কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশে মাল্টা ছিল একটি বিদেশি ফল। কিছু পাহাড়ি জেলা-উপজেলায় অল্প পরিমানে মাল্টা চাষ হলেও বেশিরভাগই আসতো বিদেশ থেকে। তবে দিন বদলে গেছে। আমদানির পাশাপাশি এখন দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে উন্নত প্রজাতির মাল্টা।
আর মাল্টা চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন পিরোজপুরের ফলচাষিরা।মাত্র কয়েক বছরে বদলে গেছে পিরোজপুর জেলার মাল্টা চাষের চিত্র। পেয়েছে সারাদেশে পরিচিতি। বিদেশি এ ফলের দেশীয় চাহিদা মেটাতে অতীতে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হতো।
তাজা, বিষমুক্ত, সুমিষ্ট লেবু জাতীয় এ ফলটির কদর বিদেশ থেকে আনা কমলা, মাল্টা, আপেল, নাশপতি, ডালিমের সঙ্গে বেশ পাল্লা দিয়েই বেড়ে চলছে। ক্রেতা-দোকানির কাছে আমদানি করা হলদে রঙের চেয়ে এ জেলার সবুজ মাল্টার কদর বেশি। পাঁচ বছর আগেও এ জেলায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফলের মধ্যে পেয়ারা ও আমড়ার নাম ছিল শীর্ষে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকায় এ ফল দুটির ব্যাপক চাহিদা ছিল।
মাত্র তিন বছরে গুটিকয়েক ফলচাষি কৃষি বিভাগের সহায়তা নিয়ে এ জেলার মাল্টা চাষে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছেন। একইসঙ্গে এখানকার মাল্টা তারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির স্বপ্নও দেখছেন। দোআঁশ মাটি মাল্টা চাষে উপযোগী, স্থানীয় কৃষকদের তা জানা ছিল না। নারিকেল, সুপারি, কলা ও আমড়ার ব্যাপক আবাদ করে তারা সন্তুষ্ট ছিলেন। প্রথমে শখের বশে কেউ কেউ বাড়িতে দু'একটি মাল্টার গাছ লাগাতেন। পরে সেসব গাছের ফলন দেখে কেউ কেউ মাল্টা বাগান করতে উৎসাহিত হন। এ ব্যাপারে পরামর্শ নিতে কৃষি বিভাগের দ্বারস্থ হন। বর্তমানে এ জেলায় প্রায় ৭০০ মাল্টা বাগান রয়েছে। গাছে গাছে ঝুলে রয়েছে রসালো মাল্টা, যা দেখতেই অনেক মানুষ ভীড় জমাচ্ছেন রোজ। আগে দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে কিছু কিছু মাল্টা চাষ হলেও তা দেশে ব্যাপকতা পায়নি। পিরোজপুরের মাল্টা চাষিদের বিশ্বাস- এবার দেশের মাল্টাই বাজারে রাজত্ব করবে।
পিরোজপুর জেলা প্রশাসক আবু আহমদ ছিদ্দীকী এ ব্যাপারে জানান, আমাদের এই জেলায় কয়েক বছরের মধ্যে মাল্টা চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। পিরোজপুরকে মাল্টা চাষের মডেল হিসাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। মাল্টা চাষের সার্বিক উন্নয়নে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামীতে পিরোজপুর মাল্টার জেলা হিসাবে দেশে পরিচিতি লাভ করবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আবু হেনা মো. জাফর জানান, মাত্র দুই বছরের মাধ্যেই একটি প্রকল্পের মাধ্যমে মাল্টা চাষকে ব্যাপক জনপ্রিয় করা সম্ভব হয়েছে। ২০০৭-২০০৮ সালে এ জেলায় মাত্র একটি মাল্টা বাগান ছিল। এখন শুধু পিরোজপুর সদরেই ২১২টি মাল্টা বাগান রয়েছে। এছাড়াও ইন্দুরকানীতে ২৬, নেছারাবাদে ১৭০, নাজিরপুরে ১২০, মঠবাড়িয়াতে ৫৪, কাউখালীতে ৫০, ভান্ডারিয়ায় ৩৮টি বাগান রয়েছে। বর্তমানে জেলার ৯০হেক্টর জমি মাল্টা চাষের আওতায় আনা হয়েছে। বর্তমানে নেছারাবাদের বিভিন্ন নার্সারি থেকে মাল্টার চারা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে মাল্টার বাম্পার ফলন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাল্টার পথিকৃৎ হচ্ছেন সদর উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের অমলেশ রায়(৫৪)। তিনি শিক্ষকতার ফাঁকে সময় কাটান নিজের বাগানে। বছর দশেক আগে চার একর জমিতে সৃষ্ট উঁচু এ বাগানে বিভিন্ন ফলের চাষ শুরু করেন। ভারত,পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডের তিনটি জাতের মাল্টার গাছ রয়েছে তার বাগানে। প্রথমে শখের বশে শুরু করলেও অর্থ, শ্রম ও মেধার বিনিময়ে আজ তিনি একজন সফল কৃষক। তিনি আরো জানান, গেল মৌসুমে তিনি এক লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন এবং স্থানীয় বাজারে ১২০-২০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি হয়।
আমাদের দেশে সাধারণত ফাল্গুন মাসে ফুল আসার পর প্রায় পাঁচ মাস অপেক্ষা করতে হয় পরিপক্ক ফল ঘরে তোলার জন্য।