ঘূর্ণিঝড়টির নাম ‘তিতলি’ কেন?

ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’

ঘূর্ণিঝড়টির নাম ‘তিতলি’ কেন?

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

ভারতের উড়িষ্যা ও অন্ধ্র প্রদেশে আঘাত হানা প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়টির নাম ‘তিতলি’ কেন- সেই প্রশ্ন এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক-টুইটারসহ সবখানে। অনেকে আবার প্রশ্ন তুলেছে, মেয়ের নামেই কেন রাখা হয়েছে ঘূর্ণিঝড়টির নাম?

তবে ছেলে-মেয়ে কাউকেই হতাশ না করে ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের গাইডলাইন এবং ঘূর্ণিঝড় নামাবলী তুলে ধরেছেন আবহাওয়াবিদরা।

সাধারণত বিভিন্ন সতর্কতা কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধার্থে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হয়ে থাকে। উত্তর ভারত মহাসাগরীয় এলাকার সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ চূড়ান্ত করে নয়া দিল্লির ইন্ডিয়ান মিটিওরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট (আইএমডি)।



তবে ‘তিতলি’ নামটা পাকিস্তানের দেওয়া। ‘তিতলি’ শব্দটি হিন্দি, যার অর্থ প্রজাপতি। অর্থ সুন্দর হলেও ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’ কিন্তু সুন্দর নয়। উল্টো একটু বেশি মাত্রায় ভয়ঙ্কর।
 

এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে- বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের নাম পাকিস্তান দিলো কেন?‌ এই অধিকারটা পাকিস্তানকে দিয়েছে জাতিসংঘ। নিয়ম অনুযায়ী ৮টি ঝড়ের নাম দেওয়ার অধিকার থাকে এক একটা দেশের। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, মিয়ানমান, ওমান, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড এই ৮টি দেশের জন্য মোট ৬৪টি ঝড়ের নামকরণের দায়িত্ব রয়েছে।
 
এক একটি দেশের ভাগে পড়ে ৮টা করে ঝড়ের নামকরণ। যখন যার ভাগে পড়ে, তখন সেই দেশ নাম দেয়। এবারে পাকিস্তানের ভাগে পড়েছে। সে কারণেই হিন্দি শব্দ ‘তিতলি’ নামে নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গোপসাগরের এই ঘূর্ণিঝড়ের।  

জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা নিয়মিত এই নামকরণের চক্রটিতে নজরদারি চালায়। কাজেই ফাঁকি দেওয়ার কোনো উপায় নেই। আবার কোনো দেশ জোর করে বলতে পারে না সেই এবার নাম দেবে।  

news24bd.tv
তবে ব্যাপারটা এমন না যে, ঘূর্ণিঝড় আসা শুরু হলো আর সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের আবহাওয়াবিদরা নাম নিয়ে আকিকা দিতে বসলেন! আসলে একটা বড়সড় নামের তালিকা করা হয় অনেকগুলো দেশের প্রস্তাবিত নামের ভিত্তিতে। সেই তালিকা থেকেই একের পর এক নাম ব্যবহৃত হতে থাকে।  

অনেক সময় সাগরে এমন কিছু ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়, যার ব্যাপারে আমাদের কানে কোনো সংবাদ পৌঁছানোর আগেই তা দুর্বল হয়ে যায়। তাদেরও নাম থাকে।  

কিন্তু আমরা শুনি শুধু সিডর, আইলা, নার্গিস, মহাসেনের মতো ‘স্টার’ ঘূর্ণিঝড়ের নাম।  

উত্তর ভারত মহাসাগরীয় এলাকার ৮টি দেশের প্রস্তাবিত নাম নিয়ে এই অঞ্চলের অতীত এবং ভবিষৎ ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকাটা এ রকম:

বাংলাদেশ: অনিল; অগ্নি; নিশা; গিরি; হেলেন; চপলা; অক্ষি; ফেনী
ভারত: আগ্নি; আকাশ; বিজলি; জাল; লেহার; মেঘ; সাগর; বায়ু
মালদ্বীপ: হিবারু; গনু; আইলা; কেইলা; মাদী; রোয়ানু; মাকুনু; হিকা
মিয়ানমার: পিয়ার; ইয়েমিন; ফিয়ান; থানে; না-নাউক; কায়ান্ট; দাঈ; কাইরাব
ওমান: বাজ; সিডর; ওয়ার্ড; মুরজান; হুদহুদ; নাডা; লুবান; মাহা
পাকিস্তান: ফানুস; নার্গিস; লায়লা; নিলম; নিলুফার; ভারদা; তিতলি; বুলবুল
শ্রীলঙ্কা: মালা; রেশমি; বন্ধু; মহাসেন; প্রিয়া, আসিরি; গিগাম/গাযা; সোবা
থাইল্যান্ড: মুকডা; খাই-মুক; ফেট; ফাইলন; কোমেন; মোরা; পেথাই; আমপান

এখন একই সঙ্গে এই অঞ্চলে দু’টি ঘূর্ণিঝড় সচল আছে। একটা ইয়েমেনের দিকে ‘লুবান’ এবং ভারত ও বাংলাদেশের দিকে ‘তিতলি’। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূল বিপর্যস্ত হচ্ছে ‘মাইকেল’-এর আস্ফালনে।  

আটলান্টিক মহাসাগরীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার, যা কিনা ওয়ার্ল্ড  মিটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের গাইডলাইন অনুসারে চলে। এই এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা হয় ৬ বছরের জন্য। একবার ছেলে একবার মেয়ের নাম অনুযায়ী। ‘মাইকেল’-এর পর সিরিয়ালে আছে নাদিনে, অস্কার, পেটি ও রাফায়েল।


অরিন▐ NEWS24 

সম্পর্কিত খবর