‘অন্যায়ভাবে সাংবাদিক বহিষ্কারের মাধ্যমে উপাচার্য তার পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন’

সংগৃহীত ছবি

মানববন্ধনে সাংবাদিকরা

‘অন্যায়ভাবে সাংবাদিক বহিষ্কারের মাধ্যমে উপাচার্য তার পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন’

নিজস্ব প্রতিবেদক

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাংবাদিক ইকবালকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে উপাচার্য তাঁর পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ইকবাল মনোয়ারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। এসময় ইকবাল মনোয়ারের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নিশ্চিতকরণ ও দূর্নীতির পক্ষে সাফাই গাওয়ায় উপাচার্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।

 

এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব)-এর সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি মীর মোহাম্মদ জসিম বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইকবালকে বহিষ্কার করে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে উপাচার্য তাঁর পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।  

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (কুবিসাস) সাবেক সভাপতি জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও ডেইলি স্টারের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা আজকে এখানে দাঁড়িয়েছি, যে সময়টাতে দেশের সাংবাদিকরা দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করে, সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি দুর্নীতির পক্ষে সাফাই গায়।

আমি অর্থনীতির শিক্ষার্থী হিসেবে বলতে চাই, উপাচার্যের অর্থনীতির সংজ্ঞা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।  

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ বলেন, ইকবালকে বহিষ্কার করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন অপরাধ করেছে। একদিকে তারা দুর্নীতির পক্ষে কথা বলেছে, দ্বিতীয়ত সাংবাদিকের সংবাদ প্রচারে বাধা দিয়েছে। সংবাদিকতার জন্য একাডেমিক বহিষ্কার অইনত নয়। শিক্ষার্থী বহিষ্কারের ক্ষেত্রেও আইন মানা হয়নি।  

ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি ও বাংলাভিশন টেলিভিশনের রিপোর্টার কেফায়েত শাকিল বলেন, আজকের এই কর্মসূচি থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যিনি অন্যায়ভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে তার ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করেছেন, ব্যক্তিগত চরিতার্থ করছেন, দুর্নীতির প্রচার এবং প্রসারের দায়িত্ব নিয়েছেন। আজকে সারাদেশের সাংবাদিকরা দাঁড়িয়েছে আপনাকে আপনার এই পদ ছাড়তে হবে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম আবির বলেন, আমরা বলতে চাই শুধু মাত্র ক্ষমা প্রার্থনা করে এ ন্যাক্কারজনক অপরাধ থেকে দায়মুক্তি পাওয়া যাবে না। আমরা চাই এই ভিসিকে বহিষ্কার করার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা করার যে পরিবেশ সেটি পুনরুদ্ধার করতে হবে।  

ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, কুবি উপাচার্য ইকবালকে বহিষ্কার করে শুধু আইনের লঙ্ঘনই করেননি, একইসাথে তাঁর মানবাধিকারও ক্ষুন্ন করেছেন। অবিলম্বে ইকবালের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিয়ে নিজেদের প্রায়শ্চিত্য করুন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মামুন তুষার বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি দুর্নীতির পক্ষে বক্তব্য দেওয়া মানে তিনি দুর্নীতি করাকে উৎসাহিত করেছেন। যেটি দেশের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। সেই বক্তব্যের জন্য তার জাতির সামনে ক্ষমা চাওয়া উচিত।  

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সভাপতি হাসান ওয়ালী বলেন, রাষ্ট্রের সকল স্তরে সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করার যে প্রবণতা, সেটিই আমরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ইকবালকে বহিষ্কার করে সেরকমই আরেকটি ঘটনা ঘটিয়েছেন। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয় যে, বর্তমানে শিক্ষকরা নৈতিক মূল্যবোধ হারিয়ে শুধুমাত্র নিজেদের পদ রক্ষায় কাজ করছেন।  

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি রবিউল আলম বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকেই ক্ষুন্ন করেননি এই উপাচার্য, তিনি ক্যাম্পাস সাংবাদিককের বিরুদ্ধেও দাঁড়িয়েছেন।  

এছাড়া মানববন্ধনে ইকবাল মনোয়ারের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও দূর্নীতির পক্ষে সাফাই গাওয়ায় উপাচার্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) স্মারকলিপি প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়।  

এসময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীন শিশির, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি আলী ইউনুস হৃদয়, ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি নাজমুস সাকিব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইলি স্টারের সাবেক প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আব্বাস, কুবিসাসের সাবেক সভাপতি শাহাদাত বিপ্লব ও সাবেক সহ সভাপতি আবু বকর রায়হান, বশেমুরবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সভাপতি আকরাম হোসেন, বুটেক্স সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মেহেদী হাসান, সিলেট এমসি কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি সোহেল আহমদ এবং তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি আহমেদ ফেরদাউস খানসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান ক্যম্পাস সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

News24bd.tv/AA