বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পেতে। অবশেষে সেই বাসনা সত্যি হচ্ছে।

১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার জন্মস্থান নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামে। তিন বোন এক ভাই। বাবার নাম হাসান আলী ভূঁইয়া। মাতা সব মেহের। পড়াশোনা করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত। ১৯৭৪ সালে তিনি এইচএসসি পাস করেন।

তিনি নরসিংদী জেলার কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি জেলার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

জানা গেছে, একবার তার গ্রামে নারী ঘটিত একটি ঘটনা ঘটে। শাহজাহানের দুই বন্ধুসহ তার নামে অভিযোগ ওঠে। গ্রামে তাকে নিয়ে বিচারে বসা হয়। সেই বিচারে তাকে অপরাধী প্রমাণিত করে তাকে সাজা দেওয়া হয়। এরপর থেকেই তার ক্ষিপ্ততা শুরু। তিনি অপমান সহ্য করতে না পেরে সিদ্ধান্ত নেন অপরাধ জগতে প্রবেশ করে এই অপমানের চরম প্রতিশোধ নেবেন।

ওই ঘটনার পরে তিনি বাংলাদেশের একজন বহুল পরিচিত সন্ত্রাসীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছেন। তার উল্লেখযোগ্য একটি অপারেশন ছিল ১৯৭৯ সালে মাদারীপুর জেলায়। এটাই ছিল তার জীবনে সর্বশেষ অপারেশন। সেখানে অপারেশন শেষ করে মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকায় ফেরার চেষ্টা করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে শাহজাহানের দল মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকায় যাবে।

মানিকগঞ্জে পুলিশ চেক পোস্ট বসালে শাহজাহান তার ওই এলাকার বাহিনীর মাধ্যমে তা জেনে জান। সব জেনেই ওই এলাকা দিয়ে ঢাকায় ফেরার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। মানিকগঞ্জে পুলিশের সাথে গোলাগুলিও হয় কিন্তু পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি। এরপর ঢাকায় পৌঁছে যখন নরসিংদীর উদ্দেশে রওনা হন পথিমধ্যে পুলিশ তাকে আটক করে ফেলে। তার গতিময় জীবনের এখানেই সমাপ্তি এবং এরপর থেকে তার বন্দী জীবন শুরু।

১৯৭৯ সালে আটক হওয়ার আগে ও পরে তার নামে সর্বমোট ৩৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে একটি অস্ত্র মামলা, একটি ডাকাতি মামলা এবং অবশিষ্ট ৩৪টি হত্যা মামলা।

কারা সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ ঘাতক, ৬ জন যুদ্ধাপরাধী, কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামি খুকু মনির, ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানসহ বাংলাদেশের আলোচিত ২৬ জনকে জনের ফাঁসি দিয়েছেন শাহজাহান।

news24bd.tv/কামরুল

এই রকম আরও টপিক