বরগুনার সদর উপজেলার ফুলঝুড়ি ইউনিয়নে গত বৃহস্পতিবার রাতে দুই শিশুকে হত্যা করা হয়। ওই হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে। শ্যালিকাকে ধর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়ে দুই শিশুকে হত্যা করা হয় বলে শনিবার (৫ আগস্ট) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার একমাত্র আসামি।
জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হেলাল উদ্দিন।
এসআই হেলাল জানান, আজ সকালে ইলিয়াসকে বরগুনার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইলিয়াস পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেন এবং স্বেচ্ছায় আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন বলে জানান বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম। তিনি আরও জানান, ইলিয়াসের শ্যালিকা বাবার বাড়িতে বসবাস করেন। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে তিনি শ্যালিকার ঘরে প্রবেশ করে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। আত্মরক্ষার জন্য তাঁর শ্যালিকার পাশে থাকা দা দিয়ে আঘাত করতে গেলে তা কেড়ে নিয়ে শ্যালিকাকে জখম করেন ইলিয়াস। এ সময় ঘরে ঘুমিয়ে থাকা এক প্রতিবেশীর ছেলে ও শ্যালিকার মেয়ে জেগে ওঠে। ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ইলিয়াস ওই দুই শিশুকে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে আসেন।
জখমের সময় ঘটনাস্থলেই প্রতিবেশীর ছেলে মারা যায়। ঘটনার পরে স্থানীয় দোকানে চা পানের পর সদর উপজেলার একটি আশ্রায়নে বসবাসরত শাশুড়ির বাড়িতে গিয়ে রাতে থাকেন ইলিয়াস। পরদিন সকালে অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে ঘটনাটি শুনে কান্নাকাটি শুরু করলে শাশুড়িকে নিয়ে শ্যালিকার বাড়িতে যান ইলিয়াস। সেখানে পুলিশ তাঁকে অসংলগ্ন আচরণের জন্য সন্দেহ করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল হালিম। তিনি বলেন, ‘ইলিয়াসের স্বীকারোক্তি মতে ওই বাড়ির একটি পুকুর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত দা জব্দ করা হয়েছে। ’
ইলিয়াসের শাশুড়ি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে জামাতা ইলিয়াস আমার আশ্রয়ণের বাসায় আসে এবং রাতে সেখানে ছিল। সকালে ঘটনার খবর পেয়ে আমি কান্নাকাটি করলে ইলিয়াসই আমাকে আমাদের গ্রামের ভিটেবাড়িতে নিয়ে যায়। আমার নাতনিকে খুন করে মেয়েকে কুপিয়ে আবার সে আমার বাড়িতেই রাতে থেকেছে। আমি ইতিহাসের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। ’
বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পরপরই ঘটনাস্থল থেকে ইলিয়াসকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। এটা আমাদের অনেক বড় সফলতা। এই মামলার বিচারক কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য আমরা শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করব। ’
গত বৃহস্পতিবার রাতে বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঝুড়ি ইউনিয়নে নিজের বাবার বাড়িতে বসবাসরত এক নারী নিজের শিশুমেয়ে ও প্রতিবেশীর এক ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন। ওই নারীর বড় বোনের স্বামী ইলিয়াস ঘরে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ধস্তাধস্তিতে দুই শিশুর ঘুম ভেঙে গেলে গেলে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে শ্যালিকাসহ দুই শিশুকে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যান ইলিয়াস।
ওই ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় প্রতিবেশীর শিশু ছেলে। বরগুনা সদর হাসপাতাল থেকে বরিশাল নেওয়ার পথে মারা যায় শ্যালিকার মেয়ে। জখম নারী বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
news24bd.tv/আইএএম