তারেক রহমানের সম্পদের বিবরণ দিলেন মির্জা ফখরুল

সংগৃহীত ছবি

তারেক রহমানের সম্পদের বিবরণ দিলেন মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুদকের করা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৯ বছর ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। এদিন বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আনা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ মিথ্যে দাবি করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তারেক রহমানের সম্পদের বিবরণী দিয়ে মির্জা ফখরুল জানান, দুর্নীতি দমন কমিশনার মামলায় অভিযোগ করেছেন যে, জনাব তারেক রহমান সম্পদ বিবরণীতে প্রদর্শিত, কিন্তু জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সর্বমোট ৪,৮১,৫৩,৫৬১.৩৭ (চার কোটি একাশি লক্ষ তিপ্পান্ন হাজার পাঁচশত একষট্টি টাকা সাইত্রিশ পয়সা) টাকা সম্পদ অর্জন করেছেন।

যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক, সাজানো ও ভিত্তিহীন।

ফখরুল জানান, তারেক রহমান এর সম্পদের যথাযথ বিবরণসহ ব্যাখ্যা প্রদান করা হলো। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১। বাড়ি নং- ৩/বি, ব্লক-এন ই (ডি), গুলশান, ঢাকায় ১ বিঘা ১০ কাঠা ১১ ছটাক জমিসহ বাড়ি ১/৩ অংশ, মূল্য ৩৩/- (তেত্রিশ) টাকা রয়েছে।

যা রাষ্ট্র প্রদত্ত জ্ঞাত ও প্রদর্শিত।

দুই মামলায় তারেকের ৯, জোবাইদার ৩ বছর কারাদণ্ড

২। ৩৮ নং খতিয়ান সাইলাকান্দি, বগুড়ায় ২.০১ একর জমি, মূল্য ৩,৪৫,০০০/- (তিন লক্ষ পঁয়তাল্লিশ হাজার) টাকায় ক্রয়কৃত। ৩। টি এম এন্টারপ্রাইজ ব্যবসায়ীক মূলধন ২,৭০,৮০১/- (দুই লক্ষ সত্তর হাজার আটশত এক) টাকা (বর্তমানে ব্যবসাটি বিলুপ্ত এবং মূলধন অবসায়ীত) ৪। ড্যান্ডি ডায়িং লি. ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকার শেয়ার (বর্তমানে ব্যবসা বিলুপ্ত)। ৫। রহমান গ্রুপ এর ১৮,৫০,০০০/- (আঠার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকার শেয়ার (রহমান নেভিগেশন ও রহমান শিপার্স লি.) বর্তমানে ব্যবসা বিলুপ্ত।

আরও রয়েছে- ৬। রহমান শিপার্স বিডি লি. এর ১০০টি শেয়ার রহমান গ্রুপ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত, তাই অভিযোগটি মিথ্যা ও বাতিলযোগ্য। উল্লেখ্য যে, রহমান শিপার্স বিডি লি. এর নামে লঞ্চগুলো ঋণ করে করা হয়েছিল। যা সময় সীমার মধ্যে পরিশোধিত। তাই এখানে আইনের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। ৭। ইউনিটেক্স এ্যাপারেল লি. এর ১৫০টি শেয়ার রহমান গ্রুপ এর অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখ্য, সকল কোম্পানির সংক্ষিপ্ত নামকরণ রহমান গ্রুপ। ৮। সঞ্চয়পত্র মূল্য ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা। ৯। এফ.ডি.আর রূপালী ব্যাংক লি. মূল্য ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা। ১০। ঢাকা ব্যাংক লি. বনানী শাখায় স্থিতি ২৮,১৬২/- (আটাশ হাজার একশত বাষট্টি) টাকা। ১১। এবি ব্যাংক লি. স্থিতি ৬,২৯০/- (ছয় হাজার দুইশত নব্বই) টাকা। ১২। এবি ব্যাংক কাওরান বাজার শাখায় ৪৭,২৩৭/- (সাতচল্লিশ হাজার দুই শত সাইত্রিশ) টাকা, সাউথইস্ট ব্যাংক প্রিন্সিপাল শাখায় ৪,২১০/- (চার হাজার দুইশত দশ) টাকা এবং এবি ব্যাংক নবাবপুর শাখায় ২,৫৪৯/- (দুই হাজার পাঁচশত ঊনপঞ্চাশ) টাকা এবং হিসাবগুলো তারেক রহমানের ১/৩ অংশ।

তারেক-জোবাইদার মামলার রায় প্রত্যাখ্যান বিএনপির

ফখরুল বলেন, সম্পদ বিবরণীতে এই টাকা প্রদর্শিত আছে যা জ্ঞাত এবং প্রদর্শিত। ১৩। হাতে নগদ ৪০,১০৭/- (চল্লিশ হাজার একশত সাত) টাকা জ্ঞাত ও প্রদর্শিত। ১৪। স্বর্ণ ৫ তোলা মূল্য ২,৯৫০/- (দুই হাজার নয়শত পঞ্চাশ) টাকা। ১৫। আসবাবপত্র মূল্য ১,৭৯,৫০০/- (এক লক্ষ ঊনআশি হাজার পাঁচশত) টাকা জ্ঞাত ও প্রদর্শিত।

এসময় মির্জা ফখরুল দৈনিক দিনকাল পত্রিকা তারেক রহমানের নয় বলে উল্লেখ করেন। বলেন, দৈনিক দিনকাল পত্রিকা অধ্যাপক মাজিদুল ইসলাম এর নিকট থেকে চুক্তির মাধ্যমে তারেক রহমান এর নামে হস্তান্তরিত হয়। হস্তান্তরিত মূল্য ৪, ১৫, ২৪, ৫৬৪. ১১ (চার কোটি পনের লক্ষ চব্বিশ হাজার পাঁচশত চৌষট্টি টাকা এগার পয়সা) টাকা। উল্লেখ্য, দৈনিক দিনকাল তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। ওই পত্রিকা এবং সম্পদ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বি এন পি'র। এখানে তারেক রহমানের নিকট চুক্তির মাধ্যমে দায়িত্ব হস্তান্তরিত হয়েছে তিনি শুধুমাত্র প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাছাড়া তারেক রহমান কখনও এর মালিকানা দাবি করেননি এবং তার ব্যক্তিগত আয়কর নাথিতে প্রদর্শন করেননি। দিনকাল পত্রিকা স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসাবে আয়কর নথিভুক্ত এবং আলাদা টি.আই.এন ভুক্ত যার নিয়মিত আয়কর বিভাগে রিটার্ন প্রদান করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, এছাড়া তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় সম্পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো তার সম্পদ নয়। বিভিন্ন স্থানে জমির মালিকানার কথা বলা হলেও যেগুলো তারেক রহমানের ক্রয়কৃত নয়, কোনো টাকা পরিশোধ করা হয়নি এবং কোনো প্রকার দলিলে স্বাক্ষর নাই।

উল্লেখ্য, সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৯ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। তারেককে সহযোগিতা করার দায়ে তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বুধবার বিকেল ৪টা ২ মিনিটে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আসাদুজ্জামানের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল বিষয়টি জানিয়েছেন। এর আগে চার মামলায় তারেক রহমানের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা চলমান। তবে, জোবাইদার এটি প্রথম ও একমাত্র মামলার রায় বলে জানিয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

news24bd.tv/FA