‘প্লাস্টিকদূষণ প্রতিরোধে রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি’

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র ছায়া সংসদ

‘প্লাস্টিকদূষণ প্রতিরোধে রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি’

অনলাইন ডেস্ক

প্লাস্টিকের অতিমাত্রায় ব্যবহার পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব রাখছে। প্লাস্টিকের বোতলে রাখা পানিতেও প্লাস্টিকজনিত ক্ষতিকর উপাদান মিশে যাচ্ছে, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বড় হুমকি। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে পলিথিন উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ হলেও প্লাস্টিকজাত পণ্যের ব্যবহার হ্রাস করার ক্ষেত্রে কোনো আইনি কাঠামো নেই। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্লাস্টিক পণ্যের ওয়ান টাইম ব্যবহার নিষিদ্ধ করা জরুরি।

বিশেষত সরকারি অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটি নিষিদ্ধ করা হলে ক্রমান্বয়ে অন্য সেক্টরে নিষেধ করা সহজতর হবে। প্লাস্টিকদূষণ প্রতিরোধে সামাজিক ন্যায়বোধ, জীবন পদ্ধতি ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং শিক্ষা কারিকুলামে বিষয়টি অন্তর্ভুক্তকরণ জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে আগামী জাতীয় নির্বাচনের মেনিফেস্টোতে প্লাস্টিকদূষণ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। প্লাস্টিকদূষণ প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্ভব হবে।
বোতলজাত ও কোমল পানীয় উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশের অংশ বিশেষ জনস্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।

আজ শনিবার (২৯ জুলাই) ঢাকার এফডিসিতে প্লাস্টিকদূষণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে বিশিষ্ট পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. এ. আতিক রহমান এসব কথা বলেন।

ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, পৃথিবীর বৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার প্লাস্টিক বর্জ্যের হুমকিতে বিপর্যয়ের মুখে পতিত হতে যাচ্ছে। সমুদ্র সৈকত দেখতে এসে যদি আমরা সমুদ্রকে ডাস্টবিনে পরিণত করি তাহলে বৃহৎ এ সমুদ্র সৈকতটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠতে পারে। সারা দেশে প্রতিদিন ৩ হাজার টন প্লাস্টিক ব্যবহার হয়। বাংলাদেশের পরিবেশ আইনে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক এবং মাল্টিলেয়ার প্লাস্টিকের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও এর উৎপাদন, বিপণন নিষিদ্ধ করা হয়নি। অন্যদিকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক বিবেচনা করে ২০০২ সালে পলিথিনের ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং পরিবহন নিষিদ্ধ করা হলেও এর ব্যবহার বন্ধের অগ্রগতি খুবই কম। শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় আড়াই কোটি পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে। পলিথিনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি যেমন- চোখ জ্বালা করা, শ্বাসকষ্ট, লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস, মাথাব্যাথা এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে।

তিনি একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলেন, বাংলাদেশে ১৮ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৪৩ শতাংশ মাছের পেটে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। সাভার ও আশুলিয়ার দুটি স্থানের বাজার থেকে এই মাছ সংগ্রহ করে গবেষণা করা হয়। কালিবাউশ, ট্যাংরা, পাবদা, পুঁটি, শিং, টাটকিনি, বাইনসহ ৪৮টি মাছের পেটে এসব মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে। গবেষণার জন্য যেসব বাজার থেকে এসব মাছ কেনা হয়েছে সেগুলো সাধারণত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ কিংবা আশেপাশের খাল থেকে ধরা হয়। এসব মাছ মানব দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

প্লাস্টিকদূষণ প্রতিরোধের জন্য ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ নিম্নোক্ত ১০ দফা সুপারিশ করেন।

১) প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন, ব্যবহার হ্রাস ও প্লাস্টিক বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য প্লাস্টিকদূষণ প্রতিরোধ বিধিমালা প্রণয়ন করা।

২) পলিথিনের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত আইনী কাঠামো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা।

৩) প্লাস্টিকের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি ও প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্যের শুল্ক হ্রাস করা।

৪) দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিসে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।

৫) প্লাস্টিক বোতলে পানি বা কোমল পানি তৈরি প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্লাস্টিক বোতল স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর বিধায় সিএসআর এর আওতায় তাদের লভ্যাংশ থেকে একটা অংশ স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করা।

৬) প্লাস্টিকদূষণ প্রতিরোধে নাগরিক সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে সামাজিক জাগরণ তৈরি করা।

৭) দেশের পর্যটন স্পটগুলোতে প্লাস্টিকদূষণ প্রতিরোধে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নজরদারী জোরদার করা।

৮) নগর এলাকায় পলিথিনমুক্ত বাজারের মডেল তৈরি করা।

৯) গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্লাস্টিকদূষণ সম্পর্কে গণসচেতনতামূলক টিভিসি প্রচার ও সুপারশপসহ বড় বড় বাজারগুলোর সামনে বিল বোর্ড স্থাপন করে পলিথিন ও প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা।

১০) প্লাস্টিকের দ্রব্যকে বারবার ব্যবহার ও পুনঃচক্রায়নকে (রিসাইক্লিং) উৎসাহিত করতে হবে।

‘ব্যক্তি সচেতনতাই পারে প্লাস্টিকদূষণ রোধ করতে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে কুমিল্লা ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, আইনজীবী বিথিকা হাসান, সাংবাদিক হাবিবুর রহমান রাহী, সাংবাদিক আখলাকুস সাফা প্রমুখ। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

news24bd.tvতৌহিদ

সম্পর্কিত খবর