আয় না থাকলেও একজন টিআইএন বা টিন সার্টিফিকেটধারী ব্যক্তিকে আয়কর সনদ নিতে হলে দুই হাজার টাকা ন্যূনতম আয়কর দিতে হবে। ৪৪ ধরনের সেবা নিতে হলে এই আয়কর সনদ জমা দিতে হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এই প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট ঘোষণার পর থেকে এই বিধান নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক।
সূত্র জানায়, সোমবার (১৯ জুন) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তাদের বৈঠক হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিমসহ বোর্ডের শীর্ষ কর্তারা সেখানে উপস্থিত থাকবেন। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, মূলত যারা ৩৮ ধরনের (প্রস্তাবিত আয়কর আইনে আরও ৫টি সেবা যুক্ত করা হয়েছে) সরকারি সেবা নেবেন, তাদের কর শনাক্তকরণ নম্বরের (টিআইএন) সঙ্গে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণও জমা দিতে হবে। প্রস্তাবটি পাস হলে যারা এসব সেবা নেওয়ার জন্য আয়কর রিটার্নের প্রমাণ জমা দেবেন, করমুক্ত আয়সীমার নিচে আয় থাকলেও তাদের এই ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে।
যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আয় না থাকলে কর নেওয়া অন্যায়। মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের সাধারণ মানুষ এমনিতেই চাপে রয়েছে। আয়কর নিয়ে ভীতি রয়েছে। এরমধ্যে ন্যূনতম কর দুই হাজার টাকা নেয়া হলে মানুষ রিটার্ন দাখিলে নিরুৎসাহিত হতে পারে।
বিধানের পক্ষে যুক্তি দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজস্ব বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, কাদের ন্যূনতম আয়কর দুই হাজার টাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যারা পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিতে আবেদন করবেন, কিংবা ভবন নির্মাণে অনুমতি নিতে। মাসিক মাত্র ১৬৬ টাকা। এটা তো সবার জন্য নয়। দুই হাজার টাকা দিতে পারবে না? এই বিধানটা কর প্রদানের সংস্কৃতির জন্য করা, দেশের মানুষ এখন এতটাও দরিদ্র নয়।
অন্যদিকে, ন্যূনতম আয়করে পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, কাদের টিআইএন থাকতে হয়, টিআইএন বাধ্যতামূলক কাদের, সেই লিস্টটা যদি সামনে নেন, তাহলে সেখানে দেখবেন টিআইএন বাধ্যতামূলক আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, ট্রেড লাইসেন্সধারীর জন্য, কমিশন এজেন্সির জন্য। টিআইএন বাধ্যতামূলক পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য। সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ি, গাড়ির জন্য। সাধারণ গরিব মানুষের কোনো অসুবিধা হবে না, সাধারণ গরিব মানুষের তো টিআইএন বাধ্যতামূলক নয়।
যদিও এফবিসিসিআইসহ একধিক সংগঠন এই বিধান বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে। আর গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) ন্যূনতম কর আরোপের প্রস্তাবকে বৈষম্যমূলক বলে জানিয়েছে।
বাজেটোত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, সরকারি সেবা নিতে গেলে যদি কারও করযোগ্য আয় নাও থাকে, তবু তাকে দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। যার করযোগ্য আয় নেই, তার ওপরে এটা চাপিয়ে দেওয়া একটি বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত। এই নিয়ম তুলে দেওয়া হোক।
এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে টিনধারীদের টিন দেওয়ার সমপরিমাণ আয় না থাকলেও তাদের দুই হাজার টাকা কর আরোপ বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
রোববার (১৮ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।