বিএনপির ব্যর্থতার ইতিহাস নেই: গয়েশ্বর  

সংগৃহীত ছবি

বিএনপির ব্যর্থতার ইতিহাস নেই: গয়েশ্বর  

অনলাইন ডেস্ক

বিএনপির ব্যর্থতার ইতিহাস নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির চলমান আন্দোলন যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে এই দেশের জনগণ ব্যর্থ হবে। তাদের আকাঙ্ক্ষার কবর হবে। ’ সোমবার (৩১ জুলাই) নয়াপল্টনে নিজ কার্যালয়ে একটি সংবাদ মাধ্যমকে তিনি এসব কথা বলেন।

 

জুবায়ের আহমেদ নামের ওই সাংবাদিককে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি জনগণের কথা বলে। জনগণ বিএনপির ডাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসে। এখানে মাপকাঠি নেই। রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতি সব কিছুর বিবেচনায় কখনো ছোট্ট একটি জনসভা বড় একটি বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।

আবার কখনও বিশাল জনসভা কিছুই করতে পারে না। সুতরাং, একটা জিনিস বলবো—যারা জনসভায় আসে তাদের দেখি, আর যারা আসে না তারা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ঘরে বসে ছটফট করে।

গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে পারেনি। এটাকে বিএনপি কীভাবে দেখছে- এমন প্রশ্নে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সেদিন আওয়ামী লীগ নানা জায়গায় মিছিল করেছে। লাঠি মিছিল করেছে। পরবর্তী পর্যায়ে আমাদের চ্যালেঞ্জটা ছিল কর্মসূচি সফল করা। শুধু অবস্থান নয়। ছোট করি বড় করি—যেখানে মিছিল করতে পেরেছি করেছি। টিয়ার শেল ও লাঠির সামনে দাঁড়িয়েছি। আমাদের শত শত নেতাকর্মী আহত হয়েছে। কিন্তু কেউ মাঠ থেকে বেরিয়ে যায়নি। আমি নিজে পুলিশের সামনে ছিলাম। পুলিশ আমার সঙ্গে কী আচরণ করেছে, সেটা দেখার পর বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে— এটা বলার সুযোগ নেই। বিএনপির ব্যর্থতার ইতিহাস নেই। চলমান ‘যুদ্ধের’ সমাপ্তি ঘটেনি। সুতরাং, কে ব্যর্থ আর কে সফল, চূড়ান্ত পর্যায়ে তার ফল জনগণ নির্ধারণ করবে। কারণ, কোনো কোনো যুদ্ধ বছরের পর বছর চলে। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ ৯ মাস চলেছে। এরশাদ সরকারের আমলে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ৯ বছর ধরে চলেছে। এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ১৫ বছর লড়ছি। আর কত সময় লাগবে, আমি জানি না। হয়তো সময়ের ব্যবধান কমে আসছে ক্রমান্বয়ে। তারপর ইতিহাস লেখা হবে, বিএনপি ব্যর্থ নাকি সফল।

তিনি বলেন, বিএনপি কিছু পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে না। বিএনপি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনে নেমেছে। বিএনপি বলেনি যে, ক্ষমতায় যেতে হবে। বিএনপি বলছে, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দাও। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে—কাকে তারা নির্বাচিত করবে। সুতরাং, জনগণ কী পেলো, সেটা জনগণের মনোভাব দেখে বোঝার চেষ্টা করুন। যেদিন বিজয় হবে জনগণের বিজয় হবে। সেই বিজয়ের পর জনগণের যদি মনে হয় বিএনপিকে পুরস্কৃত করবে, তাহলে যেদিন তারা সুযোগ পাবে, সেদিন করবে। হয় তিরস্কার অথবা পুরস্কৃত করবে। সুতরাং, বিএনপি কী পেলো না পেলো, চূড়ান্ত আন্দোলনের ফল কী দাঁড়ায়, তখন বোঝা যাবে। আজকে যদি এই আন্দোলনে বিএনপি ব্যর্থ হয়, তাহলে এই দেশের জনগণ ব্যর্থ হবে। তাদের আকাঙ্ক্ষার কবর হবে। আমাদের দেশ নিয়ে কত দেশ কত কথা বলে। কোনো স্বাধীন দেশ নিয়ে তো এত কথা হবার কথা না। তাহলে এত কথা হয় কেন, নিশ্চয়ই আমাদের স্বাধীনতার মধ্যে কোনও ত্রুটি আছে। নিশ্চয় আমরা স্বাধীন না। তাই কেউ বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলে ফ্যাসিবাদ-লুটেরাদের কাছ থেকে স্বার্থ নেওয়ার জন্য। এ দেশকে শোষণ করার জন্য।

২৯ জুলাইয়ের ঘটনার পর ‘সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি’র কোনো ব্যাঘাত ঘটছে কি না জানতে চাইলে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ব্যাঘাত ঘটার কোনো প্রশ্নই আসে না। কর্মীরা তো পালিয়ে যায়নি। রাজনীতির কৌশল আছে। যুদ্ধের ময়দানে সামনে এগোনোর বীরত্বের কাহিনি যেমন আছে, সেই বীরত্ব অর্জন করার জন্য যুদ্ধকালীন সময়ে পিছু হটারও নিয়ম আছে। পিছু হটা মানে আত্মসমর্পণ না। পিছু হটার মানে হলো— আবারও শক্তি সঞ্চয় করে সামনে এগিয়ে শত্রুকে আঘাত করা। আর বিএনপি তো একটা রাজনৈতিক দল। এটা তো কোনো ট্রেডিং কোম্পানি না। এরা কেউ বেতনভুক্ত কর্মচারী না। প্রতিদিন প্রতিটি কর্মী আসছে। তাদেরও জীবন আছে। তাদের সংসার আছে। তাদের ওপর পারিবারিক দায়িত্ব আছে। তাদের রোজগার করতে হয়। উকিল-মোক্তারের টাকাও জোগাড় করতে হয়। জেলখানায় গেলে জেলের খরচ মেটাতে হয়। আবার মিছিলে আসতে হলে সেখানেও তাদের পয়সা লাগে। তাই বিএনপির মিটিংয়ে ভাড়া করা লোক আসে না। এখন সরকার যেটা করে, তারা ভাড়া করে আনার মতো লোক পায় না। বড় বড় প্যান্ডেল করে অনেক চেয়ার আনে। চেয়ার দেখা যায়, মানুষ দেখা যায় না। এই সরকার ভোট করে, কিন্তু ভোটকেন্দ্রে মানুষ পাওয়া যায় না। সেই সরকারকে নিয়ে আমার সমালোচনা করতেও ঘৃণা লাগে।

বারবার বিএনপির কর্মসূচি পেছানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সরকারের চাকরি করি না যে, প্রতিদিন কর্মসূচি দেবো। একটা রাজনৈতিক দলের বুদ্ধি-বিবেচনা আছে। জনগণের বিষয় ভাবার আছে। সব কিছু ভেবেই আমাদের কর্মসূচি দিতে হয়। আমরা গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) জনসভা ডাকলাম, পরে জনগণের দুর্ভোগের কথা ভেবে কর্মসূচি শুক্রবারে নিলাম। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে প্রতিদিন যে ভোগান্তি হয়, দুই-চার দিন হরতাল আর রাস্তায় মিটিং হলে সেই ভোগান্তি হয় না।

news24bd.tv/আইএএম