কোরআনে বর্ণিত প্রশান্ত হৃদয়ের পাঁচ পুরস্কার

প্রতীকী ছবি

কোরআনে বর্ণিত প্রশান্ত হৃদয়ের পাঁচ পুরস্কার

 মুফতি ইবরাহিম সুলতান

‘সাকিনা’ শব্দটি  আরবি। যার অর্থ, একটি পবিত্র অনুভূতির নাম, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিন বান্দার অস্থির হৃদয়ে অবতীর্ণ হয় এবং তার দেহ-মনে প্রশান্তির আবেশ ছড়িয়ে দেয়। হাফেজ ইবনুল কাইয়িম (রহ.) সাকিনার সংজ্ঞায় বলেন, ‘সাকিনা হলো এক ধরনের প্রশান্তি, গাম্ভীর্যতা ও স্থিরতা, যা আল্লাহ তাঁর বান্দার হৃদয়ে অবতীর্ণ করেন যখন সে ভয়ে-উৎকণ্ঠায় ভীষণ অস্থির থাকে। ফলে তার ওপর আপতিত পরিস্থিতে সে আর বিচলিত হয় না।

উপরন্তু তার ঈমান, মানসিক শক্তি ও দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়। ’ (মাদারিজুস সালেকিন : ২/৪৭১)

সাকিনা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিন বান্দার প্রতি প্রদত্ত এক বড় নিয়ামত। তাই মুমিনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাকিনার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তা ছাড়া সাকিনা প্রাপ্তিতে রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা।

নিম্নে এর কয়েকটি তুলে ধরা হলো।

১. ঈমান ও বিশ্বাসের শক্তি বৃদ্ধি করে

সাকিনা হলো মুমিন বান্দার বড় সম্পদ। যার অন্তরে প্রশান্তিময় এই নিয়ামত রয়েছে, পৃথিবীতে তার অন্য কিছু না থাকলেও এটাই তার জন্য যথেষ্ট। কারণ এর মাধ্যমে মুমিনের ঈমানি শক্তি বৃদ্ধি পায়।

যেমন: হুনায়নের যুদ্ধের সংকটকালে যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে অল্প কয়েকজন সাহাবি ছাড়া কেউ ছিল না, তখন আল্লাহ তাদের ওপর সাকিনা নাজিল করে তাদের হৃদয় প্রশান্ত করে দেন। ফলে তাদের জিহাদি আগ্রহ, সাহসিকতা ও তেজস্বিতা বহুগুণ বেড়ে যায়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনিই মুমিনদের অন্তরসমূহে প্রশান্তি নাজিল করেন, যেন তারা তাদের ঈমানের সঙ্গে আরো ঈমান বৃদ্ধি করে নেয়’। (সুরা ফাতহ, আয়াত : ৮) 

২. মৃত্যুর সময় জান্নাতের সুসংবাদ পাবে

যেসব মুমিন বান্দা আল্লাহর পক্ষ থেকে সাকিনা লাভ করবে তারা দুনিয়ায় সুখময় জীবন লাভের পাশাপাশি আখিরাতে চিরসুখের জান্নাতে আশ্রয় লাভ করে। এমনকি মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা তাকে প্রশান্ত হৃদয়ের অধিকারী বলে সম্বোধন করে।

ইরশাদ হয়েছে, হে প্রশান্ত আত্মা, ফিরে চলো তোমার প্রভুর পানে, সন্তুষ্টচিত্তে ও সন্তোষভাজন অবস্থায়। অতঃপর প্রবেশ করো আমার বান্দাদের মধ্যে এবং প্রবেশ করো আমার জান্নাতে’। (সুরা ফাজর, আয়াত : ২৭-৩০)
৩. দ্বিনের পথে অবিচল থাকা সহজ করে

ঈমান ও দ্বিনের পথে অবিচল থাকার জন্য সাকিনা লাভের বিকল্প নেই। কারণ এর মাধ্যমে ধৈর্যশক্তি ও মানসিক দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়। যেমনটি সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন যুদ্ধে লাভ করেছেন। ফলে যুদ্ধে বিজয় লাভের পাশাপাশি তাদের দ্বিনের পথে অবিচল থাকার দৃষ্টান্ত আজও মুমিনদের অনুপ্রাণিত করে। এ প্রসঙ্গে  ইমাম তবারি (রহ.) বলেন, আল্লাহ তাঁর নবী-রাসুল ও মুমিন বান্দাদের ওপরে যে সাকিনা নাজিল করেছেন, সেটা ছিল ধৈর্যশক্তি ও মানসিক দৃঢ়তার জন্য সহায়ক’। (তাফসিরে তবারি : ২২/২২৮)

৪. অন্তর প্রশস্ত ও আলোকিত হয়

সাকিনা মুমিন বান্দার হৃদয়জগৎ আলোকিত করে। ফলে তার অন্তর আল্লাহর বিধি-বিধান পালনে সুপ্রশস্ত হয়। তখন শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর ভয়ে ভীত হয় এবং জীবন হয়ে ওঠে আল্লাহমুখী। আর হৃদয় আলোকিত হওয়ার মূল উপায় হলো তার ঈমানের প্রবৃদ্ধি। ঈমান যত বাড়ে, হৃদয় তত আলোকিত হয়। আর সাকিনা অবতীর্ণ হয়ে বান্দার ঈমানকে জাগিয়ে তোলে এবং অহির আলোয় উদ্ভাসিত করে। আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই মুমিনদের অন্তরসমূহে প্রশান্তি নাজিল করেন, যেন তারা তাদের ঈমানের সঙ্গে আরো ঈমান বৃদ্ধি করে নেয়’। (সুরা ফাতহ, আয়াত : ৪)

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসির আল কাশানি (রহ.) বলেন, ‘সাকিনা হলো হৃদয়ের আলো। আলো লাভকারী এর মাধ্যমে স্বস্তি ও প্রশান্তি অনুভব করে। নিশ্চিত বিশ্বাসের পরে এটা চাক্ষুষ বিশ্বাসের মূল ভিত্তি। যেন এটা শান্তি ও সুখ মিশ্রিত সুনিশ্চিত অনুভূতি’। (মাহাসিনুত তাবিল : ৮/৪৮৫)

৫. সুখময় জীবন উপভোগ করা যায়

মানসিক চাপ জীবনের একটি  বাস্তব বিষয়। মানবজীবনে বিচিত্র ধরনের উত্থান-পতন রয়েছে, রয়েছে অসংলগ্নতা, দুঃখ-কষ্ট, অপ্রাপ্তি, অশান্তি, টেনশন ও বেদনার নিদারুণ কশাঘাত। ফলে ছোট থেকে বড় কমবেশি সবাই মানসিক অস্থিরতা ও বিভিন্ন পেরেশানি ভোগ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে কেউ না কেউ আত্মহত্যার মাধ্যমে প্রাণ হারায়। এসব আত্মহত্যাকারী কোনো না কোনোভাবে মানসিক অশান্তিতে আক্রান্ত থাকে। এ থেকে বোঝা যায়, মানসিক সুস্বাস্থ্য ও প্রশান্তি মানুষের কত বেশি প্রয়োজন। আর এ মানসিক প্রশান্তি লাভের একমাত্র উপায় আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সাকিনা। তবেই আক্রান্ত ব্যক্তি যাবতীয় অশান্তি, দুশ্চিন্তা ও টেনশন থেকে মুক্তি পেতে পারে।

মহান আল্লাহ আমাদের জীবনজুড়ে সাকিনা নাজিল করুন এবং প্রশান্তচিত্তে সন্তোষভাজন হয়ে তাঁর দিকে ফিরে যাওয়ার তাওফিক দান করুন।

এই রকম আরও টপিক