রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করল ওয়াগনার বাহিনী। একই সঙ্গে রেডিও বার্তায় মস্কো অভিযানের কথাও ঘোষণা করেছে কুখ্যাত এই ‘ভাড়াটে খুনিদের দল’। যা আবার ‘পুতিনের নিজস্ব সেনা’ নামেও পরিচিত।
ওয়াগনার প্রধান অলিগার্চ ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের দাবি, তার বাহিনীর উপর ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালাচ্ছে মস্কোর সামরিক বাহিনী।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রিগোজিন নাকি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ‘শেষ দেখে ছাড়বেন’ বলে ঘোষণা করেছেন।
প্রিগোজিনের দাবি, তার বাহিনী এরই মধ্যে দক্ষিণ রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। তবে এখনো তার এই ঘোষণার সত্যতা যাচাই করা যায়নি। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য সাধারণ রুশ নাগরিকদেরও তার বাহিনীর পাশে এসে দাঁড়ানোর ডাক দিয়েছেন ওয়াগনার প্রধান।
যদিও শুরুতে পুতিন সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রিগোজিনের সব অভিযোগ মিথ্যা এবং অবাস্তব। ওয়াগনার গোষ্ঠীর সম্ভাব্য হামলা নিয়ে আপাতত মুখে কুলুপ এঁটেছে ক্রেমলিন। যদিও রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা টাস জানিয়েছে, শনিবার ভোর থেকেই ব্যস্ততা লক্ষ করা গিয়েছে মস্কোজুড়ে। রাস্তায় সাঁজোয়া গাড়ি নামানো হয়েছে। মস্কোর বিভিন্ন সরকারি ভবনের সামনেও বেড়েছে নিরাপত্তা। যদিও প্রিগোজিনের তরফে ‘সশস্ত্র বিদ্রোহ’-এর ঘোষণার পর তদন্তের ডাক দিয়েছে রুশ সরকার।
আরও পড়ুন : ‘ভাড়াটে সেনাবাহিনী’ ওয়াগনার আসলে কারা?
শনিবার রাশিয়ার ভাড়াটে আধাসামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের নেতা অলিগার্চ ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের বিদ্রোহ করার পরে প্রথমবারের মতো ভাষণ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। জাতির উদ্দেশে সংক্ষেপে এক টেলিভিশন ভাষণে পুতিন বলেন, ওয়াগনার গ্রুপ যা করেছে সেটি ‘বেইমানি’ এবং ‘রাশিয়ার পিঠে ছুরি চালানোর’ মতো। তিনি বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় সব নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাশিয়াকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন দেন তিনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পর থেকে কিয়েভ দখলের লড়াইয়ে ওয়াগনার গ্রুপের উপর ভরসা রেখেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মস্কোর নির্দেশে প্রিগোজিনের ব্যক্তিগত বাহিনী ইউক্রেনের বিভিন্ন জায়গায় হত্যালীলা চালিয়েছিল বলেও অভিযোগ তুলেছিল ইউক্রেন।
তবে গত কয়েক মাসে ক্রেমলিন এবং ওয়াগনার গোষ্ঠীর সমীকরণে অনেক বদল এসেছে। প্রকাশ্যে এসেছে ওয়াগনার বাহিনী এবং মস্কোর সামরিক নেতৃত্বের মতপার্থক্য। যুদ্ধক্ষেত্রে তার বাহিনীর সদস্যদের মৃত্যুর জন্য বার বার রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভকে দায়ী করেছেন প্রিগোজিন। এখন আর সেই দ্বন্দ্ব, তর্ক এবং বাগ্বিতণ্ডার জায়গায় সীমাবদ্ধ নেই। আরো একধাপ এগিয়ে তা ‘সশস্ত্র বিদ্রোহের’ রূপ নিয়েছে।
আরও পড়ুন : ‘ভাড়াটে সেনাবাহিনী’র বিষয়ে মুখ খুললো রুশ সেনাবাহিনী
ওয়াগনার গ্রুপ একটি স্বনিয়ন্ত্রিত সামরিক বাহিনী। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে সারা বিশ্ব জুড়ে ধর্ষণ, ডাকাতি, খুন এবং যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে ক্রেমলিনের সঙ্গে ওয়াগনার বাহিনীর সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছে রাশিয়া। তবে পশ্চিমি দুনিয়ার দাবি, রাশিয়ার বিভিন্ন গোপন কাজ উদ্ধারের দায়িত্ব দেওয়া ছিল এই বাহিনীর উপর।
বার বার এ-ও দাবি করা হয়েছে, ওয়াগনার গ্রুপ পুতিনের ব্যক্তিগত বাহিনী, যারা কেবল রাশিয়ার একনায়কের নির্দেশই অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ওয়াগনার বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেন, সিরিয়া, লিবিয়া, সুদান এবং মোজাম্বিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থি বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে অস্ত্র সরবরাহ এবং সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য ওয়াগনার বাহিনীকে কাজে লাগানো হত বলেও অতীতে অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন : ‘ভাড়াটে সেনাবাহিনীর’ বিদ্রোহ দমনে প্রস্তুত চেচেন বাহিনী
প্রিগোজিন ওয়াগনার বাহিনীতে নতুন সদস্য নিয়োগের দায়িত্বে। তিনি পুতিনের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবেও পরিচিত। মনে করা হয় ক্রেমলিনের বিশেষ বিশেষ কাজ দেখাশোনার কাজেও যুক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর কেটারিংয়ের ব্যবসা আছে। সেই কারণে ‘পুতিনের রাঁধুনি’ বলেও পরিচিত প্রিগোজিন।
মনে করা হয়, এর আগে বিশেষ অভিযান চালানোর জন্য এই বাহিনীকে পূর্ব আফ্রিকায় মোতায়েন করে ক্রেমলিন। যদিও এর দায় বরাবরই এড়িয়ে গিয়েছে রাশিয়া। জল্পনা রয়েছে, সিরিয়ার আন্দোলকারীদের দমন করতেও এই ওয়াগনার বাহিনীকে কাজে লাগিয়েছিলেন পুতিন।
আরও পড়ুন : পুতিনকে উৎখাতের হুমকি ‘ভাড়াটে সেনাবাহিনীর’
এই বাহিনীর অস্তিত্ব নিয়ে বহু জল্পনা থাকলেও ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে এই গোষ্ঠীর কার্যকলাপ প্রথম প্রকাশ্যে নজরে আসে। প্রাথমিকভাবে, রাশিয়ার কয়েকশো অভিজ্ঞ সেনা নিয়ে এই বাহিনী গঠিত হয়েছিল। শোনা যায়, ডনবাসের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা ক্রেমলিনের নির্দেশ মানতে অস্বীকার করলে তাদের হত্যা করার জন্য এই বাহিনীকে পাঠানো হয়। তবে ওয়াগনার নয়, এই হত্যাকাণ্ডের দায় চাপে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর উপরই।
ওয়াগনারের প্রতিষ্ঠাতা এবং নেতা দিমিত্রি উডকিন, রাশিয়ার বিশেষ বাহিনী স্পেটসনাজ-এর লেফটেন্যান্ট কর্নেল ছিলেন। শোনা যায়, একসময় ওয়াগনার বাহিনী এতটাই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে যে রুশ সরকারও তাদের অর্থ দিতে অস্বীকার করে। এর পরে পুতিন অলিগার্চকে এই গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণে নিযুক্ত করেন।
News24bd.tv/aa
