টানা বৃষ্টিতে সীমাহীন দুর্ভোগ

ঝরছে অবিরাম বৃষ্টি, তবুও জীবিকার তাগিদে বাইরে পা ফেলা

সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত

টানা বৃষ্টিতে সীমাহীন দুর্ভোগ

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

নিম্নচাপের প্রভাবে তিন দিন ধরে টানা বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত। আজও সারাদেশে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। নদীবন্দরগুলোতে ২ নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে ও নৌযানগুলোকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ঢাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়। শুক্রবার মাঝে মধ্যে কিছুটা বিরতি দিয়ে ঝরতে থাকে বৃষ্টি। শনিবার সকাল থেকে অবিরাম বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রাজধানীর অধিকাংশ পথ-ঘাট। রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকা হাঁটুপানিতে ডুবে গেছে।

অপর্যাপ্ত পানি নিস্কাশন ব্যবস্থার কারণে অনেক এলাকায় ঘরের ভেতরে পানি উঠে গেছে। সড়কে পানি জমে থমকে গেছে যান চলাচল। অনেক স্থানে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, পাইভেটকার অচল হয়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বেড়েছে যানজট। ডুবে গেছে ফুটপাতগুলোও। হেঁটে চলাচলের কোন ব্যবস্থা নেই বললে চলে। এ পরিস্থিতিতে রিক্সাচালকরাও বাড়িয়ে দিয়েছে ভাড়া। তারপরও জীবিকার তাগিদে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘর থেকে বাইরে পা বাড়িয়েছে মানুষ। তবে রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা।  

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত ঢাকায় ১৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত—এই ২৪ ঘণ্টায় কেবল বৃষ্টি হয়েছে ১৪৯ মিলিমিটার।

এদিকে রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, গ্রিনরোড, তেজকুনি পাড়া, তেজতুরী বাজার, খিলগাঁও, গোড়ান, বাসাবো, নয়াপল্টন, কাকরাইল, মৌচাক, মগবাজারের ভেতরের দিকে গলি, ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার এলাকার অধিকাংশ সড়ক, মিরপুরের ১১ নম্বর কালশী রোড, কাজীপাড়া, সেনপাড়া, ১৩ নম্বর সেকশনের বিভিন্ন সড়কে পানি জমে গেছে। মিরপুর ৬ নম্বরের একাংশ, ১০ নম্বর গোলচত্বরের সড়কের একাংশও পানিতে ডুবে গেছে। এসব এলাকার কোথাও হাঁটু পানি, আবার কোথাও কোমর পানি জমে আছে।  

শুধু রাজধানী নয়, দেশের বেশির ভাগ এলাকায় গতকাল কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে গোপালগঞ্জে—২৭১ মিলিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে খুলনায় ১৬৩, বরিশালে ১৮৬, রাজশাহীতে ৯২, ময়মনসিংহে ১০০, চট্টগ্রামে ১০, সিলেটে ৮ ও রংপুরে ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা গেছে, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, মংলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সর্বত্র টানা বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। চারিদিকে পানি থৈ থৈ করছে। অনেক এলাকায় পানিতে ভেসে গেছে ঘের ও পুকুরের মাছ। এ পরিস্থিতিতে অনেকেই বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে জানিয়েছেন তারা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্ভাবাসে বলেছে, আজও রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কিছু কিছু এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌরুটে বৈরি আবহাওয়া, পদ্মা তীব্র স্রোত এবং ঘূর্ণায়মান ঢেউয়ের কারণে শনিবার ভোর থেকে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। এর আগে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে এ নৌরুটে লঞ্চ ও স্পীড চলাচল বন্ধ থাকলেও যানবাহন পারাপারের জন্য ৭টি ফেরি চলাচল করছিল।

বিআইডব্লিউটিসি এর সহকারি ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন জানান, শুক্রবার সকাল থেকে বৈরি আবহাওয়ার কারণে ফেরি চলাচল ব্যহত হয় এবং শনিবার সকাল থেকে তা পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে।

গতকাল রো রো ফেরি ৪টি এবং ৩টি কে টাইপ ফেরি মোট ৭টি ফেরি সীমিত আকারে চললেও আজ তা বন্ধ রয়েছে। ঘাট এলাকায় পাচ শঁতাধিক যানবাহন পারের অপেক্ষায় রয়েছে ফলে যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে ঢাকায় ফিরে গেছেন।  

সম্পর্কিত খবর