যে ১০ কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নত

প্রতীকী ছবি

যে ১০ কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নত

জাওয়াদ তাহের

ভালো কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা এবং শেষে আল্লাহর প্রশংসা করা মুমিনের বৈশিষ্ট। প্রিয় নবী (সা.) যেকোনো ভালো কাজ ‘বিসমিল্লাহ’ দিয়ে করতেন। নিম্নে আমরা জানব, রাসুল (সা.) কোন কোন কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতেন।

১. খাবারের শুরুতে : খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলে আরম্ভ করলে আল্লাহ তাআলা সেই খাবারের বরকত দান করেন।

আলী (রা.) বলেন, খাবারের হক হলো, খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৩১৩)

২. ঘরে প্রবেশের সময় : জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, কোনো লোক তার ঘরে প্রবেশকালে এবং তার আহার গ্রহণকালে মহামহিম আল্লাহকে স্মরণ করলে, শয়তান (তার সাঙ্গপাঙ্গকে) বলে, তোমরা রাত যাপনের স্থান ও রাতের আহার থেকে বঞ্চিত হলে। ... (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১০৬)

৩. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় : যে ব্যক্তি ঘর হতে বের হওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলে বের হবে আল্লাহ তাআলা তাকে অনিষ্টতা থেকে হিফাজত করবেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ঘর থেকে কেউ বাইরে রাওয়ানা হওয়াকালে যদি বলে, উচ্চারণ : বিসমিল্লাহ তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, অলা হাওলা অলা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

অর্থ : আল্লাহ তাআলার নামে, আল্লাহ তাআলার উপরই আমি নির্ভর করলাম, আল্লাহ তাআলার সাহায্য ব্যতীত বিরত থাকা ও মঙ্গল লাভ করার শক্তি কারো নেই, তবে তাকে বলা হয় (আল্লাহ তাআলাই) তোমার জন্য যথেষ্ট, (অনিষ্ট হতে) তুমি হিফাজত অবলম্বন করেছ। আর তার হতে শয়তান দুরে সরে যায়। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪২৬)

৪. গাড়িতে আরোহণের সময় : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, আমরা এক সফরে নবী (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। ... তারপর তিনি বলেন, আল্লাহর নামে আরোহণ কর। (মুসলিম, হাদিস : ৩৯৯৪)

৫. স্ত্রী সঙ্গে মিলিত হওয়ার সময় : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কোনো লোক যখন তার স্ত্রীর সঙ্গে মিলন করে, আর তখন (মিলনের পূর্বে) বলে, উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শাইতানা ওয়া জান্নিবিশ শাইতানা মা রাজাকতানা।
অর্থ : আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং যা আমাদেরকে দান করবে তাকেও শয়তান থেকে দূরে রাখ।

এই দোয়া পড়ার লাভ : তাদেরকে যদি আল্লাহ তাআলা তাদের এই মিলনে সন্তান দেয়ার সিদ্ধান্ত করেন, তবে এ সন্তানের কোনো রকম ক্ষতিই শয়তান করতে পারবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ১০৯২)

৬. টয়লেটে প্রবেশের সময় : টয়লেট বা বাথরুমে অনিষ্ট শয়তান থাকে। এজন্য এদের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নামে পানাহ চাইতে হয়। আলি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জিন ও মানুষের গোপন অঙ্গের মাঝখানের পর্দা হলো পায়খানায় প্রবেশকালে, ‘বিসমিল্লাহ’ বলা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৯৭)

৭. ব্যাথার স্থানে : শরীরের কোথায় ব্যথা অনুভব হলে রাসুল (সা.) আমাদেরকে দোয়া শিখিয়েছেন। উসমান ইবনে আবুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি ইসলাম গ্রহণের পর থেকে তার দেহে অনুভব করছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বিষয়টি জানালে তাঁকে বলেন, ‘তুমি তোমার দেহের ব্যথিত স্থানে হাত রেখে তিনবার ‘বিসমিল্লাহ’ এবং সাতবার ‘আউজু বিইজজাতিল্লাহি অকুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু’ বলো। ’ অর্থ : আল্লাহর ইজ্জত এবং কুদরতের আশ্রয় গ্রহণ করছি, সেই মন্দ থেকে যা আমি পাচ্ছি এবং যা থেকে আমি ভয় করছি। (মুসলিম, হাদিস : ৫৬৩০)

৮. ঘরের দরজা বন্ধ করার সময় : জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘সূর্যাস্তের পরপরই যখন রাত শুরু হয় অথবা বলেছেন, যখন রাতের অন্ধকার নেমে আসে তখন তোমরা তোমাদের শিশুদেরকে ঘরে আটকে রাখবে। কারণ এ সময় শয়তানেরা ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর যখন রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হবে তখন তাদের ছেড়ে দিতে পার আর তুমি তোমার ঘরের দরজা বন্ধ করে দাও এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। তোমার ঘরের বাতি নিভিয়ে দাও এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। তোমার পানি রাখার পাত্রের মুখ ঢেকে রাখ এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। তোমার বাসনপত্র ঢেকে রাখ এবং আল্লাহর নাম স্মরণ কর। সামান্য কিছু হলেও তার ওপর দিয়ে রেখে দাও। ’ (বুখারি, হাদিস : ৩২৮০)

৯. মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সময় : ইবনে ওমার (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) কবরে লাশ রাখার সময় বলতেন, উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি ওয়া বিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ। অর্থ : আল্লাহর নামে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) এর তরিকার উপর রাখা হলো। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩২১৩)

১০. চিঠিপত্রের শুরুতে : কারো কাছে কোনো পত্র বা বার্তা লেখার শুরুতে বিসমিল্লাহ লেখা সুন্নত। প্রিয় নবী (সা.) বিভিন্ন রাজা-বাদশাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে পত্র পাঠিয়েছেন। সেসব পত্র তিনি বিসমিল্লাহ দিয়েই শুরু করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৩৬)