ফল চাষে দিনবদলের গল্প

পাহাড়ি কাটাবিহীন বৈঁচি

ফল চাষে দিনবদলের গল্প

মশিউর রহমান

প্রাকৃতিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকাগুলো উর্বর ও অনেক প্রকার ফসল উৎপাদনের উপযোগী। একটা সময় ছিল পাহাড়ে জুম চাষ ছাড়া অন্য কোন আবাদ হতো না। তবে জুম চাষ সম্পূর্ণ প্রকৃতিনির্ভর হওয়ায় অধিক খরা বা বৃষ্টিতে উৎপাদন ব্যাহত হতো। এতে খাদ্যাভাবও দেখা দিত।

এখন বিকল্প ফলন হিসাবে ফলের চাষ পাল্টে দিয়েছে পাহাড়ের অর্থনীতির চিত্র।  

দুই দশক আগেও পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে ফল চাষ হতো না। ২০০৪ সাল থেকে মূলত বাণিজ্যিকভাবে ফলের বাগান করা শুরু হয়। বিশেষত যেসব পাহাড় বছরের পর বছর অনাবাদি থাকতো;  তা এখন আবাদের আওতায় আসছে।

বর্তমানে সিতাকুণ্ড উপজেলার পাহাড়ের ছোট-বড় ‍টিলায় সব মিলিয়ে প্রায় ১৫০০ বাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রায় ৩ হাজার লোক কর্মরত আছে। বাগানে বৈঁচি, লুকলুকি, গাব, লেবু, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, শুপারি, আমসহ বিভিন্ন ধরনের ফল একসঙ্গে আবাদ করে প্রতি বছর প্রায় কোটি কোটি টাকার ফল বিক্রি হয়ে আসছে।  বর্তমানে পাহাড়ে সবচেয়ে লাভ জনক ব্যবসা বিভিন্ন ফলের বাগান।

মোহাম্মদ ইউসুফ আলী শাহ

সিতাকুণ্ড উপজলোর মধ্যম মহাদেবপুর গ্রামের মোহাম্মদ ইউসুফ আলী শাহ সিতাকুণ্ড পাহাড়ের ৪ একর জায়গায় গড়ে  তুলেছেন মিশ্র ফলের বিশাল বাগান। বৈঁচি, লুকলুকি, গাব, লেবু, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, শুপারি, আমসহ অনেক ফলের আবাদ করে দারুণ সফলতা পেয়েছেন তিনি। বর্তমান সময়ে ফলের মৌসুমে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। ভালো ফলন এবং লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই তার সফলতা দেখে উৎসাহিত হচ্ছে অনেকে। এলাকায় বাড়ছে পাহাড়ি জমিতে মিশ্র ফল বাগানের সংখ্যাও। তা ছাড়া বসতঘরের আশপাশেও অনেকে বিশেষ করে আম, গাব ও কলাগাছ লাগাচ্ছেন। বাগান করে অনেক কৃষক অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছেন।

ফল চাষিরা বলেন, বিষমুক্ত ফল মানুষকে খাওয়ানোর পরিকল্পনা থেকে এটা শুরু করেছেন। ফল চাষের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। এতে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর মধ্যে নব উদ্দীপনা তৈরি হচ্ছে, ফলনে উৎসাহ যোগাচ্ছে। তাদের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পথ দেখাচ্ছে। তবে সমস্যা হচ্ছে, সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদকরা। স্থানীয়ভাবে বাজার ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় বাগান থেকেই ফল কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী জানান, এখানের ফল চট্টগ্রাম, ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনীসহ বিভিন্ন জায়গা বিক্রি করেন তারা। পাহাড়ি টিলা ও জমির বাগান থেকে বছরে প্রায় কোটি টাকার ফল বেচাকেনা হয়। বলা চলে পাহাড়ে মিশ্র ফলের এই চাষ কৃষি সেক্টরে বিপ্লব এনেছে।  

সম্প্রতি প্রকাশিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এসব চাষাবাদের বাইরেও এখনও পাহাড়ে ৫ লাখ হেক্টর জমি অনাবাদি পড়ে আছে, যেখান থেকে নির্দিষ্ট ফসল চাষ করে বছরে ১৭ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।

News24bd.tv/AA

এই রকম আরও টপিক