স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিককে হত্যা, স্বামীসহ দুইজনের যাবজ্জীবন 

স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিককে হত্যা, স্বামীসহ দুইজনের যাবজ্জীবন 

রাজবাড়ী প্রতিনিধি:

স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্কের জের ধরে শাকিল মৃধা (২৫) নামে এক যুবককে হত্যা মামলায় দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন রাজবাড়ী আদালত। সেই সাথে প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ও করা হয়েছে।  

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুর ২টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ মোছা. জাকিয়া পারভীন এ রায় ঘোষণা করেন। শাকিল মৃধা বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর গ্রামের আফজাল মৃধার ছেলে।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার অভয়নগর গ্রামের আক্কাস শেখের ছেলে শিপন শেখ (৩০) ও ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর গ্রামের মৃত আকমল শেখের ছেলে বক্কর শেখ (৩০)।

আদালত সূত্রে জানা যায়, শাকিল মৃধা ও বক্করের বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর গ্রামে। একই গ্রামে বাড়ি হওয়াতে বক্করের স্ত্রীর সঙ্গে শাকিলের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি টের পেয়ে বক্কর তার আত্মীয় শিপনকে সঙ্গে নিয়ে শাকিলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

 

২০১৮ সালের ২৭ আগস্ট বিকেলে বক্কর শাকিলকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে তাকে দিয়ে একটি মোটরসাইকেল ভাড়া করায়। তারা তিনজন মিলে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে বক্কর ও শিপন একটি দোকান থেকে আমের জুস কেনে। কৌশলে তারা দুজন শাকিলের জুসের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়।  

এক পর্যায়ে রাত ১১ টার দিকে তারা তিনজন মোটরসাইকেল নিয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নের চরপোটরা গ্রামে বেড়িবাঁধে আসে। সেখানে এসে শাকিলের ঘুম ঘুম ভাব আসে। সে সময় বক্কর ও শিপন গামছা দিয়ে শাকিলের মুখ চেপে ধরে। শাকিল আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে ধস্তাধস্তিতে তারা তিনজনই বেড়িবাঁধের নিচে বিলের ডোবা পানির মধ্যে পড়ে যায়। সে সময় শিপন ও বক্কর শাকিলকে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে লাশ কলমিলতা ও পাটকাঠি দিয়ে ঢেকে মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায়। পরে তারা মোটরসাইকেলটি রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল এলাকায় নদীতে ফেলে দেয়।

পরদিন ২৮ আগস্ট সকাল ৭ টার দিকে স্থানীয়রা শাকিলের মরদেহটি দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে অজ্ঞাত হিসেবে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করে। এ ঘটনায় ওই দিনই (২৮ আগস্ট) বালিয়াকান্দি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূর মোহাম্মদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে পেনাল কোড ১৮৬০ এর ২০১/৩৪/৩০২ ধারায় বালিয়াকান্দি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।  

মমলাটির তদন্ত নেমে বালিয়াকান্দি থানার এসআই কায়সার হামিদ সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বক্কর ও শিপনকে গ্রেপ্তার করে।  

এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা শাকিলকে হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে তারা বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। এরপর শাকিলের ভাড়া করা মোটরসাইকেলটিও নদী থেকে উদ্ধারের পর জব্দ করা হয়।  

২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। দীর্ঘ সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ শেষে বক্কার ও শিপনের  বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ বিচারক রাজবাড়ীর জেলা ও দায়রা জজ আসামিদের উপস্থিতিতে উক্ত রায় ঘোষণা করেন।

রাজবাড়ী জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) উজির আলী শেখ জানান, বক্কার ও শিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত তাদের দু'জনকে পেনালকোড ১৮৬০ এর ৩০২/২০১/৩৪ ধারা অধীনে দণ্ডনীয় অপরাধের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে ৩০২/৩৪ ধারার অপরাধের জন্য দুজনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাভোগের আদেশ দেন।  

একইসঙ্গে ২০১ ধারার অপরাধের জন্য প্রত্যেককে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাভোগের আদেশ দেন। এ রায়ে বাদীপক্ষ সন্তুষ্ট।

news24bd.tv/কামরুল